০৮:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
আসন্ন নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোটের সম্ভাবনা—এবি পার্টি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু “বাংলাদেশ প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে”: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নভেম্বর ২০২৫-এ আসছে দক্ষিণ ভারতীয় ১২টি বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা সুনামগঞ্জে গ্রামীণ আধিপত্যকে ঘিরে সংঘর্ষ—গুলিবিদ্ধ ৯ জনসহ আহত ১৫ দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প-শি বৈঠক আগামী বৃহস্পতিবার — এপেক সম্মেলনের আগে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনা ব্যাংকিং খাতে সংস্কার: সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক একীভূতকরণে নতুন বিধিমালা জারি জলপাই সংগ্রহে সহায়তা করায় বিদেশি কর্মীদের বহিষ্কার—পশ্চিম তীরে শতাধিক হামলার অভিযোগ ডিজিটাল যুগে বেড়ে চলেছে অনলাইন সহিংসতা ও আত্ম-ক্ষতিকর কনটেন্ট—আইপিএসের এক বছরের গবেষণায় নতুন চিত্র চীনের প্রযুক্তি ও স্বনির্ভরতার জোরালো অঙ্গীকার দক্ষিণ কোরিয়ার থ্রিলার ‘নো আদার চয়েস’—এক চাকরিচ্যুত মানুষের মরিয়া সংগ্রামে প্রতিশোধ

ওসাকায় ৫০ বছর ধরে বয়ে চলা ওকিনাও উৎসব ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন

উৎসবের শুরু ও উদ্দেশ্য

১৯৭৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ওসাকার তাইশো ওয়ার্ড এলাকায়, যেখানে বহু ওকিনাও প্রদেশের মানুষ বসবাস করতেন, অনুষ্ঠিত হয় এক ঐতিহ্যবাহী নৃত্য উৎসব। এতে অংশ নেন কানসাই অঞ্চলে আসা তরুণ ওকিনাওরা। এই নৃত্য উৎসবটি ছিল মূলত ‘আইসা’ (Eisa) — ওকিনাওর আনুষ্ঠানিক নাচ, যা সাধারণত বোন (Bon) উৎসবে আগত আত্মাদের সম্মানে পরিবেশিত হয়।
তবে ওসাকার এই উৎসবের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। কর্মসংস্থানের জন্য মূল ভূখণ্ডে আসা তরুণরা যে বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছিলেন, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও গৌরব পুনরুদ্ধার করার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলাই ছিল এর লক্ষ্য।


প্রথম উৎসবের চিত্রনাট্য

প্রথম উৎসবে তাঁবু ভাড়া দেওয়া যায়নি, দর্শকও ছিল তুলনামূলক কম। তবুও প্রায় ২০০ জন তরুণ ওকিনাওর নৃত্যশিল্পী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আজ ৭২ বছর বয়সী ইয়োশিমরি কাকিহানা, ওকিনাওর মিয়াকো দ্বীপের বাসিন্দা। তিনি স্মরণ করেন, উৎসবের দিন আকাশ ছিল গভীর নীল, আর স্থানটি “হাসিমুখে ভরপুর এক বাগানের মতো”।
এই আয়োজনের নেতৃত্ব দেয় তরুণ ওকিনাওদের সংগঠন ‘গাজিমারু নো কাই’ (Gajimaru no Kai), যা গঠিত হয় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে। তাদের ফ্লায়ারে লেখা ছিল তিনটি আহ্বান— “ওকিনাওর যুবসমাজ, ঐক্যবদ্ধ হও”, “দলবদ্ধ অভিবাসীদের জীবন ও অধিকার রক্ষা করো”, “ওকিনাওর সংস্কৃতি বিকাশ করো।”


বৈষম্য ও বেদনায় পুঁক্ত এক ঘটনা

১৯৭২ সালে, ২৩ বছর বয়সী এক ওকিনাও যুবক হাইস্কুল শেষে কানসাই অঞ্চলে যায় গোষ্ঠিভিত্তিক কর্মসংস্থান প্রোগ্রামে। পরবর্তীতে বনভূমিতে অগ্নিসংযোগের এক ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ভোরে যে সংস্থায় কাজ করতেন, তার প্রেসিডেন্টের বাড়িতে প্রবেশ করে গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্টের স্ত্রী নিহত হন।
জিজ্ঞাসাবাদে যুবক বলেন, “আমার জীবন নষ্ট করেছে ওই প্রেসিডেন্ট।”
মানবাধিকার সংগঠন ‘বুরাকু লিবারেশন লিগ’-এর নারার শাখার কর্মকর্তা সেইকি সাকিহামা (৭৮) বলেন, ঘটনাটির পেছনে মূল ভূখণ্ডে ওকিনাওদের প্রতি গভীর বৈষম্যই দায়ী। ওই প্রেসিডেন্ট তাকে ‘অক্ষম’ ও ‘অযোগ্য’ বলে অপমান করতেন, যার ফলে মানসিক সংকটে পড়ে যুবক ১৬ মাস পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীতে নানা চাকরি করেও পুনরায় সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা।


