প্রাথমিক ধাক্কা
আমি সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া একজন ব্যক্তি। তারপরও আমি হামে আক্রান্ত হয়েছি। এটি ছিল এ বছর অটোয়ায় শনাক্ত হওয়া পঞ্চম কেস। শুরুটা হয়েছিল এক চোখের উপরে ছোট লাল দাগ দিয়ে। আগস্টের এক শনিবার সকালে আমি প্রচণ্ড জ্বরে জেগে উঠি। পরদিন আমার পুরো শরীরে ব্যথাযুক্ত, চুলকানি-যুক্ত ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ে—মাথা থেকে পা পর্যন্ত। এমনকি হাতের তালুতেও। ত্বকের ব্যথা এতটাই ছিল যে আমি চাদরের ওপর নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকতাম কিছুটা আরামের জন্য। জ্বর, কাঁপুনি, কাশি আর মাথাব্যথা আমাকে ভোগাচ্ছিল।
হাসপাতালে যাওয়ার অভিজ্ঞতা
সোমবার আমি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। অটোয়ার একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর এক ডাক্তার আমাকে প্রশ্ন করলেন। কোনো ওষুধ খাচ্ছি কি না, সাম্প্রতিক ভ্রমণ করেছি কি না। আমি জানালাম, জুলাই মাসে আলবার্টায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। ডাক্তার থমকে গেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি হাম আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এসেছিলাম? আমি বললাম, না। তাছাড়া আমি সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফল জানাল, আমি হামে আক্রান্ত।
টিকা নেওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ
৩১ বছর বয়সে সুস্থ দেহে এ সংবাদ ছিল হতবাক করার মতো। পরে জানতে পারি, একজিমার জন্য নেওয়া ওষুধ হয়তো আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়েছিল। যদিও এমন ঘটনা বিরল, কিন্তু টিকাদানের হার কমে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। হাম প্রতিরোধে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা সম্মিলিত প্রতিরোধশক্তি জরুরি, যেখানে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষকে টিকা নিতে হয়। কম মানুষ টিকা নিলে ঝুঁকিতে পড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ব্যক্তিরা।

কানাডার বাস্তব চিত্র
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫,০০০ হাম কেস শনাক্ত হয়েছে। অথচ ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ১১টি। আমার রোগ শনাক্তের পর অটোয়া পাবলিক হেলথ দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করে, আমি কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছিলাম তা জানতে। আলবার্টায় সক্রিয় প্রাদুর্ভাব ছিল, সেখানেই হয়তো সংক্রমণ ঘটে। এ ছাড়া তারা খুঁজে বের করেছিল আমি সংক্রমণকালীন সময় কোথায় কোথায় গিয়েছি।
হাম কতটা ভয়াবহ
হাম অত্যন্ত সংক্রামক। এটি শরীরে ২১ দিন পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে সংক্রমণ ছড়ায় ফুসকুড়ি ওঠার চার দিন আগে থেকে এবং চার দিন পরে পর্যন্ত। সংক্রমিত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে বা আক্রান্ত পৃষ্ঠে ছোওয়া লাগলে ভাইরাস ছড়াতে পারে। হাম নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কে প্রদাহ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, এমনকি মৃত্যু ঘটাতে পারে।
টিকার কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা
এ বছর কানাডায় শনাক্ত কেসগুলোর মাত্র ৭ শতাংশ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে হয়েছে। কারণ শিশু বয়সে দেওয়া এমএমআর (হাম, মামস, রুবেলা) টিকার দুটি ডোজ প্রায় শতভাগ সুরক্ষা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ‘সেকেন্ডারি ভ্যাকসিন ফেলিওর’ ঘটে, যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ভাইরাসের প্রাকৃতিক সংস্পর্শ না পেলে টিকার প্রতিরোধশক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
ইমিউনোস্যাপ্রেসিভ ওষুধ বা নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি ভিত্তিক ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে। আমিও এমন ওষুধ নিচ্ছিলাম, যা হয়তো আমার শরীরকে হাম সংক্রমণের প্রতি দুর্বল করে তোলে।

সুস্থ হওয়ার পর উপলব্ধি
এক মাসের বেশি সময় কেটে গেছে, এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। ত্বক এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি, তবে কোনো দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা থাকার কথা নয়। এখন আমি টিকাদানকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখি। ফ্লু, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে আমি বেশি সচেতন হয়েছি। যদিও আমার ক্ষেত্রে টিকার প্রতিরোধ ভেঙে গিয়েছিল, তবুও টিকা নেওয়া আমাকে গুরুতর জটিলতা থেকে রক্ষা করেছে।
ভবিষ্যতের শিক্ষা
এমএমআর টিকার আলাদা কোনো বুস্টার নেই, কারণ প্রথম দুই ডোজ যথেষ্ট কার্যকর ধরা হয়। তবে যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যারা ইমিউনোস্যাপ্রেসিভ ওষুধ নেন, তাদের এই টিকা দেওয়া হয় না, কারণ এটি জীবন্ত ভাইরাসভিত্তিক টিকা। তাই বড় পরিসরে জনগণের টিকাদান জরুরি, যাতে প্রাদুর্ভাব না ঘটে এবং যারা টিকা নিতে পারেন না, তারাও সুরক্ষিত থাকেন।
আমার অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, টিকা নেওয়া শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য নয়, বরং আশেপাশের দুর্বল মানুষদের বাঁচানোর জন্যও জরুরি। কিন্তু আমরা যেন ধীরে ধীরে সেই বিষয়টি ভুলে যাচ্ছি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















