এক্সপো ঐতিহ্যের অংশ
এক্সপোতে প্যাভিলিয়ন ব্যাজ বা পিন বিনিময় বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। চলমান ২০২৫ ওসাকা-কানসাই এক্সপোতেও এই রীতি অব্যাহত রয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর স্টাফরা ব্যাজ বিনিময়ের মাধ্যমে শুধু আনন্দই পাচ্ছেন না, বরং তৈরি করছেন আজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতি।
কমনস-সি মঞ্চে বিনিময় অনুষ্ঠান
গত ২৪ আগস্ট কমনস-সি প্যাভিলিয়নের ইনডোর প্লাজায় একটি ব্যাজ বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বহু দেশের এক্সপো স্টাফরা ব্যাজ সাজিয়ে টেবিলে রাখেন এবং আলোচনার মাধ্যমে বিনিময় করেন।
ইন্দোনেশিয়া প্যাভিলিয়নের ২৮ বছর বয়সী এক স্টাফ তাঁর দেশের জাতীয় প্রতীকী পাখির ব্যাজ বিনিময় করেন মালয়েশিয়া প্যাভিলিয়নের এক কর্মীর সঙ্গে। তিনি পান জর্ডান প্যাভিলিয়নের অফিসিয়াল চরিত্রের ব্যাজ। ব্যাজ বিনিময়ের পর তাঁরা করমর্দন করেন। ইন্দোনেশিয়ার ওই স্টাফ বলেন, ‘জর্ডানের ব্যাজটা জনপ্রিয় কারণ দেখতে খুব সুন্দর। এটা পেয়ে আমি খুশি। ব্যাজ বিনিময়ের মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে আলাপ হয় এবং কাজের ফাঁকে এটা আনন্দ দেয়।’
এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সান মারিনো (San Marino) প্যাভিলিয়ন। এটি ছিল এক্সপো শুরুর পর থেকে অষ্টমবারের মতো এমন আয়োজন। সাধারণত তারা অনুষ্ঠানটির তারিখ আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
স্টাফদের আইডি কার্ড স্ট্র্যাপে ব্যাজ
অনেক প্যাভিলিয়ন তাদের স্টাফদের জন্য সীমিত সংস্করণের ব্যাজ দেয়, যা বিক্রির জন্য নয়। নকশায় থাকে অফিসিয়াল মাসকট বা প্যাভিলিয়নের লোগো। কিছু ব্যাজ একেবারেই বিরল, কারণ এগুলো একজন স্টাফ মাত্র একটি পান।
স্টাফরা এই ব্যাজ অন্য প্যাভিলিয়নের সহকর্মীদের সঙ্গে বিনিময় করে আইডি কার্ড স্ট্র্যাপে গেঁথে রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্যাভিলিয়নের ২৪ বছর বয়সী জর্জিয়া জুট্জ জানালেন, তিনি ব্যাজ বিনিময়ের বিষয়টি শিখেছেন ২০২০ সালের দুবাই এক্সপোর স্টাফদের কাছ থেকে। তিনি নিজের অঙ্গরাজ্য মিনেসোটার ব্যাজ নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ব্যাজ বিনিময়ের মাধ্যমে আলাপচারিতা শুরু হয় এবং বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি কয়েকবার একসঙ্গে কারাওকে অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। তিনি মনে করেন, এসব ব্যাজ ভবিষ্যতে তাঁর সন্তান-নাতি-নাতনিদের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে।
অনেকে মজা করে বলেন, পরিচয়ের সময় কেউ কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে বরং ব্যাজের দিকেই বেশি চোখ রাখেন।
ওসাকার সুমিনোয়ে এলাকার ৬৭ বছর বয়সী হিদেও ফুজিই জানালেন, তিনি ১৯৭০ সালের এক্সপো থেকে শুরু করে প্রায় সব এক্সপোতেই গেছেন। তাঁর মতে, ব্যাজ বিনিময় বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পায় ২০০৫ সালের আইচি এক্সপো থেকে। সেই সময় বুকের সঙ্গে লাগানো আইডির বদলে গলায় ঝোলানো ল্যানিয়ার্ড ব্যবহার শুরু হয়, যা ব্যাজ লাগানোর সুবিধা তৈরি করে। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক ব্যাজ থাকাটা যেন অনেক পদক থাকার মতো। আর বিনিময়ের মজাই স্টাফদের মন জয় করে।’
দর্শকদের অংশগ্রহণ
শুধু স্টাফ নয়, দর্শকরাও ব্যাজ বিনিময়ে অংশ নেন। অনেকেই প্যাভিলিয়ন থেকে কেনা ব্যাজ সংগ্রহ করে রাখেন এবং পরে বিনিময় করেন।
যেসব ব্যাজ খুব সীমিত সংখ্যায় বিক্রি হয় বা দীর্ঘ সময় লাইন ধরে দাঁড়ানোর পর পাওয়া যায়, সেগুলো বেশি জনপ্রিয়।
ওসাকার তন্দাবায়াশি এলাকার কুমিকো নিশিকাতা (৪৫) জানান, তিনি এক্সপো শুরুর পর থেকে ব্যাজ কিনছেন। তাঁর ইচ্ছা, সন্তানদের এভাবে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেওয়া।
তাঁর ৯ বছরের মেয়ে রুকা আর ৫ বছরের ছেলে রিউসেই ব্যাজ বিনিময়ের সময় ইংরেজিতে ‘চেঞ্জ’ বলে ডাকেন। রিউসেই বলে, ‘যখন পছন্দের ব্যাজ পাই, তখন খুব ভালো লাগে।