সময়মতো না চলা ট্রেন: জাতীয় হতাশা
একসময় জার্মান ট্রেন বিশ্বে সময়নিষ্ঠার জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। সরকারি মালিকানাধীন রেল সংস্থা ডয়চে বান (Deutsche Bahn) নিয়ে জার্মানরা প্রতিদিনই অভিযোগ করছে। ২০২৪ সালে মাত্র ৬০ শতাংশ দূরপাল্লার ট্রেন সময়মতো পৌঁছেছে, যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানগুলোর একটি। জাতীয় নিরীক্ষকরা সংস্থাটিকে “স্থায়ী ও গভীর সংকটে” বলে আখ্যা দিয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রেলের প্রতি আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে।
নতুন কৌশল: আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
২১ সেপ্টেম্বর নতুন কৌশল ঘোষণা করে পরিবহনমন্ত্রী প্যাট্রিক শ্নাইডার সতর্ক করেন যে রেলব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবে দেখা “অত্যন্ত বিপজ্জনক”। তিনি আগের অযৌক্তিক লক্ষ্য কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ ট্রেন সময়মতো চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি স্টেশন ও ট্রেন সংস্কার, ডয়চে বান-এর অবকাঠামো বিভাগ আলাদা করা, এবং নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ঘোষণা দেন।
নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এভেলিন পল্লা, যিনি প্রতিষ্ঠানের ভেতরের হলেও ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অস্ট্রিয়ার সফল রেল ব্যবস্থায়। আঞ্চলিক ট্রেন বিভাগকে লাভজনক করার অভিজ্ঞতা থাকায় অনেকের তার প্রতি আস্থা রয়েছে। তবু ঋণে জর্জরিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ডয়চে বানকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানো সহজ হবে না।
ঋণ, ভাড়া ও যাত্রী সংকট
বছরের পর বছর পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে ক্ষমতা যাত্রী বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। সব অপারেটরের কাছ থেকে নেওয়া ‘ট্রাসেনপ্রাইস’ (ট্র্যাক ব্যবহারের টোল) অনেক বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘপাল্লার সেবা কমে যাওয়া ও ভাড়া বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, ডয়চে বান-এর মালবাহী বিভাগকে আগামী বছর থেকেই মুনাফা করতে হবে। অথচ আগামী ১২ বছরে ৪০টি বড় রুট সংস্কারের পরিকল্পনা থাকায় অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ২ লাখ ১১ হাজার কর্মীর মনোবল ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বার্লিন প্রযুক্তি ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান বেটগার মনে করেন, তাৎক্ষণিকভাবে দুটি পদক্ষেপ জরুরি—যেসব বড় শহরে রেলপথের ক্ষমতা নেই, সেখানকার কিছু সেবা কমানো এবং ‘ট্রাসেনপ্রাইস’ নিয়ন্ত্রণ আনা। দীর্ঘমেয়াদে তিনি বিকেন্দ্রীকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্থায়ী বাজেট পরিকল্পনা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন, যেমন অস্ট্রিয়ায় করা হয়।
তার মতে, বোতলগলা অবস্থা ও শ্রমিক সংকটের কারণে সাম্প্রতিক বিনিয়োগ অনেকটাই মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। এখনো ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর নতুন জলবায়ু ও অবকাঠামো তহবিল থেকে অর্থ প্রবাহিত হবে। তাই পরিবহনমন্ত্রী শ্নাইডার ও নতুন প্রধান নির্বাহী পল্লাকে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে, নাহলে পুরো উদ্যোগই ভেস্তে যেতে পারে।