বাজারে আশাবাদ ফিরে আসছে
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ‘সুদহার কমানোর সম্ভাবনা’ বিষয়ক মন্তব্য এবং ওয়াল স্ট্রিটে ব্যাংক খাতের শক্তিশালী আয়ের রিপোর্টের পর বুধবার বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেখা গেছে। এ সময় ডলারের মানও কিছুটা হ্রাস পায়।
ইউরোপের ইউরো স্টকস ৬০০ সূচক ০.৭ শতাংশ বেড়েছে। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক বেড়েছে ২.৪ শতাংশ, যেখানে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এলভিএমএইচ-এর শেয়ার এক লাফে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় প্রান্তিকের ইতিবাচক আয় প্রকাশের পর গোটা বিলাসবহুল খাতেই উত্তেজনা ফিরে আসে।
ফেডের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি ‘সহজীকরণ’-মুখী
মঙ্গলবার জেরোম পাওয়েল জানান, ফেড তার সম্পদ কমানোর দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা শিগগিরই শেষ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সুদহার কমানোর দরজাও খোলা রাখছে। ডয়েচে ব্যাংকের বিশ্লেষকদের ভাষায়, পাওয়েল “প্রত্যাশার চেয়ে বেশি নরম সুরে” বক্তব্য দিয়েছেন। এর ফলে ডিসেম্বর মাসে ফেডের সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা দৃশ্যমান হয়েছে।
বাজারে বর্তমানে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৮ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদহার কমানোর সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এই প্রত্যাশায় ডলারের মান প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ০.৩ শতাংশ কমে যায়, আর ইয়েন ও অস্ট্রেলিয়ান ডলার পুনরুদ্ধারে অগ্রগতি দেখায়।

ওয়াল স্ট্রিটে ইতিবাচক ধারা
মার্কিন ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী আয় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের ফলে বিনিয়োগকারীরা আবারও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন।
নাসডাক ফিউচারস ০.৫ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচারস ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, বাজার এখনো অস্থির—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যার জবাবে চীন বিরল মাটির খনিজ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় বিবেচনা করছে। পাশাপাশি, উভয় দেশই সামুদ্রিক পরিবহন সংস্থাগুলোর ওপর অতিরিক্ত বন্দর ফি আরোপ করেছে।

আইজি মার্কেট বিশ্লেষক টনি সাইকামোরের মতে, “এ ধরনের পদক্ষেপে বোঝা যায় যে স্থায়ী সমঝোতা সহজ হবে না। তবে ইতিহাস বলে, তারা কঠোর বার্তা দেয়ার পর অনেক সময়ই পিছু হটে।”
এশিয়া ও ইউরোপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় দামেরই পতন ঘটেছে—যা মূল্যপতন প্রবণতা নির্দেশ করছে।
তবুও এশিয়া-প্যাসিফিক শেয়ার সূচক (জাপান ছাড়া) ২.১ শতাংশ বেড়েছে, আর হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফ্রান্সে রাজনৈতিক অচলাবস্থা এড়ানোয় বাজারে স্বস্তি
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিতর্কিত পেনশন সংস্কার স্থগিত থাকবে। এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে এবং বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান।
ফরাসি বন্ডের দাম বেড়ে ১০ বছরের ফলন বা ইল্ড ৩.৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগস্টের পর সর্বনিম্ন।

মোনেক্স ইউএসএর ট্রেডিং পরিচালক হুয়ান পেরেজ, বলেন, “ফরাসি পার্লামেন্টে অচলাবস্থা এড়াতে যা কিছু করা যায়, তা বাজারের জন্য ইতিবাচক সংকেত।”
ইউরোর মানও সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১.১৬৩ ডলার।
সোনা ও তেলের দামের দিকনির্দেশনা
ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য মার্কিন সুদহার কমার প্রত্যাশায় সোনার দাম এই প্রথম আউন্সপ্রতি ৪,২০০ ডলার অতিক্রম করেছে।
অন্যদিকে, তেলের দামে সামান্য পতন দেখা গেছে—ব্রেন্ট ক্রুড ০.২ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬২.২৭ ডলার এবং মার্কিন ক্রুড ০.১ শতাংশ কমে ৫৮.৬৩ ডলারে নেমে আসে।
সারসংক্ষেপ
বৈশ্বিক বাজারে ফেডের ‘সহজীকরণ’-মুখী বার্তা ও ব্যাংক খাতের ইতিবাচক আয় বিনিয়োগকারীদের মনোবল পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, চীনের মূল্যপতন এবং ইউরোপের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে বাজার এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
#বৈশ্বিকঅর্থনীতি #ফেডারেলরিজার্ভ #ডলারেরপতন #শেয়ারবাজার #বাণিজ্যযুদ্ধ #ফ্রান্স #চীন #ওয়ালস্ট্রিট #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















