তাইওয়ানের প্রধান বিরোধী দল কুওমিনতাঙ (কেএমটি)-এর নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন চীনপন্থী রাজনীতিবিদ চেং লি-উন। দলীয় ভোটে অল্প ব্যবধানে জয়ী হয়ে তিনি কেএমটির ইতিহাসে তৃতীয় নারী নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন তাইওয়ানের রাজনীতিতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচনে জয় ও ঐক্যের প্রতিশ্রুতি
শনিবার অনুষ্ঠিত কেএমটির নেতৃত্ব নির্বাচনে চেং লি-উন ৫০.২ শতাংশ ভোট পেয়ে অন্য পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারান। বিদায়ী চেয়ারম্যান এরিক চু এবার প্রার্থী হননি।
বিজয়ের পর চেং বলেন, “নির্বাচনের শেষ মানেই ঐক্যের শুরু। আমরা শুধু কুওমিনতাঙ নয়, সমগ্র তাইওয়ানকে ঐক্যবদ্ধ করব।”

চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অবস্থান
চেং লি-উন দীর্ঘদিন ধরেই বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে। তিনি ‘১৯৯২ কনসেনসাস’-এর সমর্থক, যার মাধ্যমে তাইওয়ান ও চীনকে এক চীনের অংশ হিসেবে দেখা হয়। বেইজিং এই নীতিকে নিজেদের পক্ষে ব্যাখ্যা করে, যদিও বর্তমান প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করে বলে, “তাইওয়ান বাস্তবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিদার।”
বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া ও শুভেচ্ছা
চেং লি-উনের জয়ের পর চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিং তাঁকে অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা, সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শি আশা প্রকাশ করেন যে দুই দলের মধ্যে বোঝাপড়া আরও গভীর হবে এবং “জাতীয় পুনর্মিলন” প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
প্রতিরক্ষা বাজেট ও মার্কিন সম্পর্ক
প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের প্রশাসন সামরিক ব্যয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে, যা বর্তমানে সংসদে পর্যালোচনাধীন। তবে চেং লি-উন জিডিপির ৫ শতাংশ সামরিক ব্যয়ের প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি। তাঁর মতে “প্রতিরক্ষা ব্যয়ে প্রতিযোগিতা তাইওয়ানের পক্ষে নয়।”
তাইওয়ানের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র, যারা চীনের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় দ্বীপটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারের আহ্বান জানাচ্ছে।

বিরোধী জোট ও সরকারের ওপর চাপ
২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কেএমটি-নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট একাধিক বিতর্কিত বিল পাস করেছে। এসব বিল শাসক ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)-এর ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করছে বলে সমালোচনা উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিউ চাও-লুং মনে করেন, চেং লি-উনের নেতৃত্বে কেএমটি প্রেসিডেন্ট লাইয়ের সামরিক বাজেট অনুমোদনে নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও ডিপিপির সতর্কতা
চেং ঘোষণা করেছেন, “আমার মেয়াদকালে কুওমিনতাঙকে তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করব এবং ২০২৮ সালে পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরব।”
অন্যদিকে ডিপিপি জানিয়েছে, নতুন নেত্রী যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেন। তারা চেং ও তাঁর দলকে চীনের প্রভাব ও রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

উপসংহার
চেং লি-উনের নেতৃত্বে কুওমিনতাঙের পথচলা এখন অনেকাংশে নির্ভর করবে তাঁর ভারসাম্য রক্ষার সক্ষমতার ওপর — একদিকে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, অন্যদিকে তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সার্বভৌম অবস্থান বজায় রাখা।
#
তাইওয়ান, কুওমিনতাঙ, চেং লি-উন, চীন, শি জিনপিং, প্রতিরক্ষা বাজেট, ডিপিপি, আঞ্চলিক রাজনীতি, সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















