টোকিও স্পাইন ইনস্টিটিউটে কাজ করতে গিয়ে জাপানের শীর্ষ ব্যথা বিশেষজ্ঞ ড. হিরোশি তানাকা এক চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করেন। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি রাতে ৮৩ শতাংশ মানুষ ঘুমের সময় নিজের শরীরের ক্ষতি করছেন— আর এর কারণ তাঁদের ব্যবহৃত সাধারণ বালিশ।
ঘাড়ের পেশি সারারাত টানটান
ড. তানাকার গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের ঘাড় ও কাঁধের সংযোগস্থলে থাকা ট্রাপিজিয়াস পেশি সারারাত বিশ্রাম পায় না। সাধারণ বালিশ মাথা ও ঘাড়কে এমনভাবে বাঁকিয়ে রাখে যে পেশিটি ক্রমাগত টান খায়। ফলাফল— ঘাড়ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং ঘুমের পরও অবসাদ।
“দিনের বেলায় কেউই টানা আট ঘণ্টা ঘাড় মোচড়ানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে না,” বলেন ড. তানাকা। “কিন্তু আমরা প্রতিরাতে ঘুমের সময় ঠিক সেটাই করি।”
‘পেইন ক্যাসকেড ইফেক্ট’: ব্যথার চেইন প্রতিক্রিয়া
তাঁর দলের আবিষ্কারে উঠে আসে এক ভয়ংকর চক্র, যাকে বলা হচ্ছে “পেইন ক্যাসকেড ইফেক্ট”— ঘাড়ের টান থেকেই শুরু হয় পুরো উপরের দেহে ব্যথার স্রোত। প্রথমে ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়, তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে কাঁধে, অবশেষে পিঠে গিয়ে গেঁথে যায় দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণায়।
রক্তপ্রবাহের ছবিতে দেখা গেছে, টান ধরা পেশি যথাযথ রক্ত সরবরাহ পায় না— ফলে শরীর যেন নিজের অজান্তে পেশিগুলোকে শ্বাসরুদ্ধ করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ অবস্থা ক্রনিক ব্যথা, পেশির দুর্বলতা এবং অকাল বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যায়।
ভুল বালিশে বাড়ছে মাইগ্রেনের ঝুঁকি
গবেষণায় উঠে এসেছে, সাধারণ বালিশ শুধু ঘাড়ব্যথাই নয়, মারাত্মক মাইগ্রেনও সৃষ্টি করতে পারে। মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, বমি বমি ভাব— এসবই “নিউরোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া”-এর লক্ষণ, যা ঘুমের সময় মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক চাপ থেকে শুরু হয়।
ব্যথা চিকিৎসা শিল্পের ফাঁদ
ড. তানাকা বলেন, চিকিৎসা শিল্প এই সমস্যাকে টাকার উৎসে পরিণত করেছে। গড়ে প্রতি রোগী বছরে ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ করেন কায়রোপ্র্যাকটর বা ম্যাসাজ সেবায়, যা সমস্যার মূল কারণ— ভুল বালিশ— অবিকৃত রেখেই সাময়িক আরাম দেয়।
একজন ব্যক্তি যদি ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত এমন চিকিৎসা নেন, তাহলে আজীবনে ১,৫০,০০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ হয়— কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলে না।
জাপানি চিকিৎসা পদ্ধতি ও নতুন সমাধান
দীর্ঘ গবেষণার পর ড. তানাকা প্রাচীন জাপানি রিফ্লেক্সোলজির নীতি ও আধুনিক ঘুমবিজ্ঞানকে একত্র করে তৈরি করেন এক নতুন ধরনের বালিশ— ‘Derila Ergo’।
জাপানি চিকিৎসা মতে, ঘুমের সময় শরীরের মেরিডিয়ান পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে সমান্তরাল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিমা বালিশগুলো এই ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এই কারণে তিনি ও তাঁর দল তৈরি করেন এমন এক নকশা যা ঘাড়ের প্রাকৃতিক বাঁক রক্ষা করে, সঠিক চাপবিন্দুতে সহায়তা দেয়, এবং মেরুদণ্ড সোজা রাখে।
‘টেনশন রিলিজ টেকনোলজি’: ঘাড়ের আরাম ফেরাতে বৈপ্লবিক নকশা
এই বালিশে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ চাপবণ্টন প্রযুক্তি, যা ঘাড়ের চারপাশে জমে থাকা টান ধীরে ধীরে কমায়।
- • মাথার ওজন সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়
- • মেরুদণ্ড সোজা রাখে
- • পেশির স্বাভাবিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে
ড. তানাকা বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কয়েক রাত ব্যবহারের মধ্যেই ট্রাপিজিয়াস পেশি দীর্ঘমেয়াদি টান থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে।”
নয় সপ্তাহের বাস্তব অভিজ্ঞতা
একটি নয় সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ‘Derila Ergo’ ব্যবহারকারীদের ঘুমের গুণমান নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে।
- • গভীর ঘুম ৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে
- • মাংসপেশির টান ৬৮% হ্রাস পেয়েছে
- • ব্যথার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে
- • মেলাটোনিনের স্বাভাবিক উৎপাদন ফিরে এসেছে
ড. তানাকা বলেন, “শরীর প্রতিরাতে নিজেকে সারাতে চায়। কেবল তাকে সঠিক সহায়তা দিতে হবে।”
ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন— এই বালিশ ব্যবহারের পর তাঁদের ঘাড়ব্যথা, অনিদ্রা, এমনকি নাকডাকা সমস্যাও কমেছে। কেউ কেউ বলেছেন, বছরের পর বছর চিকিৎসার পর এটাই তাঁদের প্রথম ব্যথামুক্ত সকাল।
অর্থনৈতিক ও শারীরিক সাশ্রয়
যেখানে একবারের ম্যাসাজে লাগে ৬০ ইউরো বা তার বেশি, সেখানে এই বালিশ এককালীন ক্রয়ে বহু বছরের আরাম দেয়। এটি কেবল সাময়িক আরাম নয়— সমস্যার মূল কারণ, অর্থাৎ ঘাড় ও মেরুদণ্ডের ভুল ভঙ্গি সংশোধন করে।
ড. হিরোশি তানাকার আবিষ্কার ঘুমের মান ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে নতুন চিন্তার পথ খুলে দিয়েছে। তাঁর মতে, “প্রতিদিনের ভুল বালিশই আমাদের অজান্তে শরীরকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করছে। সময় থাকতেই সঠিক সমাধান নেওয়া দরকার।”
# ঘাড়ব্যথা,# মেরুদণ্ড,# জাপানি_গবেষণা,# Derila_Ergo,# স্বাস্থ্য,# ঘুম, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট