১১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়: সিনেটে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল উপস্থাপন প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গানের জগতে ফিরে আসা: ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ ডেসি ভার্সন নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষ পুলিশকে এখনই দায়িত্বশীল হতে হবে ১৫ জেলায় নতুন ডিসি ২০২৯-এ ফিরছে অ্যানিমেটেড হিট ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’ ‘টাইটানিক’-এর নেপথ্যের গল্প: চলচ্চিত্র প্রযোজকের স্মৃতিচারণ অভিষেক শর্মার রেকর্ড গড়া ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয় ভারতের জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময়

সীমাহীন দৌড়ের পথিক

শিশুদের খেলার মাঠ থেকে শুরু করে ফিটনেস সচেতন প্রাপ্তবয়স্ক—দৌড়ানোর আনন্দ সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু মার্কিন আল্ট্রা-রানার হান্টার লাইনেরজার ভিন্নভাবে দৌড়কে দেখেছেন। তিনি কেবল ব্লকের চারপাশে দৌড়ান না কিংবা একটি ম্যারাথন শেষ করার মধ্যেই থেমে থাকেন না। তার লক্ষ্য হলো পুরো রাজ্য কিংবা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অতিক্রম করা এবং এর মধ্যেই নতুন রেকর্ড গড়া।

কলোরাডো জয়ের মহাযাত্রা

২০২৫ সালের জুলাইয়ে তিনি শুরু করেন জীবনের অন্যতম কঠিন অভিযান—৭৬০ মাইল দীর্ঘ দৌড় কলোরাডো অতিক্রম করে। এই পথে তাকে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৩ লাখ ফুট উচ্চতার ওঠানামা। দিনে প্রায় দুটি ম্যারাথন সমান দূরত্ব দৌড়াতে হয়েছে টানা দুই সপ্তাহ ধরে। বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি আর ভয়ংকর গরমের মাঝেও তিনি এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৮ দিনে পথ শেষ করে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে শেষ করার (FKT) দাবি করেছেন। তার ভাষায়, “এটা জীবনের সবচেয়ে পাগলাটে অভিযান—একসঙ্গে সেরা আর সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা।”

পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণা

লাইনেরজারের বাবার ছিল অ্যাডভেঞ্চার রেসিং-এর ঝোঁক—যেখানে দৌড়, সাইক্লিং ও ক্যানুইং মিলে তৈরি হতো বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা। ছোটবেলা থেকেই ছেলে বাবার প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হতো। ৭ বছর বয়সে বহু জোরাজুরির পর অবশেষে তাকে বাবার সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হয়।
পরে মায়ের প্রভাবে শুরু হয় আল্ট্রা-রান। মা একশ মাইল দৌড় শেষ করলে লাইনেরজারও অংশ নেন, যদিও প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ কষ্টকর। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় তার আজীবনের নেশা।

শারীরিক প্রস্তুতির বাইরেও মানসিক শক্তি

তিনি মনে করেন, ৭৬০ মাইলের জন্য আলাদা করে অনুশীলন প্রায় অসম্ভব। তার কৌশল ছিল প্রতিদিন গড়ে ৫০ মাইল দৌড়ানো এবং প্রথম কয়েক দিনকেই আসল প্রশিক্ষণ ধরা। এ ধরনের দীর্ঘ অভিযানে অভিজ্ঞতা এবং মানসিক দৃঢ়তাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
তার ভাষায়, “ফোসকা পড়ছে, পা ব্যথায় ভরা, কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ যে এখনও পা আছে। অনেকের তো সেটাও নেই।” এই কৃতজ্ঞতাবোধই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

অসুস্থতার মাঝেও জয়যাত্রা

অভিযানের এক সপ্তাহ আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও দৌড় থামাননি। শুরু থেকেই কাশি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ হৃৎস্পন্দনের সমস্যা ছিল। পুরো পথজুড়ে তাকে অসুস্থতার সঙ্গেই লড়তে হয়েছে। তবুও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে প্রতিটি মাইলপথে নতুন অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তার মতে, “প্রতিটি মাইল ছিল শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যে ভরা। কষ্টের মাঝেও দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে নিজেকে মনে করাতাম—এত সুন্দর পৃথিবীতে আছি, কৃতজ্ঞ থাকো।”

