ভারতের ইরানি বন্দর উন্নয়ন পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের চাপে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে বন্দরটি ভারতের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত হলেও ওয়াশিংটনের চাপ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।
চাবাহার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব
ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ওমান সাগরের তীরে অবস্থিত চাবাহার বন্দর দুটি অংশ নিয়ে গঠিত—শহীদ কালান্তারি ও শহীদ বেহেশতি। এটি ইরানের একমাত্র সমুদ্রপথ যা ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত এবং আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পরিবহন নেটওয়ার্ক ভারত, রাশিয়া ও ইরানকে সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে যুক্ত করে।
ভারত এই বন্দরের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। বিশেষ করে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এটি বিকল্প করিডর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পাকিস্তানের স্থলপথ নির্ভরতা কমায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ছাড় প্রত্যাহার
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বন্দরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার অনুমতি দিয়েছিল, যাতে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা সহজ হয়। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এই ছাড় প্রত্যাহার করেছে।
ওয়াশিংটনের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঠেকাতে “সর্বোচ্চ চাপ” নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে সোমবার থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে চাবাহার বন্দরে জড়িত কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানও ইরান ফ্রিডম অ্যান্ড কাউন্টার-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট (IFCA)-এর আওতায় পড়তে পারে।
ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ভারতের বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন বিলম্বিত হতে পারে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ভারতকে হয়তো আবারও পাকিস্তানের স্থলপথ ব্যবহার করতে বাধ্য হতে হবে, যা তাদের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী।
চাবাহার বন্দর শুধু একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প নয়, বরং ভারতের বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলের একটি স্তম্ভ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা এই উদ্যোগকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।