০২:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
এই সপ্তাহে কী দেখবেন–শুনবেন: বিগেলোর থ্রিলার, স্টিলারের পারিবারিক ডক, কারলাইল–লোভাটো ব্রডওয়েতে ‘রাগটাইম’ মঞ্চায়ন: শক্তিশালী সুর ও আবেগের পরিপূরক স্মৃতি দ্রুত মলিন হয়ে যায় কিন্তু ফটোগ্রাফি মুহূর্তটিকে থামিয়ে দিতে পারে এসএনএলে সাব্রিনা কারপেন্টার: ইমেজ, রসিকতা আর ভাইরাল কৌশল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: বিশ্বে উন্নতির সুযোগ, সতর্কতার সাথে পরিচালনা জরুরি – প্রেসিডেন্ট থারমান বালি পাচার নিয়ে তল্লাশি ইডি-র, ভোটের আগে সক্রিয়তার অভিযোগ যেখানে ভয়ই নিয়ম—করাচি চিড়িয়াখানার অদৃশ্য কর্মীদের গল্প -পঞ্চম পর্ব ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতার মরদেহ উদ্ধার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে সোমবার থেকে আমরণ অনশন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪২)

যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেন: কী অপেক্ষা করছে সামনে?

যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা

কিয়েভে এক সম্মেলনে আমেরিকার বিশেষ দূত কিথ কেলগ বলেন, “আমরা যুদ্ধের শেষের খুব কাছাকাছি।” রাশিয়া যখন ডনবাস অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়ছে, তখন দুই দেশই সামরিক সীমায় পৌঁছে গেছে। উভয় দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। পালিয়ে যাওয়ার হারও বেশি। জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার ৫৮ শতাংশ মানুষ শর্তহীন যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে। একইভাবে ইউক্রেনের ৫৯ শতাংশ মানুষ আংশিক ভূখণ্ড হারালেও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তাই অনেকেই মনে করেন না যে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি হবে, বরং যুদ্ধের একটি বিরতি আসবে, যা ছয় মাস থেকে ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মূল প্রশ্ন: এরপর কী হবে?

এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে, যুদ্ধ থামলে ইউক্রেন কেমন হবে। এটি শুধু সীমারেখা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে আবার আক্রমণ ঠেকানো যায় এবং ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কতটা স্থিতিশীল হয়। ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ও বর্তমান লন্ডনে রাষ্ট্রদূত ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ শুধু সীমারেখা নয়, বরং সীমারেখার ভেতরে কী আছে এবং মানুষের মনের ভেতরে কী আছে।”

Preventing a Wider European Conflict | Council on Foreign Relations

পশ্চিম ও রাশিয়ার টানাপোড়েন

২০১৪ সালে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে মূলত দেশটিকে পশ্চিমা ব্লকে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন। পশ্চিমাদের কাছে ইউক্রেন ছিল নিজেদের প্রভাব প্রমাণের পরীক্ষা। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তখন লিখেছিলেন, ইউক্রেনকে টিকে থাকতে হলে পূর্ব কিংবা পশ্চিম কারও সঙ্গে পুরোপুরি না জুড়ে সেতুবন্ধন হতে হবে, যেমন ছিল ফিনল্যান্ড। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন সেই সেতু ভেঙে দেন।

কিসিঞ্জার পরে মত বদলে বলেন, যেহেতু পশ্চিমারা ইউক্রেনকে ভীষণ শক্তিশালী করেছে, তাই একে ন্যাটোর বাইরে রাখা বিপজ্জনক। তার মতে, উভয় পক্ষই যুদ্ধ শেষে অসন্তুষ্ট থাকবে, তাই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে রাখা ইউরোপের জন্য নিরাপদ হবে।

ইউক্রেনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

তবে দুই বছর পর বাস্তবতা ভিন্ন। ন্যাটো সদস্যপদ কার্যত অসম্ভব। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের দায়ভার ইউরোপের ওপর ছেড়ে দেন। ইতিহাসবিদ নিয়াল ফার্গুসন বলেন, “এখন এটি ইউরোপের যুদ্ধ।”

যদিও ইউরোপের অর্থনীতি রাশিয়ার দশগুণ, তবু যুদ্ধ জেতা নির্ভর করে অর্থনীতিকে সামরিক সক্ষমতায় রূপান্তরের ওপর। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডেক সিকর্স্কি বলেন, “আমরা সেই প্রক্রিয়ার কেবল শুরুতে আছি।”

OPINION - NATO's 76th anniversary: What's the future of the alliance?

