আত্মপ্রকাশ ও সঙ্গীতযাত্রা
নাইজেরিয়ার লাগোসে জন্ম নেওয়া টেমিলাডে ওপেনিইয়ি, যিনি ‘টেমস’ নামে পরিচিত, ছোটবেলা থেকেই গান লেখা শুরু করেন এবং নিজেই সঙ্গীত প্রযোজনার দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর নিজের কথায়, “আমার কাছে সত্যনিষ্ঠাই সবকিছু — সেটাই আমার আসল সত্তা, যেটার সঙ্গে আমি কখনো আপস করব না।”
বিশ্বমঞ্চে তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল নিউ ইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের হাফটাইম পারফর্ম্যান্স। লাখো দর্শকের সামনে পারফর্ম করলেও টেমস বলেন, “ওই মুহূর্তে থাকা আমার জন্য ছিল এক বিশাল সম্মান।”
এই পারফর্ম্যান্সের পর টেমস হয়ে ওঠেন বিশ্বজোড়া পরিচিত নাম — আফ্রিকার সঙ্গীতধারার এক নতুন সংজ্ঞা হিসেবে।
বাধা, ভয় এবং দৃঢ়তা
প্রথম দিকের দিনগুলো টেমসের জন্য ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। তিনি বলেন, “আমি নিরাপদ অনুভব করিনি, নিজেকে দৃশ্যমান মনে হয়নি। অনেকদিন কেউ আমাকে সমর্থনও করেনি।”
তবু এই কঠিন অভিজ্ঞতাগুলোই তাঁকে শক্তি দিয়েছে এগিয়ে যেতে।
২০২০ সালে উইজকিডের সঙ্গে তাঁর গাওয়া ‘Essence’ গানটি ইতিহাস গড়ে — প্রথমবারের মতো কোনো নাইজেরিয়ান গান Billboard Hot 100-এ স্থান পায়।
এরপর ২০২২ সালে তাঁর ‘Higher’ গানের অংশ ব্যবহার করা হয় Future ও Drake-এর ‘Wait for U’-তে, যা দ্রুতই চার্টের শীর্ষে পৌঁছে যায়।
নিজের সিঙ্গল ‘Free Mind’ আমেরিকান চার্টেও জায়গা করে নেয়, এবং তাঁর কণ্ঠ ও গীত Beyoncé ও Rihanna-র কাজেও স্থান পায়।
২০২৫ সালে তিনি ‘Love Me JeJe’ গানের জন্য গ্র্যামি জেতেন — নাইজেরিয়ান ক্লাসিককে আধুনিক রূপে তুলে ধরার জন্য।
তবে টেমস বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি মানুষ এটা পছন্দ করবে কি না। আমি শুধু নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছি। যদি সেটাই আমাকে শীর্ষে নিয়ে যায় — সেটাই আমার পুরস্কার।”
‘লিডিং ভাইব ইনিশিয়েটিভ’: নারীদের জন্য মঞ্চ
টেমস নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই শুরু করেছেন এক নতুন উদ্যোগ — ‘Leading Vibe Initiative (LVI)’।
এটি এক মেন্টরশিপ ও প্রশিক্ষণমূলক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তরুণী নারীরা সঙ্গীতজগতে প্রযোজক, ম্যানেজার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা শিল্পী হিসেবে নিজের স্থান গড়ে নিতে পারেন।
তিনি বলেন, “অসংখ্য মেধাবী নারী আছেন, কিন্তু তাদের দৃশ্যমানতা নেই। আমি চাই তারা যেন দেখা পায়, যেন তাদের কণ্ঠ শোনা যায়।”
লাগোসে শুরু হলেও এই উদ্যোগ সীমাবদ্ধ নয় — পরবর্তী ধাপ কেনিয়া, এবং লক্ষ্য পুরো আফ্রিকা জুড়ে এমন সুযোগ তৈরি করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু তরুণী শিল্পী ও প্রযোজক। টেমস বলেন, “এই প্রতিভার পরিমাণ দেখে আমি বিস্মিত। আমরা একসঙ্গে এক নতুন যাত্রা শুরু করছি।”
টেমস স্মরণ করেন, একসময় স্টুডিও থেকে স্টুডিও ঘুরে সহযোগী খুঁজতে হয়েছে, কিন্তু পুরুষশাসিত শিল্পজগতে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
“যখন আপনি নিজের পরিচয় নির্ধারণ করবেন না, অন্যরা সেটি করে দেবে,” তিনি বলেন।
এক আন্দোলনের মুখ
টেমস এখন কেবল একজন গায়িকা নন — তিনি এক আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর লক্ষ্য, আফ্রিকা ও এর বাইরের নারীদের জন্য বন্ধ দরজাগুলো খুলে দেওয়া।
তাঁর উদ্যোগ ও মনোভাব হয়তো তাঁর গানগুলোর থেকেও বেশি প্রভাব ফেলবে — কারণ টেমসের আসল উত্তরাধিকার হতে পারে সেই পথ, যা তিনি অন্যদের জন্য নির্মাণ করছেন।
#টেমস #নাইজেরিয়া #আফ্রিকার_সঙ্গীত #নারীর_অধিকার #LeadingVibeInitiative #GrammyWinner #AfricanMusic #সারাক্ষণরিপোর্ট