দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন অব্যাহত থাকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে এসেছে। বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সূচকটি শিগগিরই ওই সীমার নিচে নামতে পারে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই সূচকে বড় পতন
রবিবার, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)—উভয় বাজারেই লেনদেনের শুরু থেকেই সূচক নিম্নমুখী ছিল। দিনের শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে ৫,০৪৪ পয়েন্টে নেমে আসে।
বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা—আরও একদিন এমন দরপতন চললে সূচক ৫,০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে যেতে পারে। সর্বশেষ জুলাই মাসে সূচক এ সীমার নিচে নেমেছিল।
একজন বিনিয়োগকারী আসাদুর রহমান বলেন, “জুলাইয়ে সূচক যখন ৫ হাজারের নিচে নেমেছিল, কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু টানা দুই সপ্তাহ ধরে বাজার আবার সেই নিম্নস্তরের দিকে যাচ্ছে।”
আরেক বিনিয়োগকারী সাব্বির হোসেনের মন্তব্য, “অবিরাম দরপতনে বাজারে আস্থা হারাচ্ছে অনেকেই। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।”
মূল্যায়নে কমে যাচ্ছে আস্থা
বাজার বিশ্লেষকরা জানান, অনেক মৌলিকভাবে শক্তিশালী শেয়ারের দাম এখনো অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে, অন্যদিকে কেউ কেউ ক্ষতিতে শেয়ার বিক্রি করায় সামগ্রিক মনোভাব আরও নেতিবাচক হচ্ছে।
সূচক ও লেনদেনের সারসংক্ষেপ
মূল সূচকের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকও বড় পতনের মুখে পড়ে।
- শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস সূচক কমেছে ২৩ পয়েন্ট (২.২০%)
- ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক কমেছে ২৯ পয়েন্ট (১.৫১%)
মোট ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩১৪টির, বেড়েছে মাত্র ৪৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টি।
এ-, বি- ও জেড—সব শ্রেণিতেই দরপতন দেখা গেছে। বিশেষত ‘এ’ ক্যাটাগরিতে (যেখানে মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত), ১৭৫টি কোম্পানির দর কমেছে, আর বেড়েছে মাত্র ২৮টির।
লেনদেনের পরিসংখ্যান
ডিএসইতে রবিবার মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪২ কোটি টাকা, যা আগের সেশনের ৪৪৪ কোটি টাকার চেয়ে সামান্য কম। ব্লক মার্কেটে ২১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় ১১ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় লাভেলো আইসক্রিমের, ২.৪১ কোটি টাকায়।
দিনের সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি ছিল ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স পিএলসি, যার দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। বিপরীতে মনো অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি লিমিটেডের দর কমেছে ১৪ শতাংশেরও বেশি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও পতন
সিএসইতেও একই চিত্র দেখা গেছে। সামগ্রিক সূচক একদিনেই কমেছে ১৯৪ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩১টির দর বেড়েছে, ১৩৪টির কমেছে এবং ১৩টি অপরিবর্তিত ছিল।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের সেশনের ৯.৯৪ কোটি টাকার চেয়ে সামান্য বেশি।
দিনের সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি পায় এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড (১০% বৃদ্ধি), আর সর্বাধিক দরপতন ঘটে ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেডে (১০% হ্রাস)।
ধারাবাহিক দরপতনে বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কার্যকর নীতিগত উদ্যোগ এখন জরুরি বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
#ডিএসই #শেয়ারবাজার #দরপতন #বিনিয়োগকারী #সিএসই #বাংলাদেশঅর্থনীতি