০৫:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
উত্তর আটলান্টিক রাইট তিমির সংখ্যা বাড়ছে—বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত উপ-সাহারার ক্ষেতে উড়ে বেড়ানো ছোট বুননপাখি ‘রেড-বিল্ড কুয়েলিয়া’—এক প্রজাতির কৃষিনাশক বিস্ময়, যার সংখ্যা ১৫০ কোটিরও বেশি অডিবলে ‘হ্যারি পটার’ নতুন কণ্ঠে—হ্যারি, হারমায়োনি, রনের ভূমিকায় তরুণ ত্রয়ী বিশ্বের স্মার্টতম নগরীগুলোতে বসবাস কেমন — প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের নতুন সংজ্ঞা মঞ্চে বুকে টেপ—কেন করছেন লর্ড, জানালেন ‘আল্ট্রাসাউন্ড’ ট্যুরে ম্যাচা চায়ের বিশ্বজোড়া উন্মাদনা—জাপানি ঐতিহ্যের মাঝে নকল পণ্য, সংকট ও সংস্কৃতির বিকৃতি প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল পেনএআইয়ের ‘অ্যাটলাস’ ব্রাউজার: গুগল ক্রোমের আধিপত্যে নতুন চ্যালেঞ্জ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঋণ পরিশোধে অপমান সইতে না পেরে প্রাণ দিলেন মনির

চীনা অস্ত্র–নির্ভরতা ঠেকাতে বিকল্পের প্রস্তাব—ক্রিস্টেনসেন

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সিনেট শুনানিতে বলেন, মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি ঢাকার সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে চীনা প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা নিরুৎসাহিত করবেন, স্বচ্ছ ক্রয়প্রক্রিয়া জোরদার করবেন এবং মিত্রদের (অ্যালাইড) আরও সাশ্রয়ী বিকল্প ও যৌথ মহড়ার মাধ্যমে ইন্টারঅপারেবিলিটি বাড়াবেন।


যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও আসন্ন নির্বাচন

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে যাবে—এটি হবে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে তারা নতুন সরকার ও নতুন পথচলা বেছে নেবে।

সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটিতে মনোনয়ন শুনানিতে দেওয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে রয়েছে।”

ঢাকা–ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, তিনি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে কাজ করবেন বলে জানান।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্রসেবায় তার দীর্ঘ কর্মজীবনে “বাংলাদেশ নীতির সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা” রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় পূর্ববর্তী দায়িত্বও অন্তর্ভুক্ত।

‘কমিউনিস্ট চীন’, সাবমেরিন ঘাঁটি ও জে–১০: রিকেটসের প্রশ্ন

উদ্বোধনী বক্তব্যের পর কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন করেন। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর পিট রিকেটস বাংলাদেশের সঙ্গে “কমিউনিস্ট চীন”-এর ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন। তিনি পেকুয়ায় চীনের সহায়তায় নির্মিত প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটির কথা উল্লেখ করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চীনা জে–১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদনের প্রসঙ্গ তোলেন।

রিকেটস বলেন, “যদি এ বিক্রি চূড়ান্ত হয়, তাহলে তা ঢাকাকে চীনা প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ও কৌশলগত সম্পর্কে আবদ্ধ করবে। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন যাতে চীনা প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা নিরুৎসাহিত হয় এবং তাদের প্রতিরক্ষা ক্রয় প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসে?”

‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ ও বিকল্প কৌশল

সাউথ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ভাগ করে নেওয়ার কথা জানিয়ে ক্রিস্টেনসেন বলেন, মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে “চীনের কর্মকাণ্ডজনিত ঝুঁকি—সামুদ্রিক ক্ষেত্রে তাদের সামরিক সম্পৃক্ততা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে তাদের জড়িত থাকার ঝুঁকি—স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব, বিশেষ করে সামরিক–সামরিক সহযোগিতার সুযোগ–সুবিধাগুলো তুলে ধরবেন।”

রিকেটস পরবর্তী প্রশ্নে কংগ্রেসে চলমান ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’-এর প্রসঙ্গ তোলেন—যার লক্ষ্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে নিরুৎসাহিত করার কৌশল প্রণয়ন। তিনি জানতে চান, রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনা প্রতিরক্ষা বিক্রয়ের বিকল্প হিসেবে আর কী করা যেতে পারে।

মিত্র–উন্নত সিস্টেম ও ইন্টারঅপারেবিলিটি

জবাবে ক্রিস্টেনসেন বলেন, “আমাদের মার্কিন সামরিক গ্রুপগুলোর মাধ্যমে আমরা এমন মিত্র–উন্নত (অ্যালাইড) সিস্টেমগুলোও তুলে ধরতে পারি, যেগুলো হয়তো বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য আরও সাশ্রয়ী—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রিমিয়াম সিস্টেমের দাম বহন করা কঠিন। একই সঙ্গে আমরা তাদের সঙ্গে বাড়তি যৌথ মহড়া করে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ইন্টারঅপারেবিলিটিও উৎসাহিত করতে পারি।” সামরিক পরিভাষায় “মিত্র–উন্নত সিস্টেম” বলতে একাধিক দেশের সহযোগিতায় তৈরি অস্ত্রব্যবস্থা বা প্ল্যাটফর্মকে বোঝায়।

নিয়োগ প্রক্রিয়া ও মর্যাদা

শুনানির ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্রিস্টেনসেনকে আর প্রশ্ন করা হয়নি। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের কাউন্সেলর শ্রেণির একজন ক্যারিয়ার কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের “অসাধারণ ও পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত” হিসেবে নিয়োগ পাবেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি ও ‘নতুন এশীয় টাইগার’ মন্তব্য

তার সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “নতুন এশীয় টাইগারদের একজন হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।”

রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও কাজের অঙ্গীকার

তিনি যোগ করেন, “এই মনোনয়নে আমি সম্মানিত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি রুবিও আমার প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অগ্রসর করতে আপনাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা রাখি।”

পরিবার ও ব্যক্তিগত পটভূমি

ক্রিস্টেনসেন উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী ডিয়ান এবং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “গত দুই দশক ধরে তিনি আমার সঙ্গে সারা বিশ্ব ঘুরেছেন—সান সালভাদর থেকে ঢাকা, সেখান থেকে ওমাহা—আমার কূটনৈতিক জীবনে তার ত্যাগ ও সমর্থনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

কৌশলগত অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ক্রিস্টেনসেনের মতে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রায়ই যে মনোযোগ পাওয়ার কথা, তা পায় না—কারণ তার থেকেও বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকে। তিনি বলেন, “পররাষ্ট্রসেবায় আমার কর্মজীবনজুড়ে বাংলাদেশ নীতিতে দুই দশকেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা—ঢাকায় পূর্ব দায়িত্বসহ—থাকার কারণে আমি এর গুরুত্ব ও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত।”

তিনি জানান, বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী করে তোলে। “বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে,” তিনি বলেন।

অর্থনীতি–বাণিজ্য অগ্রাধিকার

অসংখ্য চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে—যা বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা ও ধৈর্যের স্বীকৃতি বলে ক্রিস্টেনসেন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার সুযোগ বাড়ানো, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা ও বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করব।”

রোহিঙ্গা সংকট: অর্থায়ন ও সমন্বয়

তিনি আরও জানান, টানা আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজার এলাকায় বসবাস করছেন। “২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে—উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে,” তিনি বলেন।

ক্রিস্টেনসেন জানান, তিনি নিজে রোহিঙ্গা শিবিরে গেছেন, কাজগুলো দেখেছেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি সতর্ক করেন, “প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অপরিমিত অর্থায়ন দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। আমাদের ওপর চাপ কমাতে আরও বেশি দেশের অর্থায়ন বাড়াতে হবে।” একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য অংশীদারের মাধ্যমে কার্যক্রম সুশৃঙ্খল করা, কাজের পুনরাবৃত্তি কমানো এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। “মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, আমি বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহকর্মীদের—এই কমিটিসহ—সঙ্গে কার্যকর ও টেকসই সমাধানের পথে কাজ করব,” তিনি বলেন।

কূটনৈতিক ক্যারিয়ারের ধাপ

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা তার অফিসিয়াল প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০১৯–২০২১ সালে তিনি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিষয়ক দপ্তরে বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন—যার বর্তমান নামকরণ পরিবর্তিত হয়েছে।

তার অন্য দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাজনৈতিক–সামরিক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর দপ্তরের উপপরিচালক (২০১৬–২০১৯); প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এশিয়া ও প্যাসিফিক উপকমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ স্টাফের পিয়ারসন ফেলো (২০১৫–২০১৬); উত্তর কোরিয়া নীতির বিশেষ প্রতিনিধির বিশেষ সহকারী; পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর সাইবার সমন্বয়কারী; ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদূতাবাসিক; সান সালভাদরে মার্কিন দূতাবাসে উপ–অর্থনৈতিক কাউন্সেলর; রিয়াদে মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক কর্মকর্তা; এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি মার্কিন কনস্যুলেটে ভাইস কনসাল।

ঢাকায় রাষ্ট্রদূত শূন্যতার প্রেক্ষাপট

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে পিটার হাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রদূতশূন্য রয়েছে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে একাধিক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

#tag: চীনা_অস্ত্র, প্রতিরক্ষা_সহযোগিতা, যুক্তরাষ্ট্র_বাংলাদেশ, ব্রেন্ট_ক্রিস্টেনসেন, জে_১০, সাবমেরিন_ঘাঁটি, থিংক_টোয়াইস_অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা, ইন্দো_প্যাসিফিক

জনপ্রিয় সংবাদ

উত্তর আটলান্টিক রাইট তিমির সংখ্যা বাড়ছে—বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত

চীনা অস্ত্র–নির্ভরতা ঠেকাতে বিকল্পের প্রস্তাব—ক্রিস্টেনসেন

০৩:২৮:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সিনেট শুনানিতে বলেন, মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি ঢাকার সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে চীনা প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা নিরুৎসাহিত করবেন, স্বচ্ছ ক্রয়প্রক্রিয়া জোরদার করবেন এবং মিত্রদের (অ্যালাইড) আরও সাশ্রয়ী বিকল্প ও যৌথ মহড়ার মাধ্যমে ইন্টারঅপারেবিলিটি বাড়াবেন।


যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও আসন্ন নির্বাচন

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে যাবে—এটি হবে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে তারা নতুন সরকার ও নতুন পথচলা বেছে নেবে।

সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটিতে মনোনয়ন শুনানিতে দেওয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র পাশে রয়েছে।”

ঢাকা–ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, তিনি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে কাজ করবেন বলে জানান।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্রসেবায় তার দীর্ঘ কর্মজীবনে “বাংলাদেশ নীতির সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা” রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় পূর্ববর্তী দায়িত্বও অন্তর্ভুক্ত।

‘কমিউনিস্ট চীন’, সাবমেরিন ঘাঁটি ও জে–১০: রিকেটসের প্রশ্ন

উদ্বোধনী বক্তব্যের পর কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন করেন। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর পিট রিকেটস বাংলাদেশের সঙ্গে “কমিউনিস্ট চীন”-এর ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন। তিনি পেকুয়ায় চীনের সহায়তায় নির্মিত প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটির কথা উল্লেখ করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চীনা জে–১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদনের প্রসঙ্গ তোলেন।

রিকেটস বলেন, “যদি এ বিক্রি চূড়ান্ত হয়, তাহলে তা ঢাকাকে চীনা প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ও কৌশলগত সম্পর্কে আবদ্ধ করবে। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন যাতে চীনা প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা নিরুৎসাহিত হয় এবং তাদের প্রতিরক্ষা ক্রয় প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসে?”

‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ ও বিকল্প কৌশল

সাউথ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ভাগ করে নেওয়ার কথা জানিয়ে ক্রিস্টেনসেন বলেন, মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে “চীনের কর্মকাণ্ডজনিত ঝুঁকি—সামুদ্রিক ক্ষেত্রে তাদের সামরিক সম্পৃক্ততা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে তাদের জড়িত থাকার ঝুঁকি—স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব, বিশেষ করে সামরিক–সামরিক সহযোগিতার সুযোগ–সুবিধাগুলো তুলে ধরবেন।”

রিকেটস পরবর্তী প্রশ্নে কংগ্রেসে চলমান ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’-এর প্রসঙ্গ তোলেন—যার লক্ষ্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে নিরুৎসাহিত করার কৌশল প্রণয়ন। তিনি জানতে চান, রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনা প্রতিরক্ষা বিক্রয়ের বিকল্প হিসেবে আর কী করা যেতে পারে।

মিত্র–উন্নত সিস্টেম ও ইন্টারঅপারেবিলিটি

জবাবে ক্রিস্টেনসেন বলেন, “আমাদের মার্কিন সামরিক গ্রুপগুলোর মাধ্যমে আমরা এমন মিত্র–উন্নত (অ্যালাইড) সিস্টেমগুলোও তুলে ধরতে পারি, যেগুলো হয়তো বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য আরও সাশ্রয়ী—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রিমিয়াম সিস্টেমের দাম বহন করা কঠিন। একই সঙ্গে আমরা তাদের সঙ্গে বাড়তি যৌথ মহড়া করে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ইন্টারঅপারেবিলিটিও উৎসাহিত করতে পারি।” সামরিক পরিভাষায় “মিত্র–উন্নত সিস্টেম” বলতে একাধিক দেশের সহযোগিতায় তৈরি অস্ত্রব্যবস্থা বা প্ল্যাটফর্মকে বোঝায়।

নিয়োগ প্রক্রিয়া ও মর্যাদা

শুনানির ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্রিস্টেনসেনকে আর প্রশ্ন করা হয়নি। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের কাউন্সেলর শ্রেণির একজন ক্যারিয়ার কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের “অসাধারণ ও পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত” হিসেবে নিয়োগ পাবেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি ও ‘নতুন এশীয় টাইগার’ মন্তব্য

তার সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “নতুন এশীয় টাইগারদের একজন হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।”

রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও কাজের অঙ্গীকার

তিনি যোগ করেন, “এই মনোনয়নে আমি সম্মানিত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি রুবিও আমার প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ। মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অগ্রসর করতে আপনাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা রাখি।”

পরিবার ও ব্যক্তিগত পটভূমি

ক্রিস্টেনসেন উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী ডিয়ান এবং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “গত দুই দশক ধরে তিনি আমার সঙ্গে সারা বিশ্ব ঘুরেছেন—সান সালভাদর থেকে ঢাকা, সেখান থেকে ওমাহা—আমার কূটনৈতিক জীবনে তার ত্যাগ ও সমর্থনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

কৌশলগত অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ক্রিস্টেনসেনের মতে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রায়ই যে মনোযোগ পাওয়ার কথা, তা পায় না—কারণ তার থেকেও বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকে। তিনি বলেন, “পররাষ্ট্রসেবায় আমার কর্মজীবনজুড়ে বাংলাদেশ নীতিতে দুই দশকেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা—ঢাকায় পূর্ব দায়িত্বসহ—থাকার কারণে আমি এর গুরুত্ব ও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত।”

তিনি জানান, বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী করে তোলে। “বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে,” তিনি বলেন।

অর্থনীতি–বাণিজ্য অগ্রাধিকার

অসংখ্য চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে—যা বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা ও ধৈর্যের স্বীকৃতি বলে ক্রিস্টেনসেন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার সুযোগ বাড়ানো, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা ও বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করব।”

রোহিঙ্গা সংকট: অর্থায়ন ও সমন্বয়

তিনি আরও জানান, টানা আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজার এলাকায় বসবাস করছেন। “২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে—উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে,” তিনি বলেন।

ক্রিস্টেনসেন জানান, তিনি নিজে রোহিঙ্গা শিবিরে গেছেন, কাজগুলো দেখেছেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি সতর্ক করেন, “প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অপরিমিত অর্থায়ন দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। আমাদের ওপর চাপ কমাতে আরও বেশি দেশের অর্থায়ন বাড়াতে হবে।” একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও অন্যান্য অংশীদারের মাধ্যমে কার্যক্রম সুশৃঙ্খল করা, কাজের পুনরাবৃত্তি কমানো এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। “মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, আমি বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহকর্মীদের—এই কমিটিসহ—সঙ্গে কার্যকর ও টেকসই সমাধানের পথে কাজ করব,” তিনি বলেন।

কূটনৈতিক ক্যারিয়ারের ধাপ

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা তার অফিসিয়াল প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০১৯–২০২১ সালে তিনি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিষয়ক দপ্তরে বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন—যার বর্তমান নামকরণ পরিবর্তিত হয়েছে।

তার অন্য দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাজনৈতিক–সামরিক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর দপ্তরের উপপরিচালক (২০১৬–২০১৯); প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এশিয়া ও প্যাসিফিক উপকমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ স্টাফের পিয়ারসন ফেলো (২০১৫–২০১৬); উত্তর কোরিয়া নীতির বিশেষ প্রতিনিধির বিশেষ সহকারী; পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর সাইবার সমন্বয়কারী; ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদূতাবাসিক; সান সালভাদরে মার্কিন দূতাবাসে উপ–অর্থনৈতিক কাউন্সেলর; রিয়াদে মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক কর্মকর্তা; এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি মার্কিন কনস্যুলেটে ভাইস কনসাল।

ঢাকায় রাষ্ট্রদূত শূন্যতার প্রেক্ষাপট

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে পিটার হাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রদূতশূন্য রয়েছে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে একাধিক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

#tag: চীনা_অস্ত্র, প্রতিরক্ষা_সহযোগিতা, যুক্তরাষ্ট্র_বাংলাদেশ, ব্রেন্ট_ক্রিস্টেনসেন, জে_১০, সাবমেরিন_ঘাঁটি, থিংক_টোয়াইস_অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা, ইন্দো_প্যাসিফিক