০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের দিন-রাত অবস্থান: চলছে লাগাতার কর্ম বিরতি 

বেতনভিত্তিক ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিন-রাত “অবিরাম অবস্থান” কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের হামলার পর তারা সোমবার থেকে দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলে পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।

দাবিদাওয়ায় অটল শিক্ষকরা

বেতনভিত্তিক ২০ শতাংশ হাউস রেন্ট অ্যালাউন্সের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিন-রাত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

রবিবার দুপুরে পুলিশের হামলার পর তারা সোমবার থেকেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করার ঘোষণা দেন। আন্দোলনটি পরিচালনা করছে এমপিও ন্যাশনালাইজেশন এক্সপেকট্যান্ট অ্যালায়েন্স।

২৪ ঘণ্টা অবস্থানের ঘোষণা

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল দেলওয়ার হোসেন আজিজি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন,
“আমরা ২৪ ঘণ্টা এখানেই থাকব। সরকার যদি ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা ঘোষণা না দেয়, তাহলে শহীদ মিনার ছাড়ব না।”

তিনি আরও জানান, দেশের ৩০ হাজার স্কুলের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী সোমবার পূর্ণদিবসের ধর্মঘটে অংশ নেবেন।

শহীদ মিনারেই রাত কাটাবেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা - Bangla Affairs

“স্কুল খোলা থাকবে, তবে মাত্র দুই থেকে চারজন শিক্ষক উপস্থিত থাকবেন; বাকিরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হবেন,” যোগ করেন তিনি।

আটক শিক্ষকদের মুক্তির দাবি

আজিজি বলেন, “পুলিশ যেসব ছ’জন শিক্ষককে আটক করেছে, তাদের মুক্তির জন্যও আমরা কাজ করছি। আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকব না, আবার স্কুল বন্ধও করব না। তবে দায়িত্ব অবহেলা হবে না।”

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, দাবি পূরণ হলে শিক্ষকরা একই রাতেই শহীদ মিনার ত্যাগ করবেন।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও জলকামান নিক্ষেপ

রবিবার সকাল থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে পুলিশের নির্দেশে তারা শহীদ মিনারে চলে যান। তবে কিছু শিক্ষক প্রেসক্লাবের সামনেই থেকে যান।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ হতে বলে। তখন শিক্ষকরা “ফেইক! ফেইক!” বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর পুলিশ একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে সড়ক খালি করে দেয়।

অভিভাবকদের নিন্দা ও সরকারের প্রতি আহ্বান

দাবি আদায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ঘোষণা

‘প্যারেন্টস ইউনিটি ফোরাম’-এর সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু এক বিবৃতিতে বলেন,
“আমরা এমন এক বর্বর সমাজে বাস করছি যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নির্মাতা সম্মানিত শিক্ষকদের রাস্তায় পেটানো ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা আটক শিক্ষকদের অবিলম্বে মুক্তি চাই।”

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষার আগে শিক্ষার কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়।

আন্দোলনের পটভূমি

২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ায়। তবে শিক্ষকরা ৫ অক্টোবর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।

এরপর ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগের মাধ্যমে বাড়িভাড়া ভাতা ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় বেতন পাচ্ছেন, সঙ্গে রয়েছে ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা এবং ১,০০০ টাকা বাড়িভাড়া (যা সম্প্রতি ১,৫০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে)।

এছাড়া, উৎসব ভাতা আগে বছরে দু’বার মূল বেতনের ২৫ শতাংশ ছিল, যা চলতি বছরের মে মাসে ৫০ শতাংশে বাড়ানো হয়েছে।

 

#এমপিওশিক্ষক #অবস্থানকর্মসূচি #ভাতাবৃদ্ধিদাবি #শিক্ষকআন্দোলন #শহীদমিনার

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের দিন-রাত অবস্থান: চলছে লাগাতার কর্ম বিরতি 

১২:৩০:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বেতনভিত্তিক ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিন-রাত “অবিরাম অবস্থান” কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের হামলার পর তারা সোমবার থেকে দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলে পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।

দাবিদাওয়ায় অটল শিক্ষকরা

বেতনভিত্তিক ২০ শতাংশ হাউস রেন্ট অ্যালাউন্সের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিন-রাত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

রবিবার দুপুরে পুলিশের হামলার পর তারা সোমবার থেকেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করার ঘোষণা দেন। আন্দোলনটি পরিচালনা করছে এমপিও ন্যাশনালাইজেশন এক্সপেকট্যান্ট অ্যালায়েন্স।

২৪ ঘণ্টা অবস্থানের ঘোষণা

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল দেলওয়ার হোসেন আজিজি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন,
“আমরা ২৪ ঘণ্টা এখানেই থাকব। সরকার যদি ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা ঘোষণা না দেয়, তাহলে শহীদ মিনার ছাড়ব না।”

তিনি আরও জানান, দেশের ৩০ হাজার স্কুলের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী সোমবার পূর্ণদিবসের ধর্মঘটে অংশ নেবেন।

শহীদ মিনারেই রাত কাটাবেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা - Bangla Affairs

“স্কুল খোলা থাকবে, তবে মাত্র দুই থেকে চারজন শিক্ষক উপস্থিত থাকবেন; বাকিরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হবেন,” যোগ করেন তিনি।

আটক শিক্ষকদের মুক্তির দাবি

আজিজি বলেন, “পুলিশ যেসব ছ’জন শিক্ষককে আটক করেছে, তাদের মুক্তির জন্যও আমরা কাজ করছি। আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকব না, আবার স্কুল বন্ধও করব না। তবে দায়িত্ব অবহেলা হবে না।”

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, দাবি পূরণ হলে শিক্ষকরা একই রাতেই শহীদ মিনার ত্যাগ করবেন।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও জলকামান নিক্ষেপ

রবিবার সকাল থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে পুলিশের নির্দেশে তারা শহীদ মিনারে চলে যান। তবে কিছু শিক্ষক প্রেসক্লাবের সামনেই থেকে যান।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ হতে বলে। তখন শিক্ষকরা “ফেইক! ফেইক!” বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর পুলিশ একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে সড়ক খালি করে দেয়।

অভিভাবকদের নিন্দা ও সরকারের প্রতি আহ্বান

দাবি আদায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ঘোষণা

‘প্যারেন্টস ইউনিটি ফোরাম’-এর সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু এক বিবৃতিতে বলেন,
“আমরা এমন এক বর্বর সমাজে বাস করছি যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নির্মাতা সম্মানিত শিক্ষকদের রাস্তায় পেটানো ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা আটক শিক্ষকদের অবিলম্বে মুক্তি চাই।”

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষার আগে শিক্ষার কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়।

আন্দোলনের পটভূমি

২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ায়। তবে শিক্ষকরা ৫ অক্টোবর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।

এরপর ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগের মাধ্যমে বাড়িভাড়া ভাতা ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় বেতন পাচ্ছেন, সঙ্গে রয়েছে ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা এবং ১,০০০ টাকা বাড়িভাড়া (যা সম্প্রতি ১,৫০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে)।

এছাড়া, উৎসব ভাতা আগে বছরে দু’বার মূল বেতনের ২৫ শতাংশ ছিল, যা চলতি বছরের মে মাসে ৫০ শতাংশে বাড়ানো হয়েছে।

 

#এমপিওশিক্ষক #অবস্থানকর্মসূচি #ভাতাবৃদ্ধিদাবি #শিক্ষকআন্দোলন #শহীদমিনার