প্রথম আদালতের রায়ে যুবককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করলেও কোনো ছাড় দেয়নি।
রায় ঘোষণার সময় সাকিহামা প্রতিবাদ করে বলেন, “আসলে দোষী কে?” — এরপর তাকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সমর্থকরা আগুন ও হত্যার নিন্দা জানালেও তারা বিশ্বাস করেন, এটি কেবল এক ব্যক্তির অপরাধ নয়; বরং সমাজের বৈষম্য ও নিয়োগকর্তার নির্যাতনের ফল।
যুবক পরবর্তীতে আপিল করেন, কিন্তু ১৯৭৪ সালে ওসাকায় আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শেষ নোটে লেখা ছিল— “আমি বাঁচার কোনো আশা নেই।”


ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি

কাকিহানা, যিনি গাজিমারু নো কাইয়ের সদস্য ছিলেন, এই যুবকের সমর্থকদের একজন হয়ে ওঠেন। হাইস্কুল শেষে ওকিনাও থেকে কোবে এসে তিনি ওই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। মৃত্যুর পর যুবকের লেখা খসড়া নোট পড়ে কাকিহানার মনে গভীর দুঃখের জন্ম হয়। তিনি বলেন, “তাঁর মৃত্যু ছিল কেবল আমাদের সামাজিক বেদনার একটি প্রতীক।”
কাকিহানা ও তাঁর সহকর্মীরা, হামাহিগা দ্বীপের বাসিন্দা তোশিনোরি তামাকির নেতৃত্বে, তরুণ ওকিনাওদের কর্মপরিস্থিতি অনুসন্ধান শুরু করেন।
ওকিনাও প্রদেশের ওসাকা অফিস থেকে প্রায় ১,২০০ ওকিনাও কর্মীর তালিকা সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয় — “তোমরা কেমন আছ?” কিন্তু প্রায় ৭০ শতাংশ চিঠি ফেরত আসে কারণ ঠিকানা ভুল ছিল।
বাকি উত্তরগুলিতে উঠে আসে বাস্তব চিত্র — নিম্ন বেতন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, ওভারটাইমের চাপ এবং শিক্ষার সুযোগের অভাব। কোম্পানির হোস্টেলে ফোনে যোগাযোগ সীমিত ছিল, তাই পরিবারের সঙ্গে কষ্ট ভাগ করে নেওয়াও সম্ভব ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে তারা আয়োজন করেন “কানসাই অঞ্চলের তরুণ ওকিনাওদের সমাবেশ”, যার উদ্বোধন হয় ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ওসাকার তাইশো ওয়ার্ডের ওকিনাও কৈকান কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে প্রায় ২৩০ জন অংশগ্রহণ করেন।
কাকিহানা প্রস্তাব দেন সংগঠনের নাম রাখা হোক “গাজিমারু”, এক প্রকার বনিয়ন গাছের নাম, যা প্রতীক ঐক্য ও দৃঢ়তার। সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়, আর সমাপনী হয় ওকিনাওর ঐতিহ্যবাহী গান ‘হিয়ামিকাচি-বুশি’ দিয়ে।


প্রথম Eisa উৎসব ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রথম Eisa উৎসবের প্রস্তুতিতে ২২ বছর বয়সী কাকিহানা সহ সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের পাশে দাঁড়ান ওসাকার বুরাকু মুক্তি আন্দোলনের কর্মী ওকিনাওর ভাস্কর মিনোরু কিনজো।
১৯৭০ ও ৮০ দশকে প্রকাশিত সাংস্কৃতিক ম্যাগাজিন ‘আওই উমি’ হয়ে ওঠে সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম, আর শিল্পী হিরোশি গিমা সহায়তা করেন পোস্টার তৈরিতে।


উৎসবের দিন স্থানীয় বয়স্করাও একে একে এসে সহায়তা দেন, কেউ কেউ হাতে তুলে দেন এক হাজার ইয়েন দান হিসেবে। প্রায় ২০০ নৃত্যশিল্পী ও ২০০ দর্শকের অংশগ্রহণে উৎসবটি ছিল ছোট হলেও গভীরভাবে অর্থবহ।
এক দর্শক বলেছিলেন, “তোমরা হয়তো মহান নর্তক নও, কিন্তু এই নাচ আনন্দে ভরপুর।”
তবে, সব প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না। এক প্রবীণ ওকিনাও লোক চিৎকার করে বলেন, “লজ্জা নেই তোমাদের?” — এবং পাথর ছুড়ে মারেন। কাকিহানা পালটা প্রশ্ন করেন, “তোমার কি ওকিনাওর গৌরববোধ হারিয়ে গেছে?”
তবুও তাঁরা থামেননি — তাঁদের নাচ ছিল সেই যুবকের মৃত্যু ও সংগ্রামের স্মৃতিবাহী, তাই পিছিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল।


উৎসবের বিকাশ ও এখনকার চিত্র

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যারা আগে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, সেই প্রবীণ ওকিনাওরাও উৎসবে আসতে শুরু করেন, হাতে দান ও উৎসাহবাণী নিয়ে।
কাকিহানা বলেন, “তারা হয়তো মূল ভূখণ্ডে বসবাস করে নিজের উৎপত্তি লুকিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে ওকিনাওরূপে নিজেদের হৃদয় রক্ষা করার চেষ্টা করতেন।”
১৯৯০-এর দশক থেকে ওসাকার Eisa উৎসব আরও বিস্তৃত হয় — ওকিনাও সংস্কৃতি জাপানের মূল ধারায় জায়গা করে নেয়। আজ এতে অংশ নেয় ১৪টি দল, টোকিও ও ওকিনাও প্রদেশ থেকেও আসে অংশগ্রহণকারী; দর্শকসংখ্যা প্রায় ২০,০০০।
তবুও বৈষম্য পুরোপুরি মুছে যায়নি। ১৯৯৪ সালে জাপান হাইস্কুল বেসবল ফেডারেশন কোশিয়েন স্টেডিয়ামে Eisa পরিবেশনা নিষিদ্ধ করে তাকে “অদ্ভুত” বলে মন্তব্য করে। তখন কাকিহানা দর্শক আসন থেকে পারান্কু (ওকিনাওর ছোট হাতে বাজানো ড্রাম) বাজাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “এটা ছিল ওকিনাওর সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রতীক — বৈষম্য এখনও শেষ হয়নি।”
২০০২ সালের পর থেকে কাকিহানা ওসাকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের শিশুদের Eisa শেখান। ২০২২ সালে মিয়াকো দ্বীপে ফিরে যাওয়ার পরও তিনি প্রতি বছর ওসাকার তাইশো ওয়ার্ডের শিশুদের জন্য নিজ হাতে বানানো বাচি (ঢাকের কাঠি) পাঠিয়ে দেন।
৭২ বছর বয়সে তাঁর বার্তা আজও অম্লান—
“বাচিগুলো প্রজন্মের সংযোগের প্রতীক। এগুলো উঁচু করে ধরো— তবেই পাবে প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার শক্তি ও নিজের প্রতি বিশ্বাস।”

জনপ্রিয় সংবাদ

আসন্ন নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোটের সম্ভাবনা—এবি পার্টি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু

ওসাকায় ৫০ বছর ধরে বয়ে চলা ওকিনাও উৎসব ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন

০৩:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

উৎসবের শুরু ও উদ্দেশ্য

১৯৭৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ওসাকার তাইশো ওয়ার্ড এলাকায়, যেখানে বহু ওকিনাও প্রদেশের মানুষ বসবাস করতেন, অনুষ্ঠিত হয় এক ঐতিহ্যবাহী নৃত্য উৎসব। এতে অংশ নেন কানসাই অঞ্চলে আসা তরুণ ওকিনাওরা। এই নৃত্য উৎসবটি ছিল মূলত ‘আইসা’ (Eisa) — ওকিনাওর আনুষ্ঠানিক নাচ, যা সাধারণত বোন (Bon) উৎসবে আগত আত্মাদের সম্মানে পরিবেশিত হয়।
তবে ওসাকার এই উৎসবের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। কর্মসংস্থানের জন্য মূল ভূখণ্ডে আসা তরুণরা যে বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছিলেন, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও গৌরব পুনরুদ্ধার করার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলাই ছিল এর লক্ষ্য।


প্রথম উৎসবের চিত্রনাট্য

প্রথম উৎসবে তাঁবু ভাড়া দেওয়া যায়নি, দর্শকও ছিল তুলনামূলক কম। তবুও প্রায় ২০০ জন তরুণ ওকিনাওর নৃত্যশিল্পী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আজ ৭২ বছর বয়সী ইয়োশিমরি কাকিহানা, ওকিনাওর মিয়াকো দ্বীপের বাসিন্দা। তিনি স্মরণ করেন, উৎসবের দিন আকাশ ছিল গভীর নীল, আর স্থানটি “হাসিমুখে ভরপুর এক বাগানের মতো”।
এই আয়োজনের নেতৃত্ব দেয় তরুণ ওকিনাওদের সংগঠন ‘গাজিমারু নো কাই’ (Gajimaru no Kai), যা গঠিত হয় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে। তাদের ফ্লায়ারে লেখা ছিল তিনটি আহ্বান— “ওকিনাওর যুবসমাজ, ঐক্যবদ্ধ হও”, “দলবদ্ধ অভিবাসীদের জীবন ও অধিকার রক্ষা করো”, “ওকিনাওর সংস্কৃতি বিকাশ করো।”


বৈষম্য ও বেদনায় পুঁক্ত এক ঘটনা

১৯৭২ সালে, ২৩ বছর বয়সী এক ওকিনাও যুবক হাইস্কুল শেষে কানসাই অঞ্চলে যায় গোষ্ঠিভিত্তিক কর্মসংস্থান প্রোগ্রামে। পরবর্তীতে বনভূমিতে অগ্নিসংযোগের এক ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ভোরে যে সংস্থায় কাজ করতেন, তার প্রেসিডেন্টের বাড়িতে প্রবেশ করে গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্টের স্ত্রী নিহত হন।
জিজ্ঞাসাবাদে যুবক বলেন, “আমার জীবন নষ্ট করেছে ওই প্রেসিডেন্ট।”
মানবাধিকার সংগঠন ‘বুরাকু লিবারেশন লিগ’-এর নারার শাখার কর্মকর্তা সেইকি সাকিহামা (৭৮) বলেন, ঘটনাটির পেছনে মূল ভূখণ্ডে ওকিনাওদের প্রতি গভীর বৈষম্যই দায়ী। ওই প্রেসিডেন্ট তাকে ‘অক্ষম’ ও ‘অযোগ্য’ বলে অপমান করতেন, যার ফলে মানসিক সংকটে পড়ে যুবক ১৬ মাস পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীতে নানা চাকরি করেও পুনরায় সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা।


প্রথম আদালতের রায়ে যুবককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করলেও কোনো ছাড় দেয়নি।
রায় ঘোষণার সময় সাকিহামা প্রতিবাদ করে বলেন, “আসলে দোষী কে?” — এরপর তাকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সমর্থকরা আগুন ও হত্যার নিন্দা জানালেও তারা বিশ্বাস করেন, এটি কেবল এক ব্যক্তির অপরাধ নয়; বরং সমাজের বৈষম্য ও নিয়োগকর্তার নির্যাতনের ফল।
যুবক পরবর্তীতে আপিল করেন, কিন্তু ১৯৭৪ সালে ওসাকায় আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শেষ নোটে লেখা ছিল— “আমি বাঁচার কোনো আশা নেই।”


ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি

কাকিহানা, যিনি গাজিমারু নো কাইয়ের সদস্য ছিলেন, এই যুবকের সমর্থকদের একজন হয়ে ওঠেন। হাইস্কুল শেষে ওকিনাও থেকে কোবে এসে তিনি ওই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। মৃত্যুর পর যুবকের লেখা খসড়া নোট পড়ে কাকিহানার মনে গভীর দুঃখের জন্ম হয়। তিনি বলেন, “তাঁর মৃত্যু ছিল কেবল আমাদের সামাজিক বেদনার একটি প্রতীক।”
কাকিহানা ও তাঁর সহকর্মীরা, হামাহিগা দ্বীপের বাসিন্দা তোশিনোরি তামাকির নেতৃত্বে, তরুণ ওকিনাওদের কর্মপরিস্থিতি অনুসন্ধান শুরু করেন।
ওকিনাও প্রদেশের ওসাকা অফিস থেকে প্রায় ১,২০০ ওকিনাও কর্মীর তালিকা সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয় — “তোমরা কেমন আছ?” কিন্তু প্রায় ৭০ শতাংশ চিঠি ফেরত আসে কারণ ঠিকানা ভুল ছিল।
বাকি উত্তরগুলিতে উঠে আসে বাস্তব চিত্র — নিম্ন বেতন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, ওভারটাইমের চাপ এবং শিক্ষার সুযোগের অভাব। কোম্পানির হোস্টেলে ফোনে যোগাযোগ সীমিত ছিল, তাই পরিবারের সঙ্গে কষ্ট ভাগ করে নেওয়াও সম্ভব ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে তারা আয়োজন করেন “কানসাই অঞ্চলের তরুণ ওকিনাওদের সমাবেশ”, যার উদ্বোধন হয় ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ওসাকার তাইশো ওয়ার্ডের ওকিনাও কৈকান কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে প্রায় ২৩০ জন অংশগ্রহণ করেন।
কাকিহানা প্রস্তাব দেন সংগঠনের নাম রাখা হোক “গাজিমারু”, এক প্রকার বনিয়ন গাছের নাম, যা প্রতীক ঐক্য ও দৃঢ়তার। সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়, আর সমাপনী হয় ওকিনাওর ঐতিহ্যবাহী গান ‘হিয়ামিকাচি-বুশি’ দিয়ে।


প্রথম Eisa উৎসব ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রথম Eisa উৎসবের প্রস্তুতিতে ২২ বছর বয়সী কাকিহানা সহ সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের পাশে দাঁড়ান ওসাকার বুরাকু মুক্তি আন্দোলনের কর্মী ওকিনাওর ভাস্কর মিনোরু কিনজো।
১৯৭০ ও ৮০ দশকে প্রকাশিত সাংস্কৃতিক ম্যাগাজিন ‘আওই উমি’ হয়ে ওঠে সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম, আর শিল্পী হিরোশি গিমা সহায়তা করেন পোস্টার তৈরিতে।


উৎসবের দিন স্থানীয় বয়স্করাও একে একে এসে সহায়তা দেন, কেউ কেউ হাতে তুলে দেন এক হাজার ইয়েন দান হিসেবে। প্রায় ২০০ নৃত্যশিল্পী ও ২০০ দর্শকের অংশগ্রহণে উৎসবটি ছিল ছোট হলেও গভীরভাবে অর্থবহ।
এক দর্শক বলেছিলেন, “তোমরা হয়তো মহান নর্তক নও, কিন্তু এই নাচ আনন্দে ভরপুর।”
তবে, সব প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না। এক প্রবীণ ওকিনাও লোক চিৎকার করে বলেন, “লজ্জা নেই তোমাদের?” — এবং পাথর ছুড়ে মারেন। কাকিহানা পালটা প্রশ্ন করেন, “তোমার কি ওকিনাওর গৌরববোধ হারিয়ে গেছে?”
তবুও তাঁরা থামেননি — তাঁদের নাচ ছিল সেই যুবকের মৃত্যু ও সংগ্রামের স্মৃতিবাহী, তাই পিছিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল।


উৎসবের বিকাশ ও এখনকার চিত্র

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যারা আগে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, সেই প্রবীণ ওকিনাওরাও উৎসবে আসতে শুরু করেন, হাতে দান ও উৎসাহবাণী নিয়ে।
কাকিহানা বলেন, “তারা হয়তো মূল ভূখণ্ডে বসবাস করে নিজের উৎপত্তি লুকিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে ওকিনাওরূপে নিজেদের হৃদয় রক্ষা করার চেষ্টা করতেন।”
১৯৯০-এর দশক থেকে ওসাকার Eisa উৎসব আরও বিস্তৃত হয় — ওকিনাও সংস্কৃতি জাপানের মূল ধারায় জায়গা করে নেয়। আজ এতে অংশ নেয় ১৪টি দল, টোকিও ও ওকিনাও প্রদেশ থেকেও আসে অংশগ্রহণকারী; দর্শকসংখ্যা প্রায় ২০,০০০।
তবুও বৈষম্য পুরোপুরি মুছে যায়নি। ১৯৯৪ সালে জাপান হাইস্কুল বেসবল ফেডারেশন কোশিয়েন স্টেডিয়ামে Eisa পরিবেশনা নিষিদ্ধ করে তাকে “অদ্ভুত” বলে মন্তব্য করে। তখন কাকিহানা দর্শক আসন থেকে পারান্কু (ওকিনাওর ছোট হাতে বাজানো ড্রাম) বাজাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “এটা ছিল ওকিনাওর সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রতীক — বৈষম্য এখনও শেষ হয়নি।”
২০০২ সালের পর থেকে কাকিহানা ওসাকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের শিশুদের Eisa শেখান। ২০২২ সালে মিয়াকো দ্বীপে ফিরে যাওয়ার পরও তিনি প্রতি বছর ওসাকার তাইশো ওয়ার্ডের শিশুদের জন্য নিজ হাতে বানানো বাচি (ঢাকের কাঠি) পাঠিয়ে দেন।
৭২ বছর বয়সে তাঁর বার্তা আজও অম্লান—
“বাচিগুলো প্রজন্মের সংযোগের প্রতীক। এগুলো উঁচু করে ধরো— তবেই পাবে প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার শক্তি ও নিজের প্রতি বিশ্বাস।”