ওয়াকায়ামা প্রিফেকচারের এক শতবর্ষী নারী চিকিৎসক এখনও রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যের পাশে দাঁড়াতে তিনি টানা ৮০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন।
দীর্ঘ চিকিৎসক-জীবন
ডা. তেরু কাসামাতসু কাইনানের কাসামাতসু হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। ওয়াকায়ামা উপসাগরের ধারে অবস্থিত এই হাসপাতালে তিনি সাদা কোট পরে রোগীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন এবং মেডিকেল চার্ট পরীক্ষা করেন। তিনি রোগীদের রক্তচাপ, ওষুধের ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে খোঁজ নেন।
১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে প্রায় আট দশক ধরে তিনি স্থানীয় মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তার চিকিৎসার মূলমন্ত্র হলো—“রোগী যা বলতে চায়, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা।”
পরিবার ও আস্থা
বর্তমানে হাসপাতালের পরিচালক তার দ্বিতীয় ছেলে সাতোশি (৬৮) এবং নার্সিং বিভাগের প্রধান সাতোশির স্ত্রী হিতোমি (৬১)। দুজনেই তাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। সাতোশি বলেন, “তিনি এমন পরিবেশ তৈরি করেন যেখানে রোগীরা সহজে কথা বলতে পারেন।” হিতোমি বলেন, “তিনি ছোটখাটো বিষয়ও রোগীদের সঙ্গে ভাগ করেন, এতে রোগীদের মানসিক চাপ কমে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ দিকে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার চিকিৎসক নিবন্ধিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৯৮ বছর বা তার বেশি বয়সী চিকিৎসক ছিলেন মাত্র ৮৬ জন।
জীবনের শুরু ও পেশায় আসা
তেরু কাসামাতসু ১৯২৫ সালে ওয়াকায়ামার কিনোকাওয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তার বাবার পরামর্শে তিনি এমন একটি পেশা বেছে নেন যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। কঠোর অধ্যবসায়ের পর ১৯৪৮ সালে চিকিৎসক হন।
২৪ বছর বয়সে তিনি অর্থোপেডিক সার্জন শিগেরুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শিগেরু তার বাবার কাছ থেকে হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি স্বামীসহ চিকিৎসা শুরু করেন।
হাসপাতাল পরিচালনায় ব্যস্ততা
দুজন মিলে তিন সন্তান লালনপালনের পাশাপাশি হাসপাতাল চালাতেন। একদিনে কখনও ১২০ জন পর্যন্ত রোগী দেখেছেন তিনি। জরুরি রোগী আসলে রাতভর অস্ত্রোপচারও করতে হতো।
তিনি নিজেই রোগী দেখা, ওষুধ দেওয়া, এমনকি হিসাবরক্ষণ করতেন। ৩০ বছর বয়সে রোগীদের জন্য খাবার তৈরি করার প্রয়োজন হলে রান্নার লাইসেন্সও অর্জন করেন।
সুস্বাস্থ্যের রহস্য
ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও তিনি প্রাণবন্ত থেকেছেন। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য একসময় হাসপাতালে ভর্তি হলেও কাজ চালিয়ে গেছেন। তার মতে, দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার রহস্য হলো খাদ্যাভ্যাস।
তিনি বলেন, “পালং শাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি আর ঢেঁড়সের মতো শাকসবজি বেশি খেতে হবে। এগুলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।”
সক্রিয় জীবনযাপন
শিগেরু ২০১২ সালে ৯১ বছর বয়সে মারা যান। বর্তমানে ১০০ বছর বয়সী তেরু নিজের বাড়িতে একাই থাকেন, যা হাসপাতালের পাশেই। তিনি এখনও লাঠি ছাড়াই হাঁটেন।
প্রতিদিন সংখ্যাভিত্তিক ধাঁধা সমাধান করেন যাতে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ হয়। প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা এ কাজে ব্যয় করেন।
তার শখ পিয়ানো বাজানো। স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি ৭০ বছর বয়সে পিয়ানো শেখা শুরু করেন। এখনও সাপ্তাহিক ক্লাস নেন, Moon River থেকে শুরু করে বেটোভেনের Für Elise বাজাতে পারেন। তরুণদের সঙ্গে মঞ্চেও পরিবেশন করেছেন তিনি।
এখনও অবসরের কথা ভাবেননি
চিকিৎসক হিসেবে নতুন জ্ঞান অর্জনেও তিনি সচেষ্ট। সময় পেলেই চিকিৎসাবিষয়ক প্রবন্ধ পড়েন। অবসর নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
তিনি বলেন, “আমি একদম অসুস্থ বোধ করি না।”