বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই মাসের গণআন্দোলনের পরও দেশের রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনীতিকে সুন্দর ও অর্থবহ করতে হলে সততা, নৈতিকতা ও মানুষের স্বপ্ন পূরণের আন্তরিক ইচ্ছা অপরিহার্য।
রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে হতাশা
সোমবার এক আলোচনা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। এত বড় আন্দোলনের পর আমাদের দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু এখন দেখি রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐক্য ভাঙছে, বিভাজন বাড়ছে। এটি আমাদের অনেককে গভীরভাবে নিরাশ করছে।”
তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে হতাশা না ছড়িয়ে নতুন আশার ভোর দেখানোর সময় এসেছে। “স্বপ্ন না থাকলে অগ্রগতি হয় না। স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন পূরণের যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে,” বলেন ফখরুল।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা ,তরুণদের বার্তা
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা উদ্ধৃত করে বলেন, “যেভাবে কবি অন্ধকারেও পাখিকে উড়তে বলেন, ঠিক তেমনি আমি তরুণদের বলছি—অন্ধকারকে ভয় কোরো না, নতুন ভোরের পথে এগিয়ে চলো। ভবিষ্যৎ তোমাদের ডাকছে।”
মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ নামের মাসিক পত্রিকার উদ্যোগে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ফখরুল শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন এবং বলেন, “তরুণ প্রজন্মকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের সেই যোগ্যতা দিচ্ছে না। রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণেই এটি হয়েছে।”
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি
ফখরুল বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হবে। তিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, “আমরা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিইনি। অথচ যদি তা দেওয়া হতো, দেশ অনেক বেশি উপকৃত হতো।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমাদের দেশে অনেক ছাত্র বিএ বা এমএ ডিগ্রি শেষ করে বেকার ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু যদি তারা পলিটেকনিক থেকে বিদ্যুৎ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ে ডিপ্লোমা করত, তাহলে সহজেই চাকরি পেত। এটি আমাদের রাজনৈতিক নীতির ব্যর্থতা।”
শিক্ষকদের বেতন ও কাঠামোগত সংস্কার
তিনি বলেন, “আজ শিক্ষকরা রাস্তায় বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। যদি আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতাম—যেখানে উচ্চশিক্ষা থাকত কেবল মেধাবীদের জন্য এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য থাকত কারিগরি প্রশিক্ষণ—তাহলে দেশ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতো।”
ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কারণ এটিই তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করবে।
প্রজন্মান্তরের চিন্তার ফারাক
বিএনপি মহাসচিব বর্তমান সময়কে “সংক্রমণকাল” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা এক অনিশ্চিত সময়ে রয়েছি। জেনারেশন জেডের চিন্তাধারা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা একটি ছোট মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই পুরো পৃথিবীকে চিনছে। তাদের অনেকেই আমাদের চেয়ে বেশি জানে—এটি আমাদের স্বীকার করতে হবে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই জ্ঞান ও সংযোগ যেন ধ্বংস নয়, মানবকল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হয়। “যদি আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার জন্য কাজ করি, তবেই আমরা সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যেতে পারব।”
রাজনীতিতে সততা ও নৈতিকতার গুরুত্ব
ফখরুল বলেন, অনেক তরুণের মনে রাজনীতিবিদদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। অথচ রাজনীতিবিদরাই একটি জাতির ভাগ্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখেন।
“একজন রাজনীতিক জাতিকে উন্নতির চূড়ায় নিতে পারেন, আবার পতনের দিকেও ঠেলে দিতে পারেন। রাজনীতিতে যদি সৌন্দর্য, সততা ও লক্ষ্য না থাকে, তা কেবল ব্যক্তিস্বার্থে পরিণত হয়। এমন রাজনীতি জনগণের ঘৃণা ছাড়া কিছুই পায় না,” বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে মূল বার্তা ছিল—রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে থেকেও তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে ও এগিয়ে যেতে হবে। তিনি শিক্ষা সংস্কার, কারিগরি প্রশিক্ষণ, এবং প্রজন্মগত নেতৃত্বের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন, যাতে বাংলাদেশ একটি ঐক্যবদ্ধ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।
#t: #রাজনীতি #বিএনপি #মির্জা_ফখরুল #শিক্ষা_সংস্কার #তরুণ_প্রজন্ম #জুলাই_আন্দোলন #বাংলাদেশ