রহস্যময় খিঁচুনি: এক ছাত্রী জীবনের সংগ্রাম
আবুধাবিতে বসবাসরত এক মেডিকেল ছাত্রী, লিনা (ছদ্মনাম), হঠাৎ হঠাৎ খিঁচুনির মতো আক্রমণে ভুগছিলেন। প্রতিদিন চার-পাঁচবার পর্যন্ত এমন ঘটত, আর প্রতিটি খিঁচুনি স্থায়ী হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই অজানা উপসর্গের কারণে তাঁকে চিকিৎসা শিক্ষার মাঝপথে বিরতি নিতে হয় এবং দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।
“এই খিঁচুনিগুলোর কারণে আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারতাম না,” বলছিলেন লিনা, ১০ অক্টোবর পালিত বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে। “মেডিকেল স্কুল থেকে এক বছরের বিরতি নিতে হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল—খিঁচুনি হওয়ার পর আমি কিছুই মনে রাখতে পারতাম না।”
রোগ শনাক্তের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত
আবুধাবির বুরজিল মেডিকেল সিটিতে লিনার চিকিৎসা শুরু হয় স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাজি রিয়াচির তত্ত্বাবধানে। তিনি তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আমির জাভিদের কাছে পাঠান। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, লিনা আসলে “নন-এপিলেপটিক অ্যাটাক ডিসঅর্ডার” (NEAD)-এ আক্রান্ত—একটি বিরল কার্যকরী স্নায়বিক রোগ, যা দেখতে অনেকটা এপিলেপসির মতো হলেও এর কারণ পুরোপুরি ভিন্ন।
ডা. জাভিদের ব্যাখ্যায়, “NEAD মূলত মানসিক ও আবেগজনিত কারণে হয়—এটি মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সমস্যার ফল নয়। রোগীরা খিঁচুনি, চেতনা হারানো, এমনকি জিহ্বা কামড়ানোর মতো উপসর্গ দেখাতে পারেন, যা একে প্রকৃত এপিলেপসির সঙ্গে বিভ্রান্ত করে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি বাস্তব চিকিৎসাজনিত অবস্থা। সঠিক নির্ণয়ের জন্য স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ভুল নির্ণয়ের কারণে অনেক রোগী অপ্রয়োজনীয় এপিলেপসি ওষুধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন।”
মানসিক আঘাত ও নারীদের মধ্যে বেশি ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, NEAD সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় এবং তা মানসিক আঘাত, উদ্বেগ, অতিরিক্ত চাপ বা হতাশার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি “ফাংশনাল নিউরোলজিকাল ডিসঅর্ডার” হিসেবে পরিচিত, যেখানে মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী বিঘ্নিত হয়, কিন্তু কোনো স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি ঘটে না।
চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধারের পথে লিনা
এপিলেপসির সম্ভাবনা পুরোপুরি বাতিল হওয়ার পর, চিকিৎসকেরা ধীরে ধীরে লিনার এপিলেপসি ওষুধ বন্ধ করেন। এরপর ডা. জাভিদ মনোরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা ও সহায়ক মনোচিকিৎসা (সাইকোথেরাপি) শুরু করেন।
কয়েক মাসের মধ্যেই লিনার খিঁচুনির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। আগে যেখানে প্রতিদিন একাধিকবার খিঁচুনি হতো, এখন তা মাসে এক-দুবারের মধ্যে সীমিত। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে তিনি আবারও মেডিকেল স্কুলে ফিরে গেছেন।
সচেতনতার গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, NEAD সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি, যাতে রোগীরা ভুল চিকিৎসা বা সামাজিক ভুল বোঝাবুঝির শিকার না হন। মানসিক চাপ বা ট্রমা শুধু আবেগ নয়, শরীরকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে—এটি তারই এক প্রমাণ।
#মানসিকস্বাস্থ্য #NEAD #স্নায়ুরোগ #মহিলাস্বাস্থ্য #আবুধাবি #চিকিৎসাবিজ্ঞান #বিশ্বমানসিকস্বাস্থ্যদিবস #সারাক্ষণরিপোর্ট