অভ্যুত্থানের পটভূমি
অক্টোবরের শুরুর দিকে, আন্টানানারিভোর যুবক-যুবতীদের নেতৃত্বে এক বৃহৎ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, মূলত বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতির বিরুদ্ধে। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন বর্তমান প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনাকে পদত্যাগের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনীর এক এলিট ইউনিট প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে এবং সোমবার কার্যত ক্ষমতা দখল করে নেয়।
ক্ষমতা দখল ও নতুন নেতৃত্ব
সেনা একাধিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে ঘোষণা দেয় যে তারা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা নামে এক সেনা কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, সেনা ও নাগরিক প্রতিনিধি নিয়ে একটি যৌথ সরকার দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে।
জেন জেড আন্দোলনের লক্ষ্য: “নেতা নয়, ব্যবস্থা বদল”
যুবরা এখন শুধুই একজন নতুন নেতার প্রত্যাশায় নেই—তারা চায় ব্যবস্থা পরিবর্তন। উদাহরণস্বরূপ, এক নারী আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা এক নতুন গাড়ি চালক চাই না, গাড়িটিই বদল করতে হবে।”
তাদের ভাষায়, এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কেবল বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে; কিন্তু এখন তা বিস্তৃত হয়ে গেছে মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতি হ্রাসের দাবিতে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
মাদাগাস্কারের জনগণের গড় বয়স মাত্র ১৯ বছর। দেশে দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্য, খারাপ প্রশাসন এবং মৌলিক পরিষেবার অভাব চলছিল। বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
আশা ও সংশয়ের মিশ্র অনুভূতি
অনেক যুবক-যুবতী সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন, কারণ দমনপীড়নের সপ্তাহগুলোর পর তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তবে তারা বলছেন, এটি শেষ লড়াই নয়—তারা এখনো নিশ্চিত নন, সেনাবাহিনী তাদের কণ্ঠস্বর শুনবে কি না।
এক সামাজিক সংগঠনের সহ-সভাপতি জানান, অভ্যুত্থান কখনোই গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অংশ নয়, তবে “রাজনৈতিক নেতারা যে একচেটিয়াভাবে সমস্যাগুলো গ্রহণ করছিলেন না”—সেই কারণেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল।
সামনের দিনগুলো: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
- • দুই বছরের ট্রানজিশন শেষে সত্যিই নির্বাচন হবে কি না—তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
- • যুবরা বলছে, যদি তাদের দাবিগুলো পূরণ না হয়, তারা আবার বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে।
- • নতুন সরকার ও সেনাবাহিনীকে এখন দেখাতে হবে তারা “ব্যবস্থা পরিবর্তনের রাস্তায়” রয়েছে কিনা—শুধু ক্ষমতা বদল নয়।
- • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখনো সেদিকে, কারণ দৃষ্টিতে রয়েছে অস্থিরতা, সেনা দখল ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিঘ্ন।
মাদাগাস্কারের বর্তমান পরিস্থিতি তাই এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দেশটির তরুণ প্রজন্ম এখন সিদ্ধান্তের সামনে—তারা শুধু নেতৃত্ব নয়, পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামো বদলাতে চায়।