০৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা? ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত, হামাসের সতর্কতা: ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বিশ্বব্যাপী অস্বাস্থ্যকর আল্ট্রাপ্রসেসড খাবারের বিপুল লাভ এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব উত্তরায় গলা কাটা মরদেহ: অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে কিশোরকে হত্যা অ্যাফ্রিকান গোল্ডেন ক্যাট: একটি বিরল প্রজাতির সুরক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা ঠান্ডা হাত? এটি হতে পারে রেনো’স রোগ সাইনাস যন্ত্রণা কেন বাড়ে—কারণ, লক্ষণ ও সমাধান মুম্বইয়ের উচ্চ সতর্কতা: দিল্লি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত তিনজন আটক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা অনুমোদনকে স্বাগত জানাল জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শারজাহর হোলি কুরআন একাডেমি ও আইসেসকোর সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা

বিদ্যুৎ ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াটে, আংশিক গ্রিড বিপর্যয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং

ঢাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড আংশিকভাবে বিপর্যস্ত হলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-এর তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে, যেখানে চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় ৪৯৮ মেগাওয়াট। অথচ দেশের মোট স্থাপিত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ১৯৭ মেগাওয়াট।

দুর্গাপূজার আগে অঙ্গীকার ভঙ্গের শঙ্কা

গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি হুমকির মুখে পড়ে। দুর্গাপূজায় বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও বিঘ্নিত করতে পারে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী বি এম মিজানুল হাসান জানান, “ট্রান্সফরমার এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি।” তিনি বলেন, ভোর ৫টার দিকে ঘোড়াশালে ট্রান্সফরমার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি।

ঘোড়াশাল বিদ্যুতের প্রধান কেন্দ্র

ঘোড়াশালকে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে মিজান জানান, এটি ঢাকার বিভিন্ন অংশ, টঙ্গী এবং জয়দেবপুরকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত রাখে। ফলে বিপর্যয়ের প্রভাব রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় সরাসরি পড়ে।

দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ ঘাটতি ও জ্বালানি সংকট

জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে দেশের বিদ্যুৎ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই গ্রামীণ এলাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এ সময় আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় গরম ও শুষ্ক।

ডলার সংকটজনিত কারণে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যাপ্ত হচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। একইভাবে কয়লাভিত্তিক উৎপাদনও বাকি বিল ও কয়লার সংকটে সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) জাহুরুল ইসলাম জানান, খরচ কমাতে ফার্নেস অয়েল ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। অথচ ফার্নেস অয়েলভিত্তিক উৎপাদন মোট সক্ষমতার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এর মধ্যে ৫,৬৪১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে বিকেল ৪টায় উৎপাদন হয় মাত্র ২,১৮১ মেগাওয়াট।

গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন হয় ৫,৩৯৩ মেগাওয়াট, যেখানে মোট সক্ষমতা ১২,৫১২ মেগাওয়াট। অন্যদিকে, কয়লাভিত্তিক সক্ষমতা ৫,৬৮৩ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন হয় ৪,০৯২ মেগাওয়াট।

আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহেও ঘাটতি

বৃহস্পতিবার আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও সরবরাহ কমে যায়। ১,৪৯৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে দিনের বেশিরভাগ সময় সরবরাহ ছিল প্রায় ১,০০০ মেগাওয়াট। সকাল ১০টা ও ১১টায় সরবরাহ ১,০০০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। তবে কেন উৎপাদন কমানো হয়েছে তা বিপিডিবি জানাতে পারেনি।

শিল্পখাতে উদ্বেগ বাড়ছে

বারবার গ্রিড বিপর্যয় শিল্প খাতের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মূলত নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুতের (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ওপর নির্ভর করে, যার পরিমাণ ২,৮০০ মেগাওয়াট। এটি জাতীয় গ্রিডের বাইরে আলাদা যোগান হিসেবেই চলে।

সাম্প্রতিক অতীতে গ্রিড বিপর্যয়ের নজির

  • চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল প্রায় দুই ডজন জেলায় ঘুড়ির সূতোয় শর্টসার্কিট থেকে গ্রিড বিপর্যয় ঘটে।
  • মার্চ মাসের প্রথমদিকে ঢাকায় আরেকটি গ্রিড বিপর্যয় হয় আগুন লাগার কারণে।
  • ২০২৩ সালের অক্টোবরে আমিনবাজার সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ঢাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
  • ঠিক এক বছর আগে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে চারটি বিভাগে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল।

একটি প্রাণহানির ঘটনা

দিনাজপুরে এক ৩০ বছর বয়সী যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।


জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা?

বিদ্যুৎ ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াটে, আংশিক গ্রিড বিপর্যয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং

০৩:৪০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড আংশিকভাবে বিপর্যস্ত হলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-এর তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে, যেখানে চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় ৪৯৮ মেগাওয়াট। অথচ দেশের মোট স্থাপিত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ১৯৭ মেগাওয়াট।

দুর্গাপূজার আগে অঙ্গীকার ভঙ্গের শঙ্কা

গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি হুমকির মুখে পড়ে। দুর্গাপূজায় বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও বিঘ্নিত করতে পারে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী বি এম মিজানুল হাসান জানান, “ট্রান্সফরমার এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি।” তিনি বলেন, ভোর ৫টার দিকে ঘোড়াশালে ট্রান্সফরমার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি।

ঘোড়াশাল বিদ্যুতের প্রধান কেন্দ্র

ঘোড়াশালকে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে মিজান জানান, এটি ঢাকার বিভিন্ন অংশ, টঙ্গী এবং জয়দেবপুরকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত রাখে। ফলে বিপর্যয়ের প্রভাব রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় সরাসরি পড়ে।

দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ ঘাটতি ও জ্বালানি সংকট

জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে দেশের বিদ্যুৎ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই গ্রামীণ এলাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এ সময় আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় গরম ও শুষ্ক।

ডলার সংকটজনিত কারণে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যাপ্ত হচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। একইভাবে কয়লাভিত্তিক উৎপাদনও বাকি বিল ও কয়লার সংকটে সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) জাহুরুল ইসলাম জানান, খরচ কমাতে ফার্নেস অয়েল ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। অথচ ফার্নেস অয়েলভিত্তিক উৎপাদন মোট সক্ষমতার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। এর মধ্যে ৫,৬৪১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে বিকেল ৪টায় উৎপাদন হয় মাত্র ২,১৮১ মেগাওয়াট।

গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন হয় ৫,৩৯৩ মেগাওয়াট, যেখানে মোট সক্ষমতা ১২,৫১২ মেগাওয়াট। অন্যদিকে, কয়লাভিত্তিক সক্ষমতা ৫,৬৮৩ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন হয় ৪,০৯২ মেগাওয়াট।

আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহেও ঘাটতি

বৃহস্পতিবার আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও সরবরাহ কমে যায়। ১,৪৯৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে দিনের বেশিরভাগ সময় সরবরাহ ছিল প্রায় ১,০০০ মেগাওয়াট। সকাল ১০টা ও ১১টায় সরবরাহ ১,০০০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। তবে কেন উৎপাদন কমানো হয়েছে তা বিপিডিবি জানাতে পারেনি।

শিল্পখাতে উদ্বেগ বাড়ছে

বারবার গ্রিড বিপর্যয় শিল্প খাতের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মূলত নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুতের (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ওপর নির্ভর করে, যার পরিমাণ ২,৮০০ মেগাওয়াট। এটি জাতীয় গ্রিডের বাইরে আলাদা যোগান হিসেবেই চলে।

সাম্প্রতিক অতীতে গ্রিড বিপর্যয়ের নজির

  • চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল প্রায় দুই ডজন জেলায় ঘুড়ির সূতোয় শর্টসার্কিট থেকে গ্রিড বিপর্যয় ঘটে।
  • মার্চ মাসের প্রথমদিকে ঢাকায় আরেকটি গ্রিড বিপর্যয় হয় আগুন লাগার কারণে।
  • ২০২৩ সালের অক্টোবরে আমিনবাজার সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ঢাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
  • ঠিক এক বছর আগে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে চারটি বিভাগে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল।

একটি প্রাণহানির ঘটনা

দিনাজপুরে এক ৩০ বছর বয়সী যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।