ব্যস্ততার বেড়াজাল
রফিক এক সরকারি দপ্তরের হিসাবরক্ষক। সকাল আটটার আগেই অফিসে পৌঁছাতে হয়, আর ফেরেন অনেক রাত পেরিয়ে। বাসায় ফিরেই আবার পরের দিনের কাজের হিসাব মিলাতে বসেন। টেবিলভর্তি কাগজ, সংখ্যার সারি, আর সময়ের পেছনে ছুটে চলা জীবন—সব মিলিয়ে তার দিনগুলো একঘেয়ে, যান্ত্রিক।
হারিয়ে যাওয়া আনন্দ
একসময় রফিক গান শুনতেন, বই পড়তেন, ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন। এখন সেসব মনে পড়ে দূরের গল্পের মতো। সপ্তাহজুড়ে ছুটি মেলে না, অফিস থেকে বেরোলে শরীর এত ক্লান্ত থাকে যে কিছু করার শক্তি থাকে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি যেন বেঁচে আছেন শুধু টিকে থাকার জন্য, বাঁচার জন্য নয়।
নিঃশব্দ বিষণ্ণতা
রফিকের চোখে এখন ঘন অন্ধকার। কোনো শখ নেই, উৎসাহ নেই, এমনকি পরিবারের সঙ্গে কথাও কমে গেছে। স্ত্রীর অভিযোগ—তিনি নাকি সব সময় বিরক্ত, মনোযোগহীন। কিন্তু রফিক জানেন, এটা বিরক্তি নয়, ক্লান্তি। এমন ক্লান্তি, যা ঘুমেও দূর হয় না। কখনও অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবেন—একটা দিন যদি পুরোপুরি নিজের মতো কাটাতে পারতেন! কিন্তু সে সুযোগ তার ভাগ্যে নেই।
অবসরের আকাঙ্ক্ষা
রাতের পর রাত তিনি ভাবেন, “একটু বিশ্রাম দরকার, একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়।” কিন্তু ঋণের বোঝা, সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের খরচ—সবকিছুই তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতার কঠিন মাটিতে। অফিসে ছুটি চাইলে বলা হয়, “এখন তো অনেক কাজ চলছে, পরে নিও।” সেই ‘পরে’ আর আসে না।
যান্ত্রিক জীবনের শেষ প্রহর
রফিক এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন ক্লান্ত জীবনযাত্রায়। মাঝে মাঝে আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে চিনতে পারেন না—চোখে জ্বালানি নেই, মুখে হাসি নেই। তবুও সকাল হলেই আবার বেরিয়ে পড়েন একই পথে। যেন এক যন্ত্র, যা কাজ করতেই জন্মেছে।
শেষ উপলব্ধি
এক রাতে তিনি ডায়েরিতে লিখলেন—“জীবনটা বড় অদ্ভুত। আমি কাজ করে যাচ্ছি জীবনের জন্য, অথচ জীবনটাই হারিয়ে ফেলেছি কাজের ভিড়ে।” তারপর আলো নিভিয়ে চুপচাপ বসে থাকলেন জানালার পাশে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু তার মন খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই ‘অবসর’—যা তার জীবনে আর কখনো আসবে না।