১২:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
ক্যাটসআই × 5 গাম: ‘ফাইনাল ড্রপ’-এ পপ কালচারের কামব্যাক কামড় আজ পার্থ থেকে ডব্লিউডব্লিউই ক্রাউন জুয়েল—দেখবেন কীভাবে গঙ্গামতি নির্ধারিত বন: কুয়াকাটার সবুজ ঢেউ ও হারিয়ে যাওয়া প্রাণের আর্তনাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৪) দিল্লিতে এ মৌসুমের প্রথম শীতল রাত নেমেছে- ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’: প্রচলিত ভোটব্যবস্থা শক্তিশালী করার আহ্বানে বিএনপি নেতারা বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২৫ ট্রাম্পের বয়স ৭৯ হলেও হৃদযন্ত্র ৬৫ বছরের মানুষের মতো, চিকিৎসকের প্রতিবেদন দ্রুত পদক্ষেপ ও সৌভাগ্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ড মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতি অর্ধেকে নেমেছে জাতীয় পার্টির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের হামলার অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প,শেহবাজ ও মুনিরের রহস্যময় বৈঠক

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত রেকো ডিক খনিতে রয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের স্বর্ণ ও তামার ভাণ্ডার। এই খনিকে ঘিরেই এখন নতুন করে সরব আন্তর্জাতিক রাজনীতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পাকিস্তান—তিন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন কৌশল মিলছে এক বিন্দুতে। ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ঘিরে এই রহস্যময় সম্পর্ক আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

রহস্যময় বৈঠক: ট্রাম্পশেহবাজ ও মুনির এক টেবিলে

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকটি ছিল সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক — কোনো গণমাধ্যম উপস্থিত ছিল না, এমনকি কোনো যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হয়নি। কেবল হোয়াইট হাউস প্রকাশিত কিছু ছবি থেকেই বৈঠকের খবর ফাঁস হয়।

এক ছবিতে দেখা যায়, ফিল্ড মার্শাল মুনির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি খনিজ নমুনার বাক্স দেখাচ্ছেন—যা থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, রেকো ডিক খনিই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

এর আগেও গত জুনে তারা একান্তে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হয়েছিলেন—যা ঘটে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার মাত্র এক মাস পর। প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের এই ঘনিষ্ঠতা কি শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য, নাকি খনিজ সম্পদকে ঘিরে গোপন অর্থনৈতিক চুক্তির অংশ?

Reco Dick: Pakistan faces $3 billion fine for failing to comply with the restraining order | Monthly Bolan Voice

রেকো ডিক খনি: পাকিস্তানের স্বর্ণ সম্ভাবনা

বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রেকো ডিক খনি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত তামা ও স্বর্ণভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই খনি কার্যকরভাবে চালু হলে জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজের এক বিশাল উৎস হতে পারে পাকিস্তান।

প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আগামী ৪০ বছরে দেশটির আয় প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

তবে ১৯৯৩ সাল থেকে নানা আন্তর্জাতিক কোম্পানি এই খনি চালুর চেষ্টা করলেও আইনি জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটি বারবার স্থবির হয়ে পড়ে।

নতুন অংশীদারিত্ব ও আন্তর্জাতিক আগ্রহ

বর্তমানে কানাডাভিত্তিক খনন কোম্পানি ব্যারিক গোল্ড (Barrick Gold) পাকিস্তানের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বেলুচিস্তান প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) ইতিমধ্যেই প্রকল্পের অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনও আগ্রহ দেখিয়েছে—মার্কিন উন্নয়ন–অর্থায়ন সংস্থাগুলো এককালীন এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ প্রদানের সম্ভাবনা যাচাই করছে। এই বিনিয়োগ পাকিস্তানের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Institute for Economics & Peace | Experts in Peace, Conflict and Risk

ভৌগোলিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সংশয়

যদিও প্রকল্পটি লাভজনক, তবে ঝুঁকিও কম নয়। রেকো ডিক খনি আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত—দুই প্রতিবেশীই রাজনৈতিকভাবে অস্থির। এর পাশাপাশি পূর্ব বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয় উপস্থিতি প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস–এর তথ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের প্রভাবে পাকিস্তান বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ—বুরকিনা ফাসোর পরেই।

পরিবহন ও রপ্তানি সমস্যা

খনি থেকে উত্তোলিত তামা–স্বর্ণের ঘনক কীভাবে রপ্তানি করা হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

পাকিস্তান ও ব্যারিক গোল্ডের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে যে, প্রকল্পটি যেন চীনের প্রভাবমুক্ত থাকে। এজন্য চীন–নির্মিত গওয়াদার বন্দরের পরিবর্তে করাচির দূরবর্তী বন্দরের ওপর নির্ভর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তবে রেকো ডিক থেকে করাচি পর্যন্ত প্রায় ১,৩৩০ কিলোমিটার রেলপথের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চীন একসময় এই রেলপথ আধুনিকায়নে ৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে আগ্রহ হারিয়েছে।

ফলে পাকিস্তান সরকার নিজেই ৩৯০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে—যদিও সেই অর্থের উৎস এখনও অনিশ্চিত।

নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন না ট্রাম্প | দৈনিক পূর্বতারা

পশ্চিমা বিকল্প পথ ও নতুন বন্দর পরিকল্পনা

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সরকারের জন্য অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনায় রয়েছে (এর পাশাপাশি খনির জন্য ৪১০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে)।

ব্রিটিশ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসের বৈঠকের আগে একটি ১.২ বিলিয়ন ডলারের নতুন বন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা

অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় আসে—গওয়াদার বন্দরের পাশেই, যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক আর্থিক সহায়তায়।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

চীনের অবস্থান ও সিপিইসিএর ভবিষ্যৎ

চীন–বিরোধী অবস্থান পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে।

বেইজিং এ নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও বাস্তবে তার চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার সীমিত।

Belt and Road Initiative

বছরের পর বছর ধরে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)–এর আওতায় চায়নাপাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক, বন্দর ও খনি নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ করেছে।

তবে বর্তমানে তারা “বড় প্রকল্পকেন্দ্রিক স্থিতিশীলতা–নীতি” থেকে সরে এসে “সিপিইসি–২.০” নামে নতুন ধারা চালু করেছে—যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জ্ঞান, স্থায়িত্ব ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে।

সময়ের সংকট ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

রেকো ডিক খনি উৎপাদনে আসবে ২০২৮ সালে, যা হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর।
বিশ্বব্যাপী খনিজ উন্মাদনা, আমেরিকা–পাকিস্তান সম্পর্কের উষ্ণতা ও বাণিজ্যিক সুযোগসন্ধানের এই মিলিত সময় এক জানালার মতো স্বল্পস্থায়ী।
যদি এখনই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হয়, তবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের এই সম্ভাবনা হয়তো মাটির নিচেই চাপা পড়ে থাকবে—সেই স্বর্ণের সঙ্গেই।

রেকো ডিক প্রকল্প কেবল একটি খনি নয়, বরং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু ভূরাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা—সব মিলিয়ে এটি এক উচ্চঝুঁকির বাজি।

যদি পাকিস্তান এই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়, তবে “স্বর্ণের দেশ” হওয়ার স্বপ্ন হয়তো প্রতিশ্রুতির খনিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

#পাকিস্তান #রেকো_ডিক #স্বর্ণখনি #যুক্তরাষ্ট্র #চীন #ট্রাম্প #বেলুচিস্তান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্যাটসআই × 5 গাম: ‘ফাইনাল ড্রপ’-এ পপ কালচারের কামব্যাক কামড়

ট্রাম্প,শেহবাজ ও মুনিরের রহস্যময় বৈঠক

০৫:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত রেকো ডিক খনিতে রয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের স্বর্ণ ও তামার ভাণ্ডার। এই খনিকে ঘিরেই এখন নতুন করে সরব আন্তর্জাতিক রাজনীতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পাকিস্তান—তিন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন কৌশল মিলছে এক বিন্দুতে। ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ঘিরে এই রহস্যময় সম্পর্ক আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

রহস্যময় বৈঠক: ট্রাম্পশেহবাজ ও মুনির এক টেবিলে

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকটি ছিল সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক — কোনো গণমাধ্যম উপস্থিত ছিল না, এমনকি কোনো যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হয়নি। কেবল হোয়াইট হাউস প্রকাশিত কিছু ছবি থেকেই বৈঠকের খবর ফাঁস হয়।

এক ছবিতে দেখা যায়, ফিল্ড মার্শাল মুনির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি খনিজ নমুনার বাক্স দেখাচ্ছেন—যা থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, রেকো ডিক খনিই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

এর আগেও গত জুনে তারা একান্তে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হয়েছিলেন—যা ঘটে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার মাত্র এক মাস পর। প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের এই ঘনিষ্ঠতা কি শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য, নাকি খনিজ সম্পদকে ঘিরে গোপন অর্থনৈতিক চুক্তির অংশ?

Reco Dick: Pakistan faces $3 billion fine for failing to comply with the restraining order | Monthly Bolan Voice

রেকো ডিক খনি: পাকিস্তানের স্বর্ণ সম্ভাবনা

বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রেকো ডিক খনি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত তামা ও স্বর্ণভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই খনি কার্যকরভাবে চালু হলে জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজের এক বিশাল উৎস হতে পারে পাকিস্তান।

প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আগামী ৪০ বছরে দেশটির আয় প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

তবে ১৯৯৩ সাল থেকে নানা আন্তর্জাতিক কোম্পানি এই খনি চালুর চেষ্টা করলেও আইনি জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটি বারবার স্থবির হয়ে পড়ে।

নতুন অংশীদারিত্ব ও আন্তর্জাতিক আগ্রহ

বর্তমানে কানাডাভিত্তিক খনন কোম্পানি ব্যারিক গোল্ড (Barrick Gold) পাকিস্তানের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বেলুচিস্তান প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) ইতিমধ্যেই প্রকল্পের অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনও আগ্রহ দেখিয়েছে—মার্কিন উন্নয়ন–অর্থায়ন সংস্থাগুলো এককালীন এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ প্রদানের সম্ভাবনা যাচাই করছে। এই বিনিয়োগ পাকিস্তানের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Institute for Economics & Peace | Experts in Peace, Conflict and Risk

ভৌগোলিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সংশয়

যদিও প্রকল্পটি লাভজনক, তবে ঝুঁকিও কম নয়। রেকো ডিক খনি আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত—দুই প্রতিবেশীই রাজনৈতিকভাবে অস্থির। এর পাশাপাশি পূর্ব বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয় উপস্থিতি প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস–এর তথ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের প্রভাবে পাকিস্তান বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ—বুরকিনা ফাসোর পরেই।

পরিবহন ও রপ্তানি সমস্যা

খনি থেকে উত্তোলিত তামা–স্বর্ণের ঘনক কীভাবে রপ্তানি করা হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

পাকিস্তান ও ব্যারিক গোল্ডের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে যে, প্রকল্পটি যেন চীনের প্রভাবমুক্ত থাকে। এজন্য চীন–নির্মিত গওয়াদার বন্দরের পরিবর্তে করাচির দূরবর্তী বন্দরের ওপর নির্ভর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তবে রেকো ডিক থেকে করাচি পর্যন্ত প্রায় ১,৩৩০ কিলোমিটার রেলপথের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চীন একসময় এই রেলপথ আধুনিকায়নে ৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে আগ্রহ হারিয়েছে।

ফলে পাকিস্তান সরকার নিজেই ৩৯০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে—যদিও সেই অর্থের উৎস এখনও অনিশ্চিত।

নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন না ট্রাম্প | দৈনিক পূর্বতারা

পশ্চিমা বিকল্প পথ ও নতুন বন্দর পরিকল্পনা

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সরকারের জন্য অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনায় রয়েছে (এর পাশাপাশি খনির জন্য ৪১০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে)।

ব্রিটিশ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসের বৈঠকের আগে একটি ১.২ বিলিয়ন ডলারের নতুন বন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা

অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় আসে—গওয়াদার বন্দরের পাশেই, যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক আর্থিক সহায়তায়।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

চীনের অবস্থান ও সিপিইসিএর ভবিষ্যৎ

চীন–বিরোধী অবস্থান পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে।

বেইজিং এ নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও বাস্তবে তার চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার সীমিত।

Belt and Road Initiative

বছরের পর বছর ধরে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)–এর আওতায় চায়নাপাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক, বন্দর ও খনি নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ করেছে।

তবে বর্তমানে তারা “বড় প্রকল্পকেন্দ্রিক স্থিতিশীলতা–নীতি” থেকে সরে এসে “সিপিইসি–২.০” নামে নতুন ধারা চালু করেছে—যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জ্ঞান, স্থায়িত্ব ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে।

সময়ের সংকট ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

রেকো ডিক খনি উৎপাদনে আসবে ২০২৮ সালে, যা হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর।
বিশ্বব্যাপী খনিজ উন্মাদনা, আমেরিকা–পাকিস্তান সম্পর্কের উষ্ণতা ও বাণিজ্যিক সুযোগসন্ধানের এই মিলিত সময় এক জানালার মতো স্বল্পস্থায়ী।
যদি এখনই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হয়, তবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের এই সম্ভাবনা হয়তো মাটির নিচেই চাপা পড়ে থাকবে—সেই স্বর্ণের সঙ্গেই।

রেকো ডিক প্রকল্প কেবল একটি খনি নয়, বরং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু ভূরাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা—সব মিলিয়ে এটি এক উচ্চঝুঁকির বাজি।

যদি পাকিস্তান এই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়, তবে “স্বর্ণের দেশ” হওয়ার স্বপ্ন হয়তো প্রতিশ্রুতির খনিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

#পাকিস্তান #রেকো_ডিক #স্বর্ণখনি #যুক্তরাষ্ট্র #চীন #ট্রাম্প #বেলুচিস্তান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট