১১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
৩,৯৯৯ ডলারে অর্ডার খুলল এনভিডিয়ার ‘পার্সোনাল এআই সুপারকম্পিউটার’” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৮) অশান্তির জন্য নোবেল থাকলে বাংলাদেশ পেত”— জিএম কাদের একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮ জন বেতন ও ভাতার দাবিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মচারীদের শাহবাগ অবরোধ অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গরুর জরুরী কোয়ারেন্টাইনের সিদ্ধান্ত এক দিনে ৮০ পয়েন্ট পতন, ধস নামলো ঢাকার শেয়ারবাজারে রংপুরে অ্যানথ্রাক্স: গঙ্গাচরায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গরু জবাই নিষিদ্ধ দীপিকা পাড়ুকোনের গ্লোবাল প্লেবুক: হিন্দি ছবির সুপারস্টার কীভাবে বানালেন সীমাহীন ক্যারিয়ার শিক্ষক আন্দোলনে অস্থিরতা শিক্ষায়, সমাধানে কী করছে সরকার?

ভেনেজুয়েলা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ৬ — ‘মাদকবাহী নৌকা’ ধ্বংসের দাবি ট্রাম্পের

ট্রাম্পের প্রকাশিত ভিডিও ও হামলার দাবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের সামাজিক মাধ্যম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং সেটি বিস্ফোরণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ছয়জন সন্দেহভাজন মাদকচোরাকারবারি নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় ঘটে।

তিনি জানান, হামলাটি “নির্দিষ্ট এক সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে” পরিচালিত হয়েছে, যদিও সেই সংগঠনের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। ট্রাম্প বলেন, গোয়েন্দা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওই নৌকাটি মাদক বহন করছিল এবং অবৈধ “নারকো-টেররিস্ট নেটওয়ার্ক”-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।


সামরিক শক্তি ব্যবহারের নতুন কৌশল

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক অংশ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। বর্তমানে পুয়ের্তো রিকো-তে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে, পাশাপাশি দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিন, যেখানে হাজারো নৌসেনা ও মেরিন অবস্থান করছে।

এই অভিযানের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আবারও এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা অনেক সময় আইনি দিক থেকে বিতর্কিত। আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে সক্রিয় ডিউটির সেনা মোতায়েন ও মাদকচোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে “সন্ত্রাসবিরোধী” হামলাও আইনি প্রশ্ন তুলেছিল।


আইনি বিতর্ক ও পেন্টাগনের অবস্থান

পেন্টাগন সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্ধারণ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে “অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে” লিপ্ত রয়েছে মাদকচোরাচালান চক্রগুলোর সঙ্গে। তবে সাবেক কিছু সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই যুক্তি আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিধির সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গত নয়। তাদের মতে, সন্দেহভাজন মাদকচোরাকারবারিদের সমুদ্রে হত্যা করার পরিবর্তে আটক করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।


ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বহুবার অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইছে। গত আগস্টে ওয়াশিংটন মাদুরোর গ্রেপ্তারের তথ্যদাতাদের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে মাদকচোরাচালান ও অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যদিও মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


ভিডিওর সত্যতা ও অনিশ্চয়তা

ট্রাম্প যে ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে একটি স্থির নৌকাকে দেখা যায়, যা হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিস্ফোরিত হয়। ভিডিওটি আসল কিনা, সেটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনও নিহতদের পরিচয় বা নৌকাটির মালামালের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।


ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন আমেরিকায় প্রভাব বাড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ, বিশেষত মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর থেকে।


ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌকা ধ্বংসের এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক উপস্থিতি ও আইনি বিতর্ককে নতুন করে সামনে এনেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন একে মাদকবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, সমালোচকদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সীমা অতিক্রম করছে এবং লাতিন আমেরিকায় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।


#যুক্তরাষ্ট্র #ভেনেজুয়েলা #ডোনাল্ড-ট্রাম্প #মাদকচোরাচালান #সামরিক-হামলা #ক্যারিবীয়-অঞ্চল #আন্তর্জাতিক-রাজনীতি #সারাক্ষণ-রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

৩,৯৯৯ ডলারে অর্ডার খুলল এনভিডিয়ার ‘পার্সোনাল এআই সুপারকম্পিউটার’”

ভেনেজুয়েলা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ৬ — ‘মাদকবাহী নৌকা’ ধ্বংসের দাবি ট্রাম্পের

০৩:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের প্রকাশিত ভিডিও ও হামলার দাবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের সামাজিক মাধ্যম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং সেটি বিস্ফোরণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ছয়জন সন্দেহভাজন মাদকচোরাকারবারি নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় ঘটে।

তিনি জানান, হামলাটি “নির্দিষ্ট এক সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে” পরিচালিত হয়েছে, যদিও সেই সংগঠনের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। ট্রাম্প বলেন, গোয়েন্দা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওই নৌকাটি মাদক বহন করছিল এবং অবৈধ “নারকো-টেররিস্ট নেটওয়ার্ক”-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।


সামরিক শক্তি ব্যবহারের নতুন কৌশল

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক অংশ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। বর্তমানে পুয়ের্তো রিকো-তে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে, পাশাপাশি দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিন, যেখানে হাজারো নৌসেনা ও মেরিন অবস্থান করছে।

এই অভিযানের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আবারও এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা অনেক সময় আইনি দিক থেকে বিতর্কিত। আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে সক্রিয় ডিউটির সেনা মোতায়েন ও মাদকচোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে “সন্ত্রাসবিরোধী” হামলাও আইনি প্রশ্ন তুলেছিল।


আইনি বিতর্ক ও পেন্টাগনের অবস্থান

পেন্টাগন সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্ধারণ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে “অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে” লিপ্ত রয়েছে মাদকচোরাচালান চক্রগুলোর সঙ্গে। তবে সাবেক কিছু সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই যুক্তি আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিধির সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গত নয়। তাদের মতে, সন্দেহভাজন মাদকচোরাকারবারিদের সমুদ্রে হত্যা করার পরিবর্তে আটক করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।


ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বহুবার অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইছে। গত আগস্টে ওয়াশিংটন মাদুরোর গ্রেপ্তারের তথ্যদাতাদের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে মাদকচোরাচালান ও অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যদিও মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


ভিডিওর সত্যতা ও অনিশ্চয়তা

ট্রাম্প যে ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে একটি স্থির নৌকাকে দেখা যায়, যা হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিস্ফোরিত হয়। ভিডিওটি আসল কিনা, সেটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনও নিহতদের পরিচয় বা নৌকাটির মালামালের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।


ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন আমেরিকায় প্রভাব বাড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ, বিশেষত মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর থেকে।


ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌকা ধ্বংসের এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক উপস্থিতি ও আইনি বিতর্ককে নতুন করে সামনে এনেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন একে মাদকবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, সমালোচকদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সীমা অতিক্রম করছে এবং লাতিন আমেরিকায় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।


#যুক্তরাষ্ট্র #ভেনেজুয়েলা #ডোনাল্ড-ট্রাম্প #মাদকচোরাচালান #সামরিক-হামলা #ক্যারিবীয়-অঞ্চল #আন্তর্জাতিক-রাজনীতি #সারাক্ষণ-রিপোর্ট