ইসরায়েল সফরে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তবে মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরে আশঙ্কা রয়েছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
ভ্যান্সের আশাবাদ ও সতর্কতা
মঙ্গলবার ইসরায়েলে সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, “গত এক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহ আমাকে আশাবাদী করেছে যে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে।” তবে তিনি যোগ করেন, “একশ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছি না যে এটি সফল হবে।”
ভ্যান্স জানান, সব ইসরায়েলি বন্দির দেহাবশেষ ফেরত আনা ও হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হবে, কারণ গাজায় মানবিক ও নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি হামাস চুক্তি না মানে, খুব খারাপ কিছু ঘটবে। তবে আমি এমন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে চাই না, যেটা এখনো প্রেসিডেন্টও দেননি। এসব বিষয় খুব জটিল।”
নেতানিয়াহুকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাখতে মার্কিন কূটনীতি
ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্র-আয়োজিত শান্তি চুক্তিতে অটল রাখা। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, নেটানিয়াহু নিজেই চুক্তিকে দুর্বল করতে পারেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা এই সফরকে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, এটি যেন “বিবি-সিটিং।” অন্য এক কর্মকর্তা একে আখ্যা দেন “প্রেসিডেন্টের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ের উপস্থিতি,” যার উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে বুঝিয়ে দেওয়া যে যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে যাতে পরবর্তী ছোটখাটো সংঘর্ষেও তা অটুট থাকে।
নতুন উত্তেজনা ও মার্কিন উদ্বেগ
সপ্তাহান্তে হামাসের হামলায় দুই ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা বাড়ে। প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালায়, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করে যাতে এই হামলার পরও যুদ্ধবিরতি অটুট থাকে। যদিও উভয় পক্ষ একে অপরকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, শেষ পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
ভ্যান্সের অবস্থান ও মধ্যস্থতার পরিকল্পনা
সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, “বিরোধ দেখা দিলে তা সমাধানে আমাদের ক্রমাগত চেষ্টা চালাতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার এই সফরের সঙ্গে গত ৪৮ ঘণ্টার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার—যারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এই শান্তিচুক্তির মূল স্থপতি।
পরবর্তী ৩০ দিনের গুরুত্ব
উইটকফ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, হামাসের সহিংসতার জবাব যেন “অতিরিক্ত নয়, বরং অনুপাতে” হয়। তিনি আরও বলেন, আগামী ৩০ দিনই হবে এই চুক্তি টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
একইসঙ্গে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যাতে পুনর্গঠন আলোচনার আগে হামাসের পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন হয়।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন যে সাম্প্রতিক হামলা হামাস নেতৃত্বের নয়, বরং “অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ।” তিনি বলেছেন, কিছু সদস্য “অতি উৎসাহী” হয়ে পড়েছিল, তবে তিনি মনে করেন দলটি এখনো শান্তিচুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “প্রয়োজনে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।”
সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের “বিশ্বস্ত মিত্ররা” গাজায় প্রবেশ করে হামাসকে “শিক্ষা দিতে” আগ্রহী। কিন্তু তিনি এসব দেশকে আপাতত অপেক্ষা করতে বলেছেন, কারণ “এখনো আশা আছে, হামাস সঠিক কাজটি করবে।”
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমন সতর্কতা, তেমনি রাজনৈতিক টানাপোড়েনও স্পষ্ট। ভ্যান্সের আশাবাদ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন উদ্বেগ—দুয়ের মধ্যে এই কূটনৈতিক ভারসাম্যই এখন অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
# ইসরায়েল,# হামাস,# যুক্তরাষ্ট্র, #জেডি_#ভ্যান্স, #ট্রাম্প_প্রশাসন,# যুদ্ধবিরতি,# গাজা, #মধ্যপ্রাচ্য,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট