০৪:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১ জয়পুরহাটে বাড়িতে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ভাতিজি ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে ট্রাক–পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২ ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস–ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩ গাজীপুরের শ্রীপুরে অটোরিকশা গ্যারেজে আগুন, পুড়েছে ১৫ যানবাহন “‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ ‘টাইটানিক’–ধরনের হৃদয়ভাঙা, বলছেন সমালোচকেরা” “আরও গভীর পরিসংখ্যান নিয়ে ফিরলো অ্যাপল মিউজিক ‘রিপ্লে ২০২৫’” “মিইয়ে যাওয়া জিডিপি সংখ্যার আড়ালে অস্ট্রেলিয়ার চাহিদা এখনো ‘গরম’” “নতুন নোভা এআই মডেল উন্মোচনে করপোরেট গ্রাহকদের মন জয়ে ঝুঁকল এডব্লিউএস” “মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের আঘাতে বিধ্বস্ত হংকং, তবু সামনে ‘দেশপ্রেমিকদের’ নির্বাচন”

ভারত চায় না চীনের ওপর নির্ভর করতে: কিন্তু মার্কিন নীতিই নয়াদিল্লিকে প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ঠেলে দিচ্ছে

আগস্টেচীন ও ভারতের সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পাঁচ বছর পরভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে তিয়ানচিনে গিয়ে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০২০ সালে এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর এটিই ছিল মোদীর প্রথম চীন সফর। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা শি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মোদীর হাত ধরাধরি করে হাসিমুখে থাকা ছবি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কয়েকজন পর্যবেক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করেনযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার ধমকধামকি ও শুল্কতিনি গত গ্রীষ্মে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেননয়াদিল্লিকে বেইজিংয়ের কোলে ঠেলে দিয়েছে।

এই ব্যাখ্যায় কারণ ও পরিণতি দুটোই ভুল ধরা হয়েছে। ট্রাম্পের বুলি’ করার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মোদী-শি বৈঠক হয়নিএটি ভারত-চীন সম্পর্কের কোনো তড়িঘড়ি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাও ছিল না। আর নয়াদিল্লি বেইজিংয়ের কোলেও যায়নিবেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোনো নতুন অ্যান্টি-ওয়েস্টার্ন’ ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টাও করছে না। সত্যি বলতেগত প্রায় এক বছর ধরে ভারত ও চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো না কোনো মাত্রার স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবু এই প্রচেষ্টা এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে অব্যাহত আছেসে সত্যকে ঢেকে রাখে না।

তবে ট্রাম্পের ভারতের ওপর চাপ ও চীনের সঙ্গে কোনো গ্র্যান্ড বার্গেন’ করার তাঁর আগ্রহ ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের হিসাবনিকাশে প্রভাব ফেলবেই। তারা উদ্বেগ নিয়ে দেখবেনয়াদিল্লির প্রতি ওয়াশিংটনের জবরদস্তিমূলক ভঙ্গি এবং চীনের প্রতি তুলনামূলক নমনীয়তাযা সাম্প্রতিক মার্কিন নীতির থেকে বিচ্যুতিযে নীতি চীনকে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাকে জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে কাছাকাছি এনেছিল। ভারতীয় কর্মকর্তারা এমন অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাইবে নাসেই দুশ্চিন্তা ভারতের চীনের সঙ্গে পুনঃসম্পৃক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলতঃ এর আঞ্চলিক মার্কিন স্বার্থে প্রভাব পড়বে। ট্রাম্প যদি ভারতকে টার্গেট করা চালিয়ে যানতাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম সহযোগিতা করবেকম ক্রয় করবে এবং হয়তো চীন ও অন্যদের সঙ্গে বেশি করবেযা নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত লক্ষ্যটির পুরো উল্টো।

তবে কি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-চীন?

আদরের প্রতিদ্বন্দ্বীকে কাছে টানা
চীন-ভারত সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে ২০২৪ সালের অক্টোবরেব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেযেখানে মোদী ও শি ২০১৯ সালের পর প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। দুই পক্ষই সীমান্তে সেনা বিচ্ছেদের কাজ শেষ হওয়ার কথা ঘোষণা করেযা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বেইজিং ও নয়াদিল্লিদুপক্ষইতাপমাত্রা বদলাতে প্রস্তুত ছিল। চীন তখন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বাধার মুখেমন্থর প্রবৃদ্ধিযুক্তরাষ্ট্রের চাপরাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার কারণে ইউরোপের উদ্বেগ। ভারতের ক্ষেত্রেসীমান্তে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কায় অস্থির থেকে না থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং চীনের সঙ্গে বড় প্রতিযোগিতার জন্য নিজস্ব সক্ষমতা জোরদারে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিল। তখনও কোনো পক্ষ জানত নাহোয়াইট হাউসে পরবর্তী সময়ে কে আসবেনআর তাঁর চীন-নীতি কেমন হবে।

তারপর থেকে চীন-ভারতের বরফ আরও গলেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশ বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে সীমান্ত সংলাপ পুনরুজ্জীবিত করেএ বছরের আগস্টে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দিল্লি সফর করেন। বহুপাক্ষিক পরিসরেও২০২৩ সালে দিল্লির জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে শি অনুপস্থিত থাকলেওএই বছর সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে থাকা চীনের বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিতে ভারত প্রতিরক্ষামন্ত্রীপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বেইজিং সফর করেন।

এই আলোচনা আরও কিছু সৌহার্দ্যপূর্ণ পদক্ষেপের দ্বার খুলে দিয়েছেসিভিল সোসাইটির বিনিময় পুনরায় চালু করাদুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর চুক্তিচীনা পর্যটকদের জন্য ভারতীয় ভিসা পুনঃপ্রদানএবং চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন তিব্বতে অবস্থিত হিন্দুদের পবিত্র স্থান কৈলাশ-মানস সরোবরে ভারতীয়দের তীর্থযাত্রা পুনরায় অনুমোদন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বাছাই করা অর্থনৈতিক পুনঃসম্পৃক্তি। ২০২০ সালেমহামারিসংশ্লিষ্ট উদ্বেগ ও সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ভারত চীনা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিখাতে কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিনিয়োগ যাচাই কঠোর করা৫জি নেটওয়ার্ক থেকে চীনা কোম্পানিগুলোকে বাদ দেওয়াটিকটকের মতো চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করাএর মধ্যে ছিল। গত কয়েক বছরে ভারতের বড় বড় কর্পোরেটসহ বহু সংস্থা এসব নিষেধাজ্ঞা শিথিলের দাবি তোলে। এখনকার শীতলতা কমার প্রেক্ষিতে সরকার সেই দাবির প্রতি বেশি সাড়া দিচ্ছেআর ট্রাম্পের শুল্কও চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহীদের পক্ষে পাল্লা ভারী করতে পারে।

সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেনয়াদিল্লি সংবেদনশীল নয়এমন কিছু খাতে বিধিনিষেধ শিথিল করতে পারে। সেখানে অগ্রাধিকার পাবে এমন সেক্টরযেখানে চীনা কোম্পানিশিল্পইনপুট ও দক্ষতা ভারতের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে অথবা দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় সক্ষমতা গড়ে তুলে চীন থেকে আমদানিনির্ভরতা কমাতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিউৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোবৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ভারতের গভীরতর একীভূতকরণ এবং রপ্তানি বাড়ানোএমন খাতে চীনা অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। বাজারপ্রবেশের বিনিময়ে চীনা কোম্পানিকে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যেতেকারিগরি সহায়তা দিতেবা প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হতে পারেযেমনটি বেইজিং নিজ দেশে বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে করে। তবেটেলিকমসহ গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামোমহাকাশ বা পারমাণবিক শক্তির মতো কৌশলগত প্রযুক্তিকিংবা ভারতীয় নাগরিকদের বিপুল ডেটা মালিকানা বা স্থানান্তর ঘটাতে পারেএমন খাতএসব সংবেদনশীল ক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ যে ভারত অব্যাহতভাবে আটকাবেতা প্রায় নিশ্চিত।

এখানে দুই দেশের জন্যই এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। নয়াদিল্লির জন্যঅর্থনৈতিক সম্পর্ক মেরামত প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হলেওতা ভঙ্গুরতা ও নির্ভরতা বাড়াতে পারে। বেইজিংয়ের জন্যবৈশ্বিক দক্ষিণের বৃহত্তম বাজারে প্রবেশ পশ্চিমা বাজার নির্ভরতাকে বৈচিত্র্যময় করবেকিন্তু একইসঙ্গে সে একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকেই শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

ফের উত্তপ্ত চীন-ভারত সীমান্ত

নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা
এই দ্বিধা দেখায়শীর্ষ সম্মেলনে যারা যা-ই বলুকদুই দেশই একে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখে। মতপার্থক্যও রয়ে গেছে। ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ সম্প্রতি আবারও বলেছেনচীনের সঙ্গে অনিষ্পন্ন সীমান্ত বিরোধই ভারতের প্রধান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ২০২০পূর্ববর্তী অবস্থানে দুই দেশের সেনা আর ফিরে যায়নি। বেইজিং এখনো সীমান্তবিষয়টিকে সম্পর্কের বাকি অংশ থেকে আলাদা রাখতে চায়কিন্তু নয়াদিল্লির মতেস্থিতিশীল সীমান্তই স্বাভাবিক সম্পর্কের পূর্বশর্ত।

দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক আরও নানা সমস্যাও সম্পর্ককে জর্জরিত করছে। গত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কেবল বেড়েছে। বেইজিং দেখিয়ে দিয়েছেনয়াদিল্লির নির্ভরতাকে সে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে এবং ভারতের উৎপাদন ও অবকাঠামোআকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করতে প্রস্তুত। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে চীন ভারতমুখী রেয়ার আর্থ চুম্বক ও সার রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছেচীনা কারখানায় তৈরি একটি জার্মান কোম্পানির টানেলবোরিং মেশিনের ভারতমুখী সরবরাহ আটকে দিয়েছেআবার অ্যাপলের অংশীদার কারখানায় কর্মরত চীনা বিশেষজ্ঞদের ভারতে যাত্রাও সীমিত করেছে। পাশাপাশিতারা ইয়ারলুং স্যাঙপো (ভারতে যাকে ব্রহ্মপুত্র বলা হয়) নদীতে একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেযা নিম্নগতির ভারত ও বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ বছর মে মাসে ভারতপাকিস্তানের বড় ধরনের সংঘর্ষে চীন নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বেইজিং ইসলামাবাদকে রিয়েলটাইম গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যযুদ্ধ সহায়তা দিয়েছেবেইজিংএ ভারতের সাবেক এক রাষ্ট্রদূত এটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আঁতাত” বলে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রসরবরাহকারী হিসেবেও চীন অটুটসাম্প্রতিক সময়ে তারা আরেকটি সাবমেরিন সরবরাহ করেছে।

এই সব কারণেএবং চীনসংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অবিশ্বাসের জন্যচীন যে উষ্ণতা আশা করেছিলভারত সেই মাত্রায় সাড়া দেয়নি। মোদীশি বৈঠকের আগেচীনের এই দাবিকে ভারত নিশ্চিত করেনি যেআগস্টে ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নাকি বলেছেন তাইওয়ান চীনের অংশ।” বরং ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেনতারা তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিকপ্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রাখবেন। বেইজিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা এবং চীনভারত সম্পর্কের উন্নতিতে বাধা” বলে আখ্যা দেয়। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ বংবং” মার্কোস জুনিয়রের ভারত সফর (আগস্টের শুরু) এবং তার পর মোদীর টোকিও সফর (আগস্টের শেষ)এই দুক্ষেত্রেই ভারত দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগর সম্পর্কে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেযেখানে চীনের সামুদ্রিক দাবি ও সামরিক তৎপরতা প্রতিবেশী দেশগুলিকে ক্ষুব্ধ করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে ভারত ও ফিলিপাইন নৌবাহিনীর প্রথম যৌথ মহড়াসহ এসব কূটনৈতিক বিনিময় দেখায়চীনের ভারসাম্য রক্ষায় ভারত পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।

চীননেতৃত্বাধীন কোনো অ্যান্টিওয়েস্টার্ন’ ব্লক গড়ায় ভারত অনীহাও দেখিয়েছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর উপস্থিতি নজর কেড়েছেকিন্তু তিনি যা করেননি তা কম আলোচিত। ২০১৯এর আগে নিয়মিত হওয়া চীনরাশিয়াভারত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক পুনরুজ্জীবিত করেননিযদিও বেইজিং ও মস্কো তা চেয়েছিল। তিনি বেইজিংয়ে শির বিজয় কুচকাওয়াজেও যাননি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ব্রাজিলের ডাকা জরুরি ভার্চুয়াল ব্রিকস সম্মেলনেযেখানে শি ও পুতিন অংশ নেনমোদী অংশ না নিয়ে দায়িত্ব দেন জয়শঙ্করকে।

ট্রাম্পের জয়ের পর বিদেশে যাওয়ার উপায় খুঁজছে মার্কিন নাগরিকরা! |

ট্রাম্পপ্রভাব
চীনের কাছে ভূমি ছাড় বা বড় কোনো ছাড় দেওয়ার ইচ্ছে ভারতের নেই। তবে ট্রাম্পের কৌশলের দুটি উপাদানযেগুলো ভারতে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছেভারতের নীতিনির্ধারণকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রথমতপূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো (ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনও) যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছিলট্রাম্প সেটিকেই জোরজবরদস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভারতকে পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতি বদলাতে চাপ দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ততিনি শিএর প্রতি তুলনামূলক সহনশীল ভঙ্গি নিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রচীন সম্পর্কের দিকনির্দেশনা নিয়ে ভারতে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছেন।

২০২৪ সালে ভারত আংশিকভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার পথে হাঁটেকারণ তারা জানত না পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীননীতিকে কোন দিকে নেওবেন। ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কএবং ট্রাম্পশি শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনাএ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছেবিশেষত তিয়ানচিনে মোদীশি আলোচনার প্রাক্মুহূর্তে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন নয়াদিল্লির ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং চীন প্রতিরোধে গা-ছাড়া দিয়েছেতখন মোদী নিজেকে গত বছরের তুলনায় দুর্বল অবস্থানে খুঁজে পানযখন বাইডেন প্রশাসন চীনপ্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে অংশীদারত্বে স্পষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছিল।

ট্রাম্প ভারতের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠদের অবস্থান দুর্বল করে দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রচীন সাময়িক একটা দেঁতো’ (সম্পর্কের উষ্ণতা) নাকি হলে তা শুধু ভারতচীন আলোচনায় ভারতের দরকষাকষির অবস্থানই বদলাবে নাভারতের কৌশলগত পরিবেশও জটিল করবে। যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বর্তমান শীতলতা অব্যাহত থাকেভারত এমন এক পরিস্থিতিতে পড়বে যেটি বহুদিন দেখা যায়নিওয়াশিংটনের সঙ্গে বিভ্রান্তিকর সম্পর্কএকই সময়ে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত প্রতিযোগিতা কমায় এবং ইসলামাবাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে যায়। আজকের ভারত অতীতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হলেওএই পরিস্থিতিতে চীন সীমান্তে নতুন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারেএমন আশঙ্কা থেকেই যায়। সেটি ঠেকাতে ভারতের ভেতরে চীনের সঙ্গে আরও হেজ’ করার আহ্বান উঠবেযদিও তা অপটিমাল নাও হতে পারেযেমন কিছু অর্থনৈতিক ছাড় দেওয়াচীনের কাছে হুমকিস্বরূপ এমন অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা সংযত করাবা সীমান্তে চীনের কিছু আগ্রাসী আচরণের মুখে নীরব থাকা।

এটা কেবল ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়। ট্রাম্পের চীনএবং ভারতনীতি ইতোমধ্যেই ভারতে চীনউন্মুক্ততার পক্ষে যুক্তি দেওয়াদের হাত শক্ত করেছে। ভারতের বৃহৎ কর্পোরেটগুলো চীনা কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ ও চীন থেকে বেশি আমদানিএসব ভাবছে। মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সঙ্গে কে ব্যবসা করবেতার ওপর প্রভাবের পাশাপাশিএ ধরনের কার্যক্রম ভারতে এমন গোষ্ঠীগুলোকেও বড় করতে পারে যারা চীনের সঙ্গে বেশি সমঝোতার পক্ষে।

3,900+ India America Relationship Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

একই সময়েট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠদের অবস্থান দুর্বল করছেনযারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পক্ষে যুক্তি দিতেন। বেইজিংবিরোধী অভিন্ন স্বার্থই নয়াদিল্লিওয়াশিংটন অংশীদারত্বকে গভীর করেছে। এই স্বার্থই দুই দেশকে ঐতিহাসিক জট কাটিয়ে ওঠামতপার্থক্য সামাল দেওয়াএবং প্রতিরক্ষাঅর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিতে নজিরবিহীন সহযোগিতায় উত্সাহিত করেছে।

কিন্তু আজ ভারতের সমালোচকেরা বলছেনট্রাম্পের চীনপ্রতিযোগিতায় আগ্রহ নেই। তাছাড়াযারা সমালোচনা করছেনতাদের মতেপারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে অস্ত্রায়িত করে ভারতকে জোর করাএটাই তো চীনের কায়দা! সম্পর্কের সমর্থকরাওযেমন জয়শঙ্করবলছেনভারতকে শুধু সরবরাহউৎসে (বিশেষত চীন) অতিনির্ভরতা নয়চাহিদার উৎসেও (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র) অতিনির্ভরতার ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে। এটি একটি পদক্ষেপগত পরিবর্তন নির্দেশ করেভারতের চীন সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখার বদলেযুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভারতের এক সমস্যায় পরিণত হচ্ছেএমন ধারণা শক্ত হচ্ছে।

দুই পক্ষেরই ক্ষতি
এই ধারণা স্থায়ী হলেএবং নীতিও যদি সেভাবেই তৈরি হয়তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে ভারতের কৌশলগতঅর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পছন্দঅপছন্দে প্রভাব পড়বে। নীতিনির্ধারক মহলসরকারের ভেতরে ও বাইরেবলবেঅবিশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম করা উচিতনিরাপত্তাঅংশীদারবাজারপুঁজিপ্রতিরক্ষা সরঞ্জামপ্রযুক্তিপণ্য ও জ্ঞানকৌশলের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। এতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও প্রযুক্তিকোম্পানির জন্য কম অনুকূল পরিবেশ হয়ে উঠবেএবং প্রতিরক্ষাঅর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিখাতেযেখানে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভূতপূর্ব সহযোগিতায় গেছেসেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতাও শিথিল হবে।

ফরেন অ্যাফেয়ার্সএ সাম্প্রতিক রচনায় কার্ট ক্যাম্পবেল ও জেক সুলিভান যুক্তি দিয়েছেনভারতে মার্কিন বিনিয়োগ কোনো পরোপকারের কারণে নয়বরং স্বার্থের কারণেবিশেষ করে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে। ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে থাকেতবে তা চীনের হিসাবনিকাশকে জটিল করবে। কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যদি একেঅপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়তবে উভয়ের হাতই দুর্বল হবেবিশেষ করে চীন প্রসঙ্গে।

নয়াদিল্লি বোঝেবেইজিংয়ের সঙ্গে দরকষাকষিতে কম প্রভাবনিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিউদ্ভাবন এবং চীনা আধিপত্যহীন এশিয়া গড়ার কাজএসবই কঠিন হবে যদি যুক্তরাষ্ট্রভারত সম্পর্ক শীতল থাকে। এ কারণেই ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা চাইছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যদি তার প্রতিউত্তরে ইতিবাচক না হয় এবং ভারতের ওপর চাপ বজায় রাখেতাহলে নয়াদিল্লি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পররাষ্ট্রনীতিতে ভিন্ন এক ভারসাম্য খুঁজবেআর সেই নতুন ভারসাম্য স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কম অনুকূল হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১

ভারত চায় না চীনের ওপর নির্ভর করতে: কিন্তু মার্কিন নীতিই নয়াদিল্লিকে প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ঠেলে দিচ্ছে

০৮:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগস্টেচীন ও ভারতের সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পাঁচ বছর পরভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে তিয়ানচিনে গিয়ে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০২০ সালে এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর এটিই ছিল মোদীর প্রথম চীন সফর। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা শি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মোদীর হাত ধরাধরি করে হাসিমুখে থাকা ছবি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কয়েকজন পর্যবেক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করেনযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার ধমকধামকি ও শুল্কতিনি গত গ্রীষ্মে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেননয়াদিল্লিকে বেইজিংয়ের কোলে ঠেলে দিয়েছে।

এই ব্যাখ্যায় কারণ ও পরিণতি দুটোই ভুল ধরা হয়েছে। ট্রাম্পের বুলি’ করার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মোদী-শি বৈঠক হয়নিএটি ভারত-চীন সম্পর্কের কোনো তড়িঘড়ি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাও ছিল না। আর নয়াদিল্লি বেইজিংয়ের কোলেও যায়নিবেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোনো নতুন অ্যান্টি-ওয়েস্টার্ন’ ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টাও করছে না। সত্যি বলতেগত প্রায় এক বছর ধরে ভারত ও চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো না কোনো মাত্রার স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবু এই প্রচেষ্টা এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে অব্যাহত আছেসে সত্যকে ঢেকে রাখে না।

তবে ট্রাম্পের ভারতের ওপর চাপ ও চীনের সঙ্গে কোনো গ্র্যান্ড বার্গেন’ করার তাঁর আগ্রহ ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের হিসাবনিকাশে প্রভাব ফেলবেই। তারা উদ্বেগ নিয়ে দেখবেনয়াদিল্লির প্রতি ওয়াশিংটনের জবরদস্তিমূলক ভঙ্গি এবং চীনের প্রতি তুলনামূলক নমনীয়তাযা সাম্প্রতিক মার্কিন নীতির থেকে বিচ্যুতিযে নীতি চীনকে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাকে জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে কাছাকাছি এনেছিল। ভারতীয় কর্মকর্তারা এমন অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাইবে নাসেই দুশ্চিন্তা ভারতের চীনের সঙ্গে পুনঃসম্পৃক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলতঃ এর আঞ্চলিক মার্কিন স্বার্থে প্রভাব পড়বে। ট্রাম্প যদি ভারতকে টার্গেট করা চালিয়ে যানতাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম সহযোগিতা করবেকম ক্রয় করবে এবং হয়তো চীন ও অন্যদের সঙ্গে বেশি করবেযা নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত লক্ষ্যটির পুরো উল্টো।

তবে কি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-চীন?

আদরের প্রতিদ্বন্দ্বীকে কাছে টানা
চীন-ভারত সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে ২০২৪ সালের অক্টোবরেব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেযেখানে মোদী ও শি ২০১৯ সালের পর প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। দুই পক্ষই সীমান্তে সেনা বিচ্ছেদের কাজ শেষ হওয়ার কথা ঘোষণা করেযা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বেইজিং ও নয়াদিল্লিদুপক্ষইতাপমাত্রা বদলাতে প্রস্তুত ছিল। চীন তখন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বাধার মুখেমন্থর প্রবৃদ্ধিযুক্তরাষ্ট্রের চাপরাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার কারণে ইউরোপের উদ্বেগ। ভারতের ক্ষেত্রেসীমান্তে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কায় অস্থির থেকে না থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং চীনের সঙ্গে বড় প্রতিযোগিতার জন্য নিজস্ব সক্ষমতা জোরদারে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিল। তখনও কোনো পক্ষ জানত নাহোয়াইট হাউসে পরবর্তী সময়ে কে আসবেনআর তাঁর চীন-নীতি কেমন হবে।

তারপর থেকে চীন-ভারতের বরফ আরও গলেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশ বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে সীমান্ত সংলাপ পুনরুজ্জীবিত করেএ বছরের আগস্টে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দিল্লি সফর করেন। বহুপাক্ষিক পরিসরেও২০২৩ সালে দিল্লির জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে শি অনুপস্থিত থাকলেওএই বছর সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে থাকা চীনের বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিতে ভারত প্রতিরক্ষামন্ত্রীপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বেইজিং সফর করেন।

এই আলোচনা আরও কিছু সৌহার্দ্যপূর্ণ পদক্ষেপের দ্বার খুলে দিয়েছেসিভিল সোসাইটির বিনিময় পুনরায় চালু করাদুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর চুক্তিচীনা পর্যটকদের জন্য ভারতীয় ভিসা পুনঃপ্রদানএবং চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন তিব্বতে অবস্থিত হিন্দুদের পবিত্র স্থান কৈলাশ-মানস সরোবরে ভারতীয়দের তীর্থযাত্রা পুনরায় অনুমোদন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বাছাই করা অর্থনৈতিক পুনঃসম্পৃক্তি। ২০২০ সালেমহামারিসংশ্লিষ্ট উদ্বেগ ও সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ভারত চীনা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিখাতে কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিনিয়োগ যাচাই কঠোর করা৫জি নেটওয়ার্ক থেকে চীনা কোম্পানিগুলোকে বাদ দেওয়াটিকটকের মতো চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করাএর মধ্যে ছিল। গত কয়েক বছরে ভারতের বড় বড় কর্পোরেটসহ বহু সংস্থা এসব নিষেধাজ্ঞা শিথিলের দাবি তোলে। এখনকার শীতলতা কমার প্রেক্ষিতে সরকার সেই দাবির প্রতি বেশি সাড়া দিচ্ছেআর ট্রাম্পের শুল্কও চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহীদের পক্ষে পাল্লা ভারী করতে পারে।

সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেনয়াদিল্লি সংবেদনশীল নয়এমন কিছু খাতে বিধিনিষেধ শিথিল করতে পারে। সেখানে অগ্রাধিকার পাবে এমন সেক্টরযেখানে চীনা কোম্পানিশিল্পইনপুট ও দক্ষতা ভারতের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে অথবা দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় সক্ষমতা গড়ে তুলে চীন থেকে আমদানিনির্ভরতা কমাতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিউৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোবৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ভারতের গভীরতর একীভূতকরণ এবং রপ্তানি বাড়ানোএমন খাতে চীনা অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। বাজারপ্রবেশের বিনিময়ে চীনা কোম্পানিকে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যেতেকারিগরি সহায়তা দিতেবা প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হতে পারেযেমনটি বেইজিং নিজ দেশে বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে করে। তবেটেলিকমসহ গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামোমহাকাশ বা পারমাণবিক শক্তির মতো কৌশলগত প্রযুক্তিকিংবা ভারতীয় নাগরিকদের বিপুল ডেটা মালিকানা বা স্থানান্তর ঘটাতে পারেএমন খাতএসব সংবেদনশীল ক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ যে ভারত অব্যাহতভাবে আটকাবেতা প্রায় নিশ্চিত।

এখানে দুই দেশের জন্যই এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। নয়াদিল্লির জন্যঅর্থনৈতিক সম্পর্ক মেরামত প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হলেওতা ভঙ্গুরতা ও নির্ভরতা বাড়াতে পারে। বেইজিংয়ের জন্যবৈশ্বিক দক্ষিণের বৃহত্তম বাজারে প্রবেশ পশ্চিমা বাজার নির্ভরতাকে বৈচিত্র্যময় করবেকিন্তু একইসঙ্গে সে একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকেই শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

ফের উত্তপ্ত চীন-ভারত সীমান্ত

নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা
এই দ্বিধা দেখায়শীর্ষ সম্মেলনে যারা যা-ই বলুকদুই দেশই একে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখে। মতপার্থক্যও রয়ে গেছে। ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ সম্প্রতি আবারও বলেছেনচীনের সঙ্গে অনিষ্পন্ন সীমান্ত বিরোধই ভারতের প্রধান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ২০২০পূর্ববর্তী অবস্থানে দুই দেশের সেনা আর ফিরে যায়নি। বেইজিং এখনো সীমান্তবিষয়টিকে সম্পর্কের বাকি অংশ থেকে আলাদা রাখতে চায়কিন্তু নয়াদিল্লির মতেস্থিতিশীল সীমান্তই স্বাভাবিক সম্পর্কের পূর্বশর্ত।

দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক আরও নানা সমস্যাও সম্পর্ককে জর্জরিত করছে। গত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কেবল বেড়েছে। বেইজিং দেখিয়ে দিয়েছেনয়াদিল্লির নির্ভরতাকে সে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে এবং ভারতের উৎপাদন ও অবকাঠামোআকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করতে প্রস্তুত। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে চীন ভারতমুখী রেয়ার আর্থ চুম্বক ও সার রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছেচীনা কারখানায় তৈরি একটি জার্মান কোম্পানির টানেলবোরিং মেশিনের ভারতমুখী সরবরাহ আটকে দিয়েছেআবার অ্যাপলের অংশীদার কারখানায় কর্মরত চীনা বিশেষজ্ঞদের ভারতে যাত্রাও সীমিত করেছে। পাশাপাশিতারা ইয়ারলুং স্যাঙপো (ভারতে যাকে ব্রহ্মপুত্র বলা হয়) নদীতে একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেযা নিম্নগতির ভারত ও বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ বছর মে মাসে ভারতপাকিস্তানের বড় ধরনের সংঘর্ষে চীন নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বেইজিং ইসলামাবাদকে রিয়েলটাইম গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যযুদ্ধ সহায়তা দিয়েছেবেইজিংএ ভারতের সাবেক এক রাষ্ট্রদূত এটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আঁতাত” বলে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রসরবরাহকারী হিসেবেও চীন অটুটসাম্প্রতিক সময়ে তারা আরেকটি সাবমেরিন সরবরাহ করেছে।

এই সব কারণেএবং চীনসংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অবিশ্বাসের জন্যচীন যে উষ্ণতা আশা করেছিলভারত সেই মাত্রায় সাড়া দেয়নি। মোদীশি বৈঠকের আগেচীনের এই দাবিকে ভারত নিশ্চিত করেনি যেআগস্টে ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নাকি বলেছেন তাইওয়ান চীনের অংশ।” বরং ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেনতারা তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিকপ্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রাখবেন। বেইজিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা এবং চীনভারত সম্পর্কের উন্নতিতে বাধা” বলে আখ্যা দেয়। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ বংবং” মার্কোস জুনিয়রের ভারত সফর (আগস্টের শুরু) এবং তার পর মোদীর টোকিও সফর (আগস্টের শেষ)এই দুক্ষেত্রেই ভারত দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগর সম্পর্কে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেযেখানে চীনের সামুদ্রিক দাবি ও সামরিক তৎপরতা প্রতিবেশী দেশগুলিকে ক্ষুব্ধ করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে ভারত ও ফিলিপাইন নৌবাহিনীর প্রথম যৌথ মহড়াসহ এসব কূটনৈতিক বিনিময় দেখায়চীনের ভারসাম্য রক্ষায় ভারত পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।

চীননেতৃত্বাধীন কোনো অ্যান্টিওয়েস্টার্ন’ ব্লক গড়ায় ভারত অনীহাও দেখিয়েছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর উপস্থিতি নজর কেড়েছেকিন্তু তিনি যা করেননি তা কম আলোচিত। ২০১৯এর আগে নিয়মিত হওয়া চীনরাশিয়াভারত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক পুনরুজ্জীবিত করেননিযদিও বেইজিং ও মস্কো তা চেয়েছিল। তিনি বেইজিংয়ে শির বিজয় কুচকাওয়াজেও যাননি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে আলোচনায় ব্রাজিলের ডাকা জরুরি ভার্চুয়াল ব্রিকস সম্মেলনেযেখানে শি ও পুতিন অংশ নেনমোদী অংশ না নিয়ে দায়িত্ব দেন জয়শঙ্করকে।

ট্রাম্পের জয়ের পর বিদেশে যাওয়ার উপায় খুঁজছে মার্কিন নাগরিকরা! |

ট্রাম্পপ্রভাব
চীনের কাছে ভূমি ছাড় বা বড় কোনো ছাড় দেওয়ার ইচ্ছে ভারতের নেই। তবে ট্রাম্পের কৌশলের দুটি উপাদানযেগুলো ভারতে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছেভারতের নীতিনির্ধারণকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রথমতপূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো (ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনও) যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছিলট্রাম্প সেটিকেই জোরজবরদস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভারতকে পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতি বদলাতে চাপ দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ততিনি শিএর প্রতি তুলনামূলক সহনশীল ভঙ্গি নিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রচীন সম্পর্কের দিকনির্দেশনা নিয়ে ভারতে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছেন।

২০২৪ সালে ভারত আংশিকভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার পথে হাঁটেকারণ তারা জানত না পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীননীতিকে কোন দিকে নেওবেন। ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কএবং ট্রাম্পশি শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনাএ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছেবিশেষত তিয়ানচিনে মোদীশি আলোচনার প্রাক্মুহূর্তে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন নয়াদিল্লির ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং চীন প্রতিরোধে গা-ছাড়া দিয়েছেতখন মোদী নিজেকে গত বছরের তুলনায় দুর্বল অবস্থানে খুঁজে পানযখন বাইডেন প্রশাসন চীনপ্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে অংশীদারত্বে স্পষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছিল।

ট্রাম্প ভারতের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠদের অবস্থান দুর্বল করে দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রচীন সাময়িক একটা দেঁতো’ (সম্পর্কের উষ্ণতা) নাকি হলে তা শুধু ভারতচীন আলোচনায় ভারতের দরকষাকষির অবস্থানই বদলাবে নাভারতের কৌশলগত পরিবেশও জটিল করবে। যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বর্তমান শীতলতা অব্যাহত থাকেভারত এমন এক পরিস্থিতিতে পড়বে যেটি বহুদিন দেখা যায়নিওয়াশিংটনের সঙ্গে বিভ্রান্তিকর সম্পর্কএকই সময়ে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত প্রতিযোগিতা কমায় এবং ইসলামাবাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে যায়। আজকের ভারত অতীতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হলেওএই পরিস্থিতিতে চীন সীমান্তে নতুন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারেএমন আশঙ্কা থেকেই যায়। সেটি ঠেকাতে ভারতের ভেতরে চীনের সঙ্গে আরও হেজ’ করার আহ্বান উঠবেযদিও তা অপটিমাল নাও হতে পারেযেমন কিছু অর্থনৈতিক ছাড় দেওয়াচীনের কাছে হুমকিস্বরূপ এমন অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা সংযত করাবা সীমান্তে চীনের কিছু আগ্রাসী আচরণের মুখে নীরব থাকা।

এটা কেবল ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়। ট্রাম্পের চীনএবং ভারতনীতি ইতোমধ্যেই ভারতে চীনউন্মুক্ততার পক্ষে যুক্তি দেওয়াদের হাত শক্ত করেছে। ভারতের বৃহৎ কর্পোরেটগুলো চীনা কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ ও চীন থেকে বেশি আমদানিএসব ভাবছে। মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সঙ্গে কে ব্যবসা করবেতার ওপর প্রভাবের পাশাপাশিএ ধরনের কার্যক্রম ভারতে এমন গোষ্ঠীগুলোকেও বড় করতে পারে যারা চীনের সঙ্গে বেশি সমঝোতার পক্ষে।

3,900+ India America Relationship Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

একই সময়েট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠদের অবস্থান দুর্বল করছেনযারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পক্ষে যুক্তি দিতেন। বেইজিংবিরোধী অভিন্ন স্বার্থই নয়াদিল্লিওয়াশিংটন অংশীদারত্বকে গভীর করেছে। এই স্বার্থই দুই দেশকে ঐতিহাসিক জট কাটিয়ে ওঠামতপার্থক্য সামাল দেওয়াএবং প্রতিরক্ষাঅর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিতে নজিরবিহীন সহযোগিতায় উত্সাহিত করেছে।

কিন্তু আজ ভারতের সমালোচকেরা বলছেনট্রাম্পের চীনপ্রতিযোগিতায় আগ্রহ নেই। তাছাড়াযারা সমালোচনা করছেনতাদের মতেপারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে অস্ত্রায়িত করে ভারতকে জোর করাএটাই তো চীনের কায়দা! সম্পর্কের সমর্থকরাওযেমন জয়শঙ্করবলছেনভারতকে শুধু সরবরাহউৎসে (বিশেষত চীন) অতিনির্ভরতা নয়চাহিদার উৎসেও (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র) অতিনির্ভরতার ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে। এটি একটি পদক্ষেপগত পরিবর্তন নির্দেশ করেভারতের চীন সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখার বদলেযুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভারতের এক সমস্যায় পরিণত হচ্ছেএমন ধারণা শক্ত হচ্ছে।

দুই পক্ষেরই ক্ষতি
এই ধারণা স্থায়ী হলেএবং নীতিও যদি সেভাবেই তৈরি হয়তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে ভারতের কৌশলগতঅর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পছন্দঅপছন্দে প্রভাব পড়বে। নীতিনির্ধারক মহলসরকারের ভেতরে ও বাইরেবলবেঅবিশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম করা উচিতনিরাপত্তাঅংশীদারবাজারপুঁজিপ্রতিরক্ষা সরঞ্জামপ্রযুক্তিপণ্য ও জ্ঞানকৌশলের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। এতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও প্রযুক্তিকোম্পানির জন্য কম অনুকূল পরিবেশ হয়ে উঠবেএবং প্রতিরক্ষাঅর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিখাতেযেখানে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভূতপূর্ব সহযোগিতায় গেছেসেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতাও শিথিল হবে।

ফরেন অ্যাফেয়ার্সএ সাম্প্রতিক রচনায় কার্ট ক্যাম্পবেল ও জেক সুলিভান যুক্তি দিয়েছেনভারতে মার্কিন বিনিয়োগ কোনো পরোপকারের কারণে নয়বরং স্বার্থের কারণেবিশেষ করে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে। ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে থাকেতবে তা চীনের হিসাবনিকাশকে জটিল করবে। কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যদি একেঅপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়তবে উভয়ের হাতই দুর্বল হবেবিশেষ করে চীন প্রসঙ্গে।

নয়াদিল্লি বোঝেবেইজিংয়ের সঙ্গে দরকষাকষিতে কম প্রভাবনিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিউদ্ভাবন এবং চীনা আধিপত্যহীন এশিয়া গড়ার কাজএসবই কঠিন হবে যদি যুক্তরাষ্ট্রভারত সম্পর্ক শীতল থাকে। এ কারণেই ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা চাইছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যদি তার প্রতিউত্তরে ইতিবাচক না হয় এবং ভারতের ওপর চাপ বজায় রাখেতাহলে নয়াদিল্লি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পররাষ্ট্রনীতিতে ভিন্ন এক ভারসাম্য খুঁজবেআর সেই নতুন ভারসাম্য স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কম অনুকূল হবে।