ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন, নাগরিকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের সঙ্গে ভূমির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
ডিজিটাল রূপান্তরে সহজলভ্য ভূমিসেবা
সিনিয়র সচিব জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে জনগণ এখন ঘরে বসেই বিভিন্ন ভূমিসেবা পাচ্ছেন। এই পরিবর্তন শুধু নাগরিকের সুবিধাই বাড়ায়নি, বরং দুর্নীতির সুযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সততা, পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা এই ব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশিক্ষণে সচিবের বক্তব্য
সোমবার রাজধানীর বিসিএস প্রশাসন একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘মানোন্নীত অটোমেটেড ভূমিসেবা’ বিষয়ক চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি জেলার (ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা) কর্মকর্তাদের “ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স (টিওটি)” প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সেবক, প্রহরী ও সংস্কারক হিসেবে প্রশাসন
সালেহ আহমেদ বলেন, ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি ন্যায়নিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে ভূমি অফিসে অনিয়ম, ঘুষ ও দালালচক্রের কার্যক্রম অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তিনি মনে করেন, দুর্নীতিমুক্ত ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে একযোগে সেবক, প্রহরী ও সংস্কারকের ভূমিকা পালন করতে হবে।
অটোমেশন ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তন
বর্তমান বিশ্বে প্রশাসনিক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ভূমিসেবার প্রতিটি ধাপে অটোমেশন চালুর ফলে নাগরিক সেবায় গতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, “অটোমেটেড ভূমিসেবা প্রশাসনের প্রযুক্তিনির্ভর শাসনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসন বিশ্বে অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”
নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা
গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে সচিব বলেন, একটি সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাণ। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ধারণ করে। তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, “ব্যক্তিগত মত বা রাজনৈতিক পক্ষপাত যেন দায়িত্ব পালনে প্রভাব না ফেলে।”
সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দায়িত্ব
সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। এবার কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই, তাই প্রশাসনের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা, যা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, “আপনাদেরই প্রচেষ্টা একটি সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারে।”
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, সততা, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়ই জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা ও প্রশাসনিক সমন্বয়
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মো. পারভেজ হাসান, বিপিএএ, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয়।
দুর্নীতিমুক্ত, জনবান্ধব ও প্রযুক্তিনির্ভর ভূমিসেবা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপ এখন বাস্তব রূপ পাচ্ছে। ভূমি প্রশাসনের আধুনিকায়ন কেবল সেবার মান উন্নয়নই নয়, রাষ্ট্রীয় সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।