১২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪ সালের দাবানলে ভারত থেকেও বড় এলাকা পুড়ে গেছে

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে বিশ্বব্যাপী দাবানলে অন্তত ৩৭ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে—যার আয়তন ভারতের চেয়েও বেশি। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।


বৈশ্বিক আগুনে ধ্বংসের পরিমাণ

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত দুই দশকের গড়ের তুলনায় এ বছর দাবানলের মোট ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ কম হলেও, কার্বনসমৃদ্ধ বনাঞ্চলে আগুন লাগার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ আগের তুলনায় ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রবণতা ভবিষ্যতে “কার্বনসমৃদ্ধ বনভূমিতে আগুনের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা আরও বাড়বে—এরই ইঙ্গিত দেয়।”


সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহ

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪–২৫ সালের দাবানল মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কানাডার বোরিয়াল বন, আমাজনের আর্দ্র ক্রান্তীয় বন, বলিভিয়ার চিকুইতানো শুষ্ক বন এবং ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় সাভান্না অঞ্চল সেরাডোতে।
একই প্রতিবেদনে চারটি বড় দাবানল ঘটনার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—উত্তর-পূর্ব আমাজনিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার প্যানটানাল–চিকুইতানো অঞ্চল, কঙ্গো অববাহিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে এসব এলাকার কিছু অংশে আগুনের বিস্তৃতি ২৫ থেকে ৩৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।


উত্তর আমেরিকায় ‘চরম’ আগুনের বছর

গবেষকদের ভাষায়, ২০২৪ সাল উত্তর আমেরিকার জন্য ছিল “চরম দাবানলের বছর”। মহাদেশজুড়ে পুড়ে যাওয়া ভূমির পরিমাণ গড়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি এবং কার্বন নিঃসরণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
কানাডায় আগুনের মৌসুম শুরু হয় অস্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি—আগাম তুষারগলন ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে ৬৪ হাজারেরও বেশি দাবানল অন্তত ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। মেক্সিকোয় ৮ হাজারের বেশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার জমি।


লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আগুন

২০২৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে দুটি ভয়াবহ দাবানল—‘প্যালিসেডস’ ও ‘ইটন’—দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল দুর্যোগে পরিণত হয়। এই আগুনে অন্তত ৩০ জন নিহত হন, ১১ হাজার ৫০০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস হয় এবং ১ লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসেবে ধরা হয়েছে।


দক্ষিণ আমেরিকায় রেকর্ড কার্বন নিঃসরণ

২০২৪–২৫ সালের আগুন মৌসুমে দক্ষিণ আমেরিকায় দাবানলের মাত্রা ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। মহাদেশজুড়ে ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি পুড়ে গেছে—যা গড়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। এ সময় নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ মেগাটন—দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।


আফ্রিকায় তুলনামূলক কম প্রভাব

আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে দাবানলের মাত্রা ছিল গড়ের নিচে, তবে কঙ্গো অববাহিকা, উত্তর অ্যাঙ্গোলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এলাকায় আগুনের তীব্রতা বেড়েছিল।
২০২৪ সালে কঙ্গো অববাহিকায় প্রায় ৪ হাজার দাবানলে রেকর্ড পরিমাণ জমি পুড়ে যায়—যা গড়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। এই অঞ্চলটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রান্তীয় বনভূমি হিসেবে পরিচিত।
এ আগুনে তীব্র বায়ুদূষণ সৃষ্টি হয় এবং গত এক দশকে কঙ্গো অঞ্চলের প্রাথমিক বনভূমি হারানোর হার সর্বোচ্চে পৌঁছে যায়।


২০২৪ সালের দাবানল বিশ্বজুড়ে বন, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুর জন্য ছিল এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন—যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা ও মানবসৃষ্ট দাহ অব্যাহত থাকে, তবে আগামী দশকগুলোতে পৃথিবীর বনভূমি আরও দ্রুত ধ্বংস হতে পারে।


:#দাবানল২০২৪ #জলবায়ুপরিবর্তন #বনভূমিধ্বংস #কার্বননিঃসরণ #গ্লোবালওয়ার্মিং #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৪ সালের দাবানলে ভারত থেকেও বড় এলাকা পুড়ে গেছে

০৭:৪৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে বিশ্বব্যাপী দাবানলে অন্তত ৩৭ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে—যার আয়তন ভারতের চেয়েও বেশি। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।


বৈশ্বিক আগুনে ধ্বংসের পরিমাণ

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত দুই দশকের গড়ের তুলনায় এ বছর দাবানলের মোট ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ কম হলেও, কার্বনসমৃদ্ধ বনাঞ্চলে আগুন লাগার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ আগের তুলনায় ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রবণতা ভবিষ্যতে “কার্বনসমৃদ্ধ বনভূমিতে আগুনের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা আরও বাড়বে—এরই ইঙ্গিত দেয়।”


সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহ

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪–২৫ সালের দাবানল মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কানাডার বোরিয়াল বন, আমাজনের আর্দ্র ক্রান্তীয় বন, বলিভিয়ার চিকুইতানো শুষ্ক বন এবং ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় সাভান্না অঞ্চল সেরাডোতে।
একই প্রতিবেদনে চারটি বড় দাবানল ঘটনার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—উত্তর-পূর্ব আমাজনিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার প্যানটানাল–চিকুইতানো অঞ্চল, কঙ্গো অববাহিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে এসব এলাকার কিছু অংশে আগুনের বিস্তৃতি ২৫ থেকে ৩৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।


উত্তর আমেরিকায় ‘চরম’ আগুনের বছর

গবেষকদের ভাষায়, ২০২৪ সাল উত্তর আমেরিকার জন্য ছিল “চরম দাবানলের বছর”। মহাদেশজুড়ে পুড়ে যাওয়া ভূমির পরিমাণ গড়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি এবং কার্বন নিঃসরণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
কানাডায় আগুনের মৌসুম শুরু হয় অস্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি—আগাম তুষারগলন ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে ৬৪ হাজারেরও বেশি দাবানল অন্তত ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। মেক্সিকোয় ৮ হাজারের বেশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার জমি।


লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আগুন

২০২৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে দুটি ভয়াবহ দাবানল—‘প্যালিসেডস’ ও ‘ইটন’—দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল দুর্যোগে পরিণত হয়। এই আগুনে অন্তত ৩০ জন নিহত হন, ১১ হাজার ৫০০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস হয় এবং ১ লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসেবে ধরা হয়েছে।


দক্ষিণ আমেরিকায় রেকর্ড কার্বন নিঃসরণ

২০২৪–২৫ সালের আগুন মৌসুমে দক্ষিণ আমেরিকায় দাবানলের মাত্রা ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। মহাদেশজুড়ে ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি পুড়ে গেছে—যা গড়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। এ সময় নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ মেগাটন—দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।


আফ্রিকায় তুলনামূলক কম প্রভাব

আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে দাবানলের মাত্রা ছিল গড়ের নিচে, তবে কঙ্গো অববাহিকা, উত্তর অ্যাঙ্গোলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এলাকায় আগুনের তীব্রতা বেড়েছিল।
২০২৪ সালে কঙ্গো অববাহিকায় প্রায় ৪ হাজার দাবানলে রেকর্ড পরিমাণ জমি পুড়ে যায়—যা গড়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। এই অঞ্চলটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রান্তীয় বনভূমি হিসেবে পরিচিত।
এ আগুনে তীব্র বায়ুদূষণ সৃষ্টি হয় এবং গত এক দশকে কঙ্গো অঞ্চলের প্রাথমিক বনভূমি হারানোর হার সর্বোচ্চে পৌঁছে যায়।


২০২৪ সালের দাবানল বিশ্বজুড়ে বন, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুর জন্য ছিল এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন—যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা ও মানবসৃষ্ট দাহ অব্যাহত থাকে, তবে আগামী দশকগুলোতে পৃথিবীর বনভূমি আরও দ্রুত ধ্বংস হতে পারে।


:#দাবানল২০২৪ #জলবায়ুপরিবর্তন #বনভূমিধ্বংস #কার্বননিঃসরণ #গ্লোবালওয়ার্মিং #সারাক্ষণরিপোর্ট