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আশাও ক্ষীণ হচ্ছে। পোল্যান্ডে শুরুতে ৭৫ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের পক্ষে ছিল, এখন ৫৩ শতাংশের বিরোধী। একইভাবে ইউক্রেনের ভেতরেও মনোভাব পাল্টাচ্ছে। দীর্ঘ যুদ্ধ ইউক্রেনকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, এবং নিজেদেরকে এক নতুন ‘মধ্য শক্তি’ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে। অধিকাংশ ইউক্রেনীয় চান বাহ্যিক সেনা মোতায়েনের বদলে নিয়মিত অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা।

ইউক্রেনের সাংবাদিক ইউলিয়া মোস্তোভায়া বলেন, “আমাদের কারও সীমান্ত প্রহরী হওয়া উচিত নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘প্রজেক্ট ইউক্রেন’, কোনো ‘অ্যান্টি-রাশিয়া প্রজেক্ট’ নয়।”

গণতন্ত্র ও ঝুঁকি

লভিভের ইতিহাসবিদ ইয়ারোস্লাভ হ্রিৎসাক ব্যাখ্যা করেন, ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র নয়, বরং পরিস্থিতি-নির্ভর গণতন্ত্র চালিয়ে এসেছে। দুর্বল কেন্দ্র, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং জনগণের ঐক্য সংকটকালে কাজ করেছে। যুদ্ধের সময় এটি শক্তি, কিন্তু শান্তির সময় এটি দুর্বলতা হয়ে উঠতে পারে।

সবচেয়ে কার্যকর ইউনিটগুলো আধা-স্বাধীন সেনাদল, যাদের নিজস্ব অর্থ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক শক্তি আছে। যুদ্ধকালে তারা একতাবদ্ধ হলেও যুদ্ধ থামলে নিজেদের স্বার্থে বিভক্ত হতে পারে। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করে হতাশা, ভাষা ও পরিচয় নিয়ে বিরোধ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের প্রশ্ন, এসব ইউক্রেনকে নতুন অস্থিরতায় ফেলতে পারে। ইতিহাসবিদ হ্রিৎসাক বলেন, আসল সংস্কারের কঠিন কাজ এখনো বাকি।

জনপ্রিয় সংবাদ

এই সপ্তাহে কী দেখবেন–শুনবেন: বিগেলোর থ্রিলার, স্টিলারের পারিবারিক ডক, কারলাইল–লোভাটো

যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেন: কী অপেক্ষা করছে সামনে?

০৪:৩০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা

কিয়েভে এক সম্মেলনে আমেরিকার বিশেষ দূত কিথ কেলগ বলেন, “আমরা যুদ্ধের শেষের খুব কাছাকাছি।” রাশিয়া যখন ডনবাস অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়ছে, তখন দুই দেশই সামরিক সীমায় পৌঁছে গেছে। উভয় দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। পালিয়ে যাওয়ার হারও বেশি। জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার ৫৮ শতাংশ মানুষ শর্তহীন যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে। একইভাবে ইউক্রেনের ৫৯ শতাংশ মানুষ আংশিক ভূখণ্ড হারালেও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তাই অনেকেই মনে করেন না যে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি হবে, বরং যুদ্ধের একটি বিরতি আসবে, যা ছয় মাস থেকে ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মূল প্রশ্ন: এরপর কী হবে?

এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে, যুদ্ধ থামলে ইউক্রেন কেমন হবে। এটি শুধু সীমারেখা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে আবার আক্রমণ ঠেকানো যায় এবং ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কতটা স্থিতিশীল হয়। ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ও বর্তমান লন্ডনে রাষ্ট্রদূত ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ শুধু সীমারেখা নয়, বরং সীমারেখার ভেতরে কী আছে এবং মানুষের মনের ভেতরে কী আছে।”

Preventing a Wider European Conflict | Council on Foreign Relations

পশ্চিম ও রাশিয়ার টানাপোড়েন

২০১৪ সালে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে মূলত দেশটিকে পশ্চিমা ব্লকে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন। পশ্চিমাদের কাছে ইউক্রেন ছিল নিজেদের প্রভাব প্রমাণের পরীক্ষা। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তখন লিখেছিলেন, ইউক্রেনকে টিকে থাকতে হলে পূর্ব কিংবা পশ্চিম কারও সঙ্গে পুরোপুরি না জুড়ে সেতুবন্ধন হতে হবে, যেমন ছিল ফিনল্যান্ড। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন সেই সেতু ভেঙে দেন।

কিসিঞ্জার পরে মত বদলে বলেন, যেহেতু পশ্চিমারা ইউক্রেনকে ভীষণ শক্তিশালী করেছে, তাই একে ন্যাটোর বাইরে রাখা বিপজ্জনক। তার মতে, উভয় পক্ষই যুদ্ধ শেষে অসন্তুষ্ট থাকবে, তাই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে রাখা ইউরোপের জন্য নিরাপদ হবে।

ইউক্রেনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

তবে দুই বছর পর বাস্তবতা ভিন্ন। ন্যাটো সদস্যপদ কার্যত অসম্ভব। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের দায়ভার ইউরোপের ওপর ছেড়ে দেন। ইতিহাসবিদ নিয়াল ফার্গুসন বলেন, “এখন এটি ইউরোপের যুদ্ধ।”

যদিও ইউরোপের অর্থনীতি রাশিয়ার দশগুণ, তবু যুদ্ধ জেতা নির্ভর করে অর্থনীতিকে সামরিক সক্ষমতায় রূপান্তরের ওপর। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডেক সিকর্স্কি বলেন, “আমরা সেই প্রক্রিয়ার কেবল শুরুতে আছি।”

OPINION - NATO's 76th anniversary: What's the future of the alliance?

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আশাও ক্ষীণ হচ্ছে। পোল্যান্ডে শুরুতে ৭৫ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের পক্ষে ছিল, এখন ৫৩ শতাংশের বিরোধী। একইভাবে ইউক্রেনের ভেতরেও মনোভাব পাল্টাচ্ছে। দীর্ঘ যুদ্ধ ইউক্রেনকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, এবং নিজেদেরকে এক নতুন ‘মধ্য শক্তি’ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে। অধিকাংশ ইউক্রেনীয় চান বাহ্যিক সেনা মোতায়েনের বদলে নিয়মিত অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা।

ইউক্রেনের সাংবাদিক ইউলিয়া মোস্তোভায়া বলেন, “আমাদের কারও সীমান্ত প্রহরী হওয়া উচিত নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘প্রজেক্ট ইউক্রেন’, কোনো ‘অ্যান্টি-রাশিয়া প্রজেক্ট’ নয়।”

গণতন্ত্র ও ঝুঁকি

লভিভের ইতিহাসবিদ ইয়ারোস্লাভ হ্রিৎসাক ব্যাখ্যা করেন, ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র নয়, বরং পরিস্থিতি-নির্ভর গণতন্ত্র চালিয়ে এসেছে। দুর্বল কেন্দ্র, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং জনগণের ঐক্য সংকটকালে কাজ করেছে। যুদ্ধের সময় এটি শক্তি, কিন্তু শান্তির সময় এটি দুর্বলতা হয়ে উঠতে পারে।

সবচেয়ে কার্যকর ইউনিটগুলো আধা-স্বাধীন সেনাদল, যাদের নিজস্ব অর্থ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক শক্তি আছে। যুদ্ধকালে তারা একতাবদ্ধ হলেও যুদ্ধ থামলে নিজেদের স্বার্থে বিভক্ত হতে পারে। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করে হতাশা, ভাষা ও পরিচয় নিয়ে বিরোধ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের প্রশ্ন, এসব ইউক্রেনকে নতুন অস্থিরতায় ফেলতে পারে। ইতিহাসবিদ হ্রিৎসাক বলেন, আসল সংস্কারের কঠিন কাজ এখনো বাকি।