০৭:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
হোক্কাইদোতে স্যামন রোর দাম চড়া—ধরা কম, খরচ বেশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৪২ জন গণতন্ত্রের অধঃপতন ও ইতিহাসের উল্টোদিক—“স্বাধীনতার আত্মা” আবার জাগ্রত করার আহ্বান রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ গেল ১৫ বছরের রুমানের জুলাই আন্দোলনের পরও রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ছে: দুঃখ প্রকাশ মির্জা ফখরুলের শুধু নির্গমন কমালেই হবে না—অভিযোজনেই জোর দিন: ডব্লিউএসজে মতামতধারার আলোচ্য রাজশাহীতে চারঘাট পৌরসভার পুকুরে ভেসে থাকা মরদেহে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ  রাতের বেলা ঘর থেকে বেরিয়ে আর ফেরা হলো না জিহাদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি: পুলিশের মানসিক ভাঙনের ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি

চীনকে পিছনে ফেলে ভিয়েতনাম: বিশ্বের নতুন স্নিকার সাম্রাজ্য

চীনের থেকে ভিয়েতনামে সরে আসা উৎপাদন

চীন দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি, খেলনা ও কম্পিউটার তৈরির জন্য বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্নিকার উৎপাদনে সেই জায়গাটি দখল করেছে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি। শহরটির চারপাশে অবস্থিত অসংখ্য কারখানা প্রতিদিন তৈরি করছে ফোম সোল, ইনসোল, কটন লেস ও মেশ ফেব্রিক। এগুলো পরে কাছের কারখানাগুলোতে পাঠানো হয় এবং জুতায় রূপান্তরিত হয়ে বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে নাইকি, অ্যাডিডাস, সাকনি ও ব্রুকস স্পোর্টসের নামী ব্র্যান্ডের জুতা বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম বাণিজ্য চাপ

এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এতে নাইকি ও অ্যাডিডাসের শেয়ারের দাম হঠাৎ কমে যায়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম প্রাথমিক একটি বাণিজ্য চুক্তি করে, যেখানে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়। তবে এই অস্থিরতা স্নিকার শিল্পে বড় প্রভাব ফেলেছে। নাইকি জানিয়েছে, বৈশ্বিক শুল্কের কারণে এ বছর তাদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হবে। এজন্য তারা চীনে উৎপাদন আরও কমাচ্ছে।


উৎপাদন ঘাঁটির ইতিহাস

১৯৭০-এর দশকেই সস্তা শ্রম খুঁজতে নাইকি-সহ বড় ব্র্যান্ডগুলো দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে উৎপাদন শুরু করে। পরে ১৯৮০-এর দশকে চীনের অর্থনীতি উন্মুক্ত হলে সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে জুতা শিল্প দ্রুত চীনে কেন্দ্রীভূত হয়। তবে ২০০০ সালের পর থেকে ভিয়েতনামও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনে। বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং তরুণ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগায়।

২০১০-এর দশকে চীনের শ্রমিকরা বেশি মজুরি দাবি করতে শুরু করলে এবং নকল উৎপাদন বাড়তে থাকলে, ব্র্যান্ডগুলো বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়। তখন ভিয়েতনাম হয়ে ওঠে নতুন কেন্দ্র।


করোনা মহামারি ও সরবরাহ চেইনের পরিবর্তন

২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে চীন সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এতে বিশ্ব বুঝতে পারে, তাদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কতটা বিপজ্জনক। ফলে জুতা কোম্পানিগুলো দ্রুত ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়ায়। ভিয়েতনামে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছিল শক্তিশালী সরবরাহ চেইন, যা দ্রুত বাজারে পণ্য পাঠাতে সাহায্য করছে।

বস্টনভিত্তিক কোম্পানি জোন্স অ্যান্ড ভাইনিং ২০১১ সালে ভিয়েতনামে কারখানা গড়ে। এখন তারা বছরে পাঁচ লাখ জুতা ঢালাই (লাস্ট), দুই কোটি ইনসোল ও ১২ কোটি ফুটবেড তৈরি করছে। এর ৭০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় কাছাকাছি কারখানাগুলোতে।


স্থানীয় কর্মীদের গল্প

ভিয়েতনামের ফ্যাক্টরিগুলো শুধু অর্থনীতিকেও নয়, স্থানীয় জীবনের ছবিও পাল্টে দিয়েছে। ফাম কিউ দিয়েম নামের এক নারী ১৯৯৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে জুতা কারখানায় যোগ দেন। আগে তিনি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পরিবারের জন্য ধান ও ডাল চাষ করতে। প্রায় দুই দশক কাজ করে তিনি ও তাঁর বোনেরা জমি কিনে বাড়ি বানান। দিয়েমের ভাষায়, “এটা আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে।”


ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের প্রাথমিক চুক্তি হলেও এখনো অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। বিশেষ করে চীনে উৎপাদিত পণ্য ভিয়েতনাম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এলে সেটির ওপর শুল্ক কত হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যদিও ভিয়েতনামের জুতা শিল্পের ওপর চীনের নির্ভরশীলতা কম, কিছু কাঁচামাল এখনো চীন থেকে আসে।

