ইউরোপে বিমানবন্দরে হামলার নতুন ধরণ
ইউরোপের বড় কয়েকটি বিমানবন্দরে সম্প্রতি সাইবার হামলার পর কোপেনহেগেন ও অসলোতে ড্রোন অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এসব ঘটনা অঞ্চলের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করছে এবং সমন্বিত আক্রমণের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
ডেনমার্ক ও নরওয়েতে ড্রোন ঘটনার প্রভাব
গত সোমবার ডেনমার্কের প্রধান বিমানবন্দর কোপেনহেগেনে ড্রোনের কারণে কয়েক ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ থাকে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এ ঘটনাকে ইউরোপজুড়ে রুশ ড্রোন অনুপ্রবেশ ও অন্যান্য অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। একই সময়ে নরওয়ের রাজধানী অসলোতেও ড্রোন দেখা গেছে।
এর আগে হিথ্রো, বার্লিন ও ব্রাসেলসসহ বড় বিমানবন্দরের চেক-ইন সিস্টেমে র্যানসমওয়্যার হামলা হয়েছিল।
তদন্ত ও সন্দেহভাজনদের প্রসঙ্গ
কে এসব হামলার পেছনে আছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো “হাইব্রিড হুমকি” বা সমন্বিত আক্রমণের অংশ, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পরীক্ষা করে।
ইউরোপীয় হাইব্রিড থ্রেটস সেন্টারের পরিচালক জুক্কা সাভোলাইনেন বলেন, প্রথমে এই পদ্ধতি কাজ করে কিনা তা দেখা হয়। এরপর দেখা হয়, আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি।
ডেনমার্কে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির বারবিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসবের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে স্বাধীনভাবে এ দাবি যাচাই করা যায়নি।
বিমান খাতের ভঙ্গুরতা প্রকাশ
ঘটনাগুলো দেখিয়েছে, বেসামরিক বিমান খাত কতটা দুর্বল। সরবরাহ শৃঙ্খলে এক জায়গায় বিপর্যয় ঘটলে পুরো এয়ারপোর্ট ও এয়ারলাইনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর ফলে শত শত ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল হয়।
সাইবার হামলা, জিপিএস হস্তক্ষেপ ও ড্রোন হুমকি বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়ন্ত্রকদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নিরাপত্তা, সাইবার প্রতিরক্ষা ও ন্যাভিগেশন সিস্টেমে বিনিয়োগ ছাড়া বিকল্প নেই।
মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এফ-৫-এর বার্ট সালায়েটস বলেন, এই আক্রমণ দেখিয়েছে যে, উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর খাত যেমন বিমান পরিবহন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এরিক শাউটেনের মতে, ড্রোন কার্যক্রম ক্রমেই বাড়ছে এবং থামার সম্ভাবনা নেই। বিমান সংস্থা ও এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ এখন সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিয়ন্ত্রকদের করণীয়
ইউরোপীয় আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোকন্ট্রোল জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তারা এসব পরিস্থিতি সামলাতে সহায়তা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি এয়ারলাইন ও এয়ারপোর্টের ঝুঁকি মূল্যায়ন, বিকল্প ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা থাকা উচিত।
তবে বড় বাধা হলো খরচ। ড্রোন ও সাইবার হুমকি ঠেকাতে জ্যামার, লেজার বা ট্র্যাকার বসানো ব্যয়বহুল ও ধীরগতি প্রক্রিয়া। সব বিমানবন্দর তাৎক্ষণিকভাবে এসব বিনিয়োগ করতে রাজি নয়।
আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) বলছে, ড্রোন বিরোধী প্রযুক্তি এখনও উন্নয়নধীন এবং অনেক বিমানবন্দরের পক্ষে ব্যয় বহন করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) প্রতি মাসে শতাধিক ড্রোন দেখার রিপোর্ট পায়।
ডিজিটাল যুগে ভঙ্গুর সরবরাহ শৃঙ্খল
স্লোভাক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ইসেট-এর উপদেষ্টা জেক মুর বলেন, যখন বিমান খাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে হামলা হয়, তখন এর প্রভাব বৈশ্বিক হয়।
তার মতে, গুরুত্বপূর্ণ এভিয়েশন সফটওয়্যার সরবরাহকারীদের ওপর আরও কড়াকড়ি মানদণ্ড আরোপ করতে হবে। এটি ইচ্ছাকৃত হামলা হোক, অর্থ আদায়ের প্রচেষ্টা হোক বা প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা—সব ক্ষেত্রেই বোঝা যায়, এই ডিজিটাল নির্ভর যুগে সিস্টেম কতটা ভঙ্গুর।