রেকর্ড নয়, প্রেরণা দেওয়াই আসল লক্ষ্য

লাইনেরজারের কাছে এখন রেকর্ড মানে কেবল অনুপ্রেরণার প্রতীক। তিনি বলেন, “ট্রফি কিংবা সনদ আমার লক্ষ্য নয়। পুরো অভিজ্ঞতাটাই সবচেয়ে মূল্যবান। রেকর্ড মানে হলো অন্যদের অনুপ্রাণিত করা, যেন তারা-ও নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে কিছু করতে পারে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়: সিনেটে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল উপস্থাপন

সীমাহীন দৌড়ের পথিক

১১:৪৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিশুদের খেলার মাঠ থেকে শুরু করে ফিটনেস সচেতন প্রাপ্তবয়স্ক—দৌড়ানোর আনন্দ সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু মার্কিন আল্ট্রা-রানার হান্টার লাইনেরজার ভিন্নভাবে দৌড়কে দেখেছেন। তিনি কেবল ব্লকের চারপাশে দৌড়ান না কিংবা একটি ম্যারাথন শেষ করার মধ্যেই থেমে থাকেন না। তার লক্ষ্য হলো পুরো রাজ্য কিংবা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অতিক্রম করা এবং এর মধ্যেই নতুন রেকর্ড গড়া।

কলোরাডো জয়ের মহাযাত্রা

২০২৫ সালের জুলাইয়ে তিনি শুরু করেন জীবনের অন্যতম কঠিন অভিযান—৭৬০ মাইল দীর্ঘ দৌড় কলোরাডো অতিক্রম করে। এই পথে তাকে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৩ লাখ ফুট উচ্চতার ওঠানামা। দিনে প্রায় দুটি ম্যারাথন সমান দূরত্ব দৌড়াতে হয়েছে টানা দুই সপ্তাহ ধরে। বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি আর ভয়ংকর গরমের মাঝেও তিনি এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৮ দিনে পথ শেষ করে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে শেষ করার (FKT) দাবি করেছেন। তার ভাষায়, “এটা জীবনের সবচেয়ে পাগলাটে অভিযান—একসঙ্গে সেরা আর সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা।”

পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণা

লাইনেরজারের বাবার ছিল অ্যাডভেঞ্চার রেসিং-এর ঝোঁক—যেখানে দৌড়, সাইক্লিং ও ক্যানুইং মিলে তৈরি হতো বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা। ছোটবেলা থেকেই ছেলে বাবার প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হতো। ৭ বছর বয়সে বহু জোরাজুরির পর অবশেষে তাকে বাবার সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হয়।
পরে মায়ের প্রভাবে শুরু হয় আল্ট্রা-রান। মা একশ মাইল দৌড় শেষ করলে লাইনেরজারও অংশ নেন, যদিও প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ কষ্টকর। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় তার আজীবনের নেশা।

শারীরিক প্রস্তুতির বাইরেও মানসিক শক্তি

তিনি মনে করেন, ৭৬০ মাইলের জন্য আলাদা করে অনুশীলন প্রায় অসম্ভব। তার কৌশল ছিল প্রতিদিন গড়ে ৫০ মাইল দৌড়ানো এবং প্রথম কয়েক দিনকেই আসল প্রশিক্ষণ ধরা। এ ধরনের দীর্ঘ অভিযানে অভিজ্ঞতা এবং মানসিক দৃঢ়তাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
তার ভাষায়, “ফোসকা পড়ছে, পা ব্যথায় ভরা, কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ যে এখনও পা আছে। অনেকের তো সেটাও নেই।” এই কৃতজ্ঞতাবোধই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

অসুস্থতার মাঝেও জয়যাত্রা

অভিযানের এক সপ্তাহ আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও দৌড় থামাননি। শুরু থেকেই কাশি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ হৃৎস্পন্দনের সমস্যা ছিল। পুরো পথজুড়ে তাকে অসুস্থতার সঙ্গেই লড়তে হয়েছে। তবুও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে প্রতিটি মাইলপথে নতুন অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তার মতে, “প্রতিটি মাইল ছিল শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যে ভরা। কষ্টের মাঝেও দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে নিজেকে মনে করাতাম—এত সুন্দর পৃথিবীতে আছি, কৃতজ্ঞ থাকো।”

রেকর্ড নয়, প্রেরণা দেওয়াই আসল লক্ষ্য

লাইনেরজারের কাছে এখন রেকর্ড মানে কেবল অনুপ্রেরণার প্রতীক। তিনি বলেন, “ট্রফি কিংবা সনদ আমার লক্ষ্য নয়। পুরো অভিজ্ঞতাটাই সবচেয়ে মূল্যবান। রেকর্ড মানে হলো অন্যদের অনুপ্রাণিত করা, যেন তারা-ও নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে কিছু করতে পারে।”