শহরের চারপাশে যেসব স্থানে আগে ধানক্ষেত ছিল, সেখানে এখন দেখা যায় কারখানা, ট্রাক ও শিপিং কনটেইনার। এই পরিবর্তনই বলছে, ভিয়েতনাম এখন বিশ্বের নতুন স্নিকার কারখানার পরিণত হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হোক্কাইদোতে স্যামন রোর দাম চড়া—ধরা কম, খরচ বেশি

চীনকে পিছনে ফেলে ভিয়েতনাম: বিশ্বের নতুন স্নিকার সাম্রাজ্য

১২:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনের থেকে ভিয়েতনামে সরে আসা উৎপাদন

চীন দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি, খেলনা ও কম্পিউটার তৈরির জন্য বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্নিকার উৎপাদনে সেই জায়গাটি দখল করেছে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি। শহরটির চারপাশে অবস্থিত অসংখ্য কারখানা প্রতিদিন তৈরি করছে ফোম সোল, ইনসোল, কটন লেস ও মেশ ফেব্রিক। এগুলো পরে কাছের কারখানাগুলোতে পাঠানো হয় এবং জুতায় রূপান্তরিত হয়ে বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে নাইকি, অ্যাডিডাস, সাকনি ও ব্রুকস স্পোর্টসের নামী ব্র্যান্ডের জুতা বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম বাণিজ্য চাপ

এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এতে নাইকি ও অ্যাডিডাসের শেয়ারের দাম হঠাৎ কমে যায়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম প্রাথমিক একটি বাণিজ্য চুক্তি করে, যেখানে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়। তবে এই অস্থিরতা স্নিকার শিল্পে বড় প্রভাব ফেলেছে। নাইকি জানিয়েছে, বৈশ্বিক শুল্কের কারণে এ বছর তাদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হবে। এজন্য তারা চীনে উৎপাদন আরও কমাচ্ছে।


উৎপাদন ঘাঁটির ইতিহাস

১৯৭০-এর দশকেই সস্তা শ্রম খুঁজতে নাইকি-সহ বড় ব্র্যান্ডগুলো দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে উৎপাদন শুরু করে। পরে ১৯৮০-এর দশকে চীনের অর্থনীতি উন্মুক্ত হলে সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে জুতা শিল্প দ্রুত চীনে কেন্দ্রীভূত হয়। তবে ২০০০ সালের পর থেকে ভিয়েতনামও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনে। বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং তরুণ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগায়।

২০১০-এর দশকে চীনের শ্রমিকরা বেশি মজুরি দাবি করতে শুরু করলে এবং নকল উৎপাদন বাড়তে থাকলে, ব্র্যান্ডগুলো বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়। তখন ভিয়েতনাম হয়ে ওঠে নতুন কেন্দ্র।


করোনা মহামারি ও সরবরাহ চেইনের পরিবর্তন

২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে চীন সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এতে বিশ্ব বুঝতে পারে, তাদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কতটা বিপজ্জনক। ফলে জুতা কোম্পানিগুলো দ্রুত ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়ায়। ভিয়েতনামে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছিল শক্তিশালী সরবরাহ চেইন, যা দ্রুত বাজারে পণ্য পাঠাতে সাহায্য করছে।

বস্টনভিত্তিক কোম্পানি জোন্স অ্যান্ড ভাইনিং ২০১১ সালে ভিয়েতনামে কারখানা গড়ে। এখন তারা বছরে পাঁচ লাখ জুতা ঢালাই (লাস্ট), দুই কোটি ইনসোল ও ১২ কোটি ফুটবেড তৈরি করছে। এর ৭০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় কাছাকাছি কারখানাগুলোতে।


স্থানীয় কর্মীদের গল্প

ভিয়েতনামের ফ্যাক্টরিগুলো শুধু অর্থনীতিকেও নয়, স্থানীয় জীবনের ছবিও পাল্টে দিয়েছে। ফাম কিউ দিয়েম নামের এক নারী ১৯৯৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে জুতা কারখানায় যোগ দেন। আগে তিনি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পরিবারের জন্য ধান ও ডাল চাষ করতে। প্রায় দুই দশক কাজ করে তিনি ও তাঁর বোনেরা জমি কিনে বাড়ি বানান। দিয়েমের ভাষায়, “এটা আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে।”


ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের প্রাথমিক চুক্তি হলেও এখনো অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। বিশেষ করে চীনে উৎপাদিত পণ্য ভিয়েতনাম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এলে সেটির ওপর শুল্ক কত হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যদিও ভিয়েতনামের জুতা শিল্পের ওপর চীনের নির্ভরশীলতা কম, কিছু কাঁচামাল এখনো চীন থেকে আসে।

শহরের চারপাশে যেসব স্থানে আগে ধানক্ষেত ছিল, সেখানে এখন দেখা যায় কারখানা, ট্রাক ও শিপিং কনটেইনার। এই পরিবর্তনই বলছে, ভিয়েতনাম এখন বিশ্বের নতুন স্নিকার কারখানার পরিণত হয়েছে।