বন্যা ও ভূমি-ধসের প্রভাব
কাশ্মীরের পুলওয়ামার একর মাত্রার আপেল বাগানে হেঁটে যাচ্ছিলেন কৃষক মোহাম্মদ আশরাফ। মাটিতে বৃষ্টির পানি এখনো স্যাঁতসেঁতে। প্রতিটি গাছের নিচে পড়ে থাকা পচে যাওয়া আপেল দেখে তিনি হতাশ। আগস্টের প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমি-ধস একদিকে ফসল ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে রাজ্যকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করা মহাসড়কের ৩০০ মিটার অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আশরাফ তাঁর ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি এবং ৮০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়েছে।
পরিবহন সংকটে ক্ষতি
আগস্টের শেষদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ মহাসড়ক বন্ধ ছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচলেও সীমাবদ্ধতা ছিল। এ কারণে ট্রাকে বোঝাই করা বাক্সভর্তি আপেল আটকে পড়ে এবং পচতে শুরু করে। যেসব আপেল তখনো গাছে ছিল, সেগুলো তোলা হয়নি।
কাশ্মীর থেকে ভারতের বাজারে বছরে দুই মিলিয়ন টনেরও বেশি আপেল সরবরাহ হয়। এ অঞ্চল একাই দেশের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশের বেশি পূরণ করে। কুল্লু-ডেলিসিয়াস ও রেড-ডেলিসিয়াস প্রজাতি সেপ্টেম্বর মাসে তোলা হয়। আপেল কাশ্মীরের অর্থনীতির ১০ শতাংশ জোগান দেয় এবং সাত মিলিয়ন মানুষের জীবিকা এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু রেফ্রিজারেটরবিহীন ট্রাকে তুললে আপেল মাত্র দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়, না হলে পচে যায়।
কাশ্মীর ভ্যালি ফ্রুট গ্রোয়ার্স অ্যান্ড ডিলার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির আহমদ বশির জানান, এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২২৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে, যা আরও বাড়ছে।
কৃষকের হতাশা
দুই মাস আগে আশরাফ আশাবাদী ছিলেন। এক একর জমির ফসলে তিনি প্রায় ৪,৬০০ ডলার লাভের আশা করেছিলেন। কিন্তু আগস্টের অকাল ও প্রবল বর্ষণে কিছু ফসল নষ্ট হয়। বাকি ফসল বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ খবর আসে মহাসড়ক বন্ধ, তখনই তাঁর আশা ভেঙে যায়। তিনি প্রশ্ন তুললেন, “তোলার পর এসব আপেল পাঠাব কোথায়?” প্রতিদিন রাস্তা খোলার অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে তাঁর আরও বেশি ফসল মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
রাস্তার সংকট ও ট্রাকের জট
পাহাড় কেটে তৈরি মহাসড়ক সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ। একপাশে খাড়া পাহাড়, অন্যপাশে গভীর খাদ। “সামনে অন্ধ বাঁক, সাবধানে চালান”– এমন সাইনবোর্ড ঝুঁকির সাক্ষী। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করলে মেরামত ত্বরান্বিত হয়। ভারী ট্রাক চলাচল শুরু হলেও একদিনের মধ্যেই শত শত ট্রাক কিলোমিটারজুড়ে আটকে পড়ে।
কাজিগুন্ড এলাকায় শাবির আহমেদ মীরের ১০-টায়ারের ট্রাকে ১,৫০০ বাক্স আপেল বোঝাই ছিল। প্রতিটি বাক্সে ১৮ কেজি করে আপেল। কিন্তু যাত্রার একদিন পরও তিনি বেশি দূর যেতে পারেননি। আশপাশের রাস্তায় ফেলে দেওয়া পচা আপেলের স্তূপ থেকে তীব্র গন্ধ ছড়াচ্ছিল। সাধারণত রাজস্থান পৌঁছাতে তাঁর ৩৬ ঘণ্টা লাগে, কিন্তু এ যাত্রায় তিনি শুরুতেই আটকে পড়েন।
রেলপথে সীমিত সহায়তা
১১ সেপ্টেম্বর থেকে রেলপথে আপেল পরিবহনের ব্যবস্থা শুরু হয়। কিন্তু বশির আহমদ বশির বলেন, মাত্র দুটি কার্গো-বগি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রায় ৫০ ট্রাকের সমান। অথচ প্রতিদিন কাশ্মীর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১,৫০০ ট্রাক আপেল পাঠানো হয়।
ঋণের বোঝা
মোহাম্মদ আশরাফ এ বছর সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের জন্য ৬০০ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন। এখন শুধু সেই ঋণ শোধ করাই সম্ভব নয়, বরং আগামী মৌসুমে আবারও নতুন ঋণ নিতে হবে। এ অবস্থায় তাঁর ও হাজারো কৃষকের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।