ডিজিটাল পেমেন্টকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলতে কেবল ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি নয়, বরং বহুমুখী কৌশল প্রণয়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানুষের আচরণগত পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো শক্তিশালী করা, ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, এবং ডিজিটাল লেনদেনের বিকল্প পদ্ধতি সম্প্রসারণই এই খাতকে এগিয়ে নিতে পারে।
আলোচনার মূল বিষয়
সম্প্রতি চট্টগ্রামের দ্য পেনিনসুলা হোটেলে অনুষ্ঠিত “ডিজিটাল পেমেন্ট ইন দ্য পোর্ট সিটি” শীর্ষক এক আলোচনায় এই মতামত উঠে আসে। দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশ আয়োজন করে এই অনুষ্ঠান।
চট্টগ্রামের বারকোড ক্যাফে, মা-ও-শিশু জেনারেল হাসপাতাল, রেডিসন ব্লু বে ভিউ, এপিক হেলথকেয়ার, উৎসব সুপারমার্কেট, চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড, শাজিনাজ হাসপাতাল, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘এমি’, চট্টগ্রাম আই ইনফারমারি ও ট্রেনিং কমপ্লেক্স, শৈল্পিক, দ্য পেনিনসুলা চট্টগ্রাম, শপিং ব্যাগসহ নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহমেদ।
নগদবিহীন জীবনের পথে
চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা বলেন, বিশ্বের বহু দেশে মানুষ এখন নগদ অর্থ ব্যবহার ছাড়াই পুরো দিন পার করতে পারেন। বাংলাদেশেও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার বাড়ছে, তবে এটি সত্যিকারের অভ্যাসে পরিণত করতে আরও ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম প্রয়োজন।
তারা প্রস্তাব করেন, আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারণা চালানো হলে সাধারণ গ্রাহকদের কাছে বিষয়টি আরও সহজবোধ্য হবে। বয়স্ক ও প্রযুক্তিভীত ব্যক্তিদের জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও সহায়ক হতে পারে।
গ্রাহকদের আগ্রহ ও প্রণোদনা
বিভিন্ন সুপারস্টোরের উদ্যোক্তারা জানান, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক ইতোমধ্যে ব্যাংক কার্ড বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস যেমন বিকাশ ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করেন। সঠিক উদ্যোগ নিলে এই হার ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা মনে করেন, বিশেষ ছাড় বা প্রণোদনা দিলে আরও বেশি মানুষ ডিজিটাল পেমেন্টে আগ্রহী হবে।
তবে বক্তারা সতর্ক করেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারছেন না। সেই ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিলিং কাউন্টারে ওয়াই-ফাই সরবরাহ করতে পারে, পাশাপাশি ইউএসএসডি-ভিত্তিক লেনদেনের পদ্ধতি প্রদর্শন করতে পারে।
বিকাশের দৃষ্টিভঙ্গি
বক্তাদের প্রস্তাব স্বাগত জানিয়ে বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, “যদিও এখনো অধিকাংশ ডিজিটাল লেনদেন টাকা পাঠানো ও উত্তোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবুও প্রতিদিন অন্তত এক কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট করছেন। সঠিক নীতি সহায়তা, প্রযুক্তি খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সংখ্যা বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ভোক্তা পর্যায়ে খরচ কমাবে। একই সঙ্গে যাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহারে আশঙ্কা বোধ করেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর দিকেও বিশেষভাবে কাজ করা দরকার।”
ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে নগদবিহীন সমাজ গঠনের পথে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তনকে টেকসই করতে হলে প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি জনসচেতনতা, আস্থা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ—এই তিনটি উপাদানকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
#ডিজিটাল_পেমেন্ট, বিকাশ, চট্টগ্রাম, নগদবিহীন_লেনদেন, বাংলাদেশ_অর্থনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট