বিশ্বায়ন থামবে না, তবে অস্থিরতা বাড়ছে
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (UNGA) ফাঁকে নিউইয়র্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বিশ্বায়ন থেমে যাবে না। দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাবে, তবে এর ধরন ও মান অনেকখানি বদলে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নতুন করে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বহুধ্রুববিশ্বের পথে অগ্রসরতা
জয়শঙ্কর যুক্তি দেন, বিশ্ব দ্রুত বহুধ্রুববিশ্বের দিকে যাচ্ছে। দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন অংশীদার খুঁজছে। তবে এই বহুধ্রুববিশ্ব কেবল জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করেই গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি
তিনি সতর্ক করেন যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি দ্রুত ও অস্থিতিশীলভাবে বদলাচ্ছে। এর ফলে দেশগুলো উদ্বেগে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়েও এখন ঝুঁকি বেড়েছে। সরবরাহকারী কিংবা সংযোগের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার মতো বাজারের ওপর নির্ভরশীলতাও এখন উদ্বেগের বিষয়। তাঁর মতে, প্রায় পুরো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলই এখন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে গ্লোবাল সাউথ পর্যন্ত সবাই নতুন অংশীদারিত্ব খুঁজছে।
সুযোগের দিকও রয়েছে
তবে জয়শঙ্কর মনে করেন, বর্তমানে বাণিজ্য করা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সহজ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি ও অংশীদারিত্ব তৈরি হবে। তাঁর ভাষায়, ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে মতভেদ থাকলেও আগামী দিনে বৈশ্বিক শ্রমশক্তি গড়ে উঠবেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বিধিনিষেধ
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনে ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করেছে, যার ৭০ শতাংশই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি রাশিয়ার তেল কেনায় ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আরোপিত শুল্ক ভারতের জন্য দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
জাতিসংঘে কূটনৈতিক তৎপরতা
শনিবার জাতিসংঘে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার সমালোচনার পর জয়শঙ্কর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আত্তাফ ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যেখানে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। জাতীয় ভাষণে জয়শঙ্কর গাজা সংকটের অবসানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ভারতের সমর্থন জানান।
ইউরোপ ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দিকে নজর
নিউইয়র্ক সফরে জয়শঙ্কর ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দেন। তিনি ব্রিকস ও জি-২০-এর বৈঠকে অংশ নেন, সিকা (SICA), সিলাক (CELAC) এবং ফিপিক (FIPIC) ফোরামের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
সারাংশে, জয়শঙ্করের বার্তা হলো—বিশ্বায়ন থামবে না, বরং নতুন চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবিলা করে এক নতুন বৈশ্বিক শ্রমশক্তির উত্থান ঘটবে।