বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু পরিবেশেই নয়, মানুষের স্বাস্থ্যেও গভীরভাবে পড়ছে। এর ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও পানিবাহিত রোগসহ নানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ ছাড়া নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক চাপ ও পুষ্টিহীনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব সমস্যার সমাধান কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়—প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও বহুমাত্রিক পদক্ষেপ।
সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্র্যাক এবং জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি (এনএমইপি) যৌথভাবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য প্রকল্প’-এর অধীনে সারাদেশে ৬০২টি ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ বছরে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
বৃহস্পতিবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক আলাপনা সভায়’ বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন। সভার আয়োজন করে এনএমইপি ও ব্র্যাক স্বাস্থ্য কমিটি।

- • ড. সেলিনা বাজেুর রিমা (চেয়ারপারসন, ব্র্যাক) বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সমস্যার কার্যকর সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই।
- • ড. এম. এ. আকরামুল ইসলাম (পরিচালক, ব্র্যাক) জানান, শুধু ডেঙ্গুই নয়, নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক চাপ ও অন্যান্য রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
- • ড. এস. কে. এম. সাইফেদ্দিন (পরিচালক, ব্র্যাক) মনে করেন, সময়োপযোগী উদ্যোগ ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।
- • সাব্বির লুৎফে (প্রোগ্রাম অফিসার, সেলভেশন এশিয়া) বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। উন্নত ব্যবস্থাপনা ও সময়মতো পদক্ষেপ ছাড়া কার্যকর সমাধান আনা যাবে না।
- • মো. শামসুন ইসলাম (পরিচালক, আবহাওয়া অধিদফতর) জানান, দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা কার্যকর হতে পারে, তবে সেটি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।
এ আলোচনায় স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার ও পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতি ও কৌশলে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
ব্র্যাকের দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ
ব্র্যাক ২০০৪ সাল থেকে যক্ষ্মা এবং ২০০৭ সাল থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে এনএমইপি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের তত্ত্বাবধানে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি ২৮টি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ও ৬টি শহুরে এলাকায় চালু করা হয়েছে। এর আওতায় ৬০২টি ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ২,২৮৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যসেবা জোরদার হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটি বহুমাত্রিক সংকট। এটি শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়োপযোগী উদ্যোগ, সমন্বিত নীতি ও স্থানীয় পর্যায়ের অংশগ্রহণ ছাড়া এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















