যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতার চেয়ে তাঁদের বরং যাত্রী পরিবহনের অভিজ্ঞতা ছিল অধিক।
তাদের চাকুরি পাওয়ার প্রধান কারণ ছিল: পরিবার ও সন্তানাদির খাওয়াপরা, অর্থনীতির পরিপন্থি ছিল। তদুপরি আবেদনপত্রে তারা উচ্চহারের মজুরির দাবি প্রাধান্য পেয়েছিল। আনাতোলের মতে, তাদের এই আচরণের ভঙ্গি বাজারমুখী আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ আবেদনকারীর মতো উপযুক্ত পদপ্রার্থী পাওয়া কঠিন করে এবং যুক্তি দেয় যে তেতাল্লিশের মন্বন্তরের ফলস্বরূপ শ্রম-ঘাটতি হওয়ার হবে।
বি-২৪’কে রূপান্তরত করে সি-১০৯ ট্যাঙ্কার নির্মাণ করা হয়েছিল। কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে বিধ্বস্ত একটি সি-১০৯ ট্যাঙ্কার। ছবি: ড্যান ম্যাকার্থি; সৌজন্যে: (Ex-CBI Roundup, Issue: December 2000)
কুর্মিটোলা ঘাঁটির স্থানীয় কর্মচারীরা টিউবওয়েলের সাহায্যে মেস-ঘরের জলের ট্যাঙ্কে জল ভরছে।
এটিসি-তে কি ধরনের কাজ করতে হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে আনাতোল তার আত্মজীবনীতে লেখেন যে “প্লেনভর্তি জ্বালানি ও বিবিধ সাপ্লাই নিয়ে হিমালয় পর্বতমালার প্রলম্বিত শিখরমালার তথা ‘হাম্প (Hump)’-এর উপর দিয়ে উড়ে চীনে নিয়ে যেতাম আমরা। আমাদের অনুমান ছিল যে জাপানিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত চীনা বাহিনীর আক্রমণ পরিচালনা-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জ্বালানি ও বিবিধ সাপ্লাইয়ের মজুদ চলছে”।
মেস-হলে খাওয়া শেষে যার যার তার তার প্লেট পরিষ্কার করছে।
এটিসি-এর অধিকাংশ কমান্ডারই এয়ার-লাইনসের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতার চেয়ে তাঁদের বরং যাত্রী পরিবহনের অভিজ্ঞতা ছিল অধিক। বাস্তবে এটিসি ছিল বিশালাকারের “প্রকাণ্ড এয়ারলাইন” কোম্পানির তুল্য। কুর্মিটোলাসহ সব কয়টি বিমানঘাঁটির পরিচালনা অসামরিক বিমানবন্দরের কর্মপদ্ধতিতে চলত, ফ্লাইটগুলো সময়তালিকা মেনে চলত।
কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি।
প্রথমদিকে কুর্মিটোলা থেকে চীনে জ্বালানি পরিবহনের জন্য যে সি-১৯০ বিমান তেল-ট্যাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার হতো সেটি ছিল আসলে বি-২৪ বোমারু বিমানের পরিবর্ধিত সংস্করণ। কুর্মিটোলায়, উড্ডয়ণকালে জ্বালানিভর্তি কয়েকটি সি-১৯০ বিমান বিস্ফোরিত হয়েছিল। এমনি এক বিস্ফোরণে আনাতোলের সবিয়ে ব্যবহার হতে থাকে মাল-বহনকারী বিমান সি-৫৪: সি-৫৪ প রুমমেট পাইলট নিহত হন। বিস্ফোরণজনিত এইসব দুর্ঘটনার পরে সি-১৯০-কে গ্যালনের ব্যারেল ভর্তি জ্বালানি বহনে সক্ষম ছিল।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৬)