প্যারিসে চলছে শিল্পের নবজাগরণ। রাষ্ট্রনির্ভর জাদুঘরগুলোর পাশে এখন উজ্জ্বলভাবে উঠে এসেছে তিনটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ফাউন্ডেশন — কার্টিয়ে, লুই ভুইতঁ ও পিনো কালেকশন। বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো আর্ট বাসেল প্যারিসের সঙ্গে সমান তালে নতুন প্রদর্শনী নিয়ে হাজির, শহরের শিল্পচেতনায় যোগ করছে নতুন প্রাণ।
প্যারিসে ব্যক্তিগত সম্পদের শিল্পচর্চা
প্যারিসে ঐতিহ্যগতভাবে শিল্পের কেন্দ্র ল্যুভর, মিউজে দ’র্সে কিংবা পম্পিদু সেন্টারের মতো রাষ্ট্রনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোই নেতৃত্বে ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ফাউন্ডেশনগুলোও শিল্পচর্চার নতুন পরিসর তৈরি করছে।
এই মাসে একসঙ্গে তিনটি বড় প্রদর্শনী উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্যারিসে শুরু হয়েছে শিল্পউৎসবের মৌসুম।

- কার্টিয়ে ফাউন্ডেশন ফর কনটেম্পোরারি আর্ট ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সম্প্রতি বুলেভার্ড রাসপাইল থেকে সরিয়ে ল্যুভরের কাছের ঐতিহাসিক প্লাস দ্য পালে রয়্যাল-এ স্থানান্তর করা হয়েছে। ১৮৫৫ সালে নির্মিত এই ভবনটি এক সময় একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর ছিল, যা স্থপতি জ্যাঁ নুভেলের নকশায় নতুন করে সাজানো হয়েছে।
এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী “Exposition Générale” — ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ইতিহাসকেই কেন্দ্র করে, যেখানে ১০০ জনেরও বেশি শিল্পীর প্রায় ৬০০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। - ফঁদাসিও লুই ভুইতঁ, স্থপতি ফ্র্যাঙ্ক গেহরির নকশায় ২০১৪ সালে নির্মিত, এবার আয়োজন করেছে জার্মান শিল্পী গেরহার্ড রিখটার-এর বিশাল একক প্রদর্শনী।
- বুর্স দ্য কমার্স – পিনো কালেকশন, যা বিলাসবহুল ব্র্যান্ড গুচ্চি ও ক্রিস্টিজ, নিলামঘরের মালিক ফ্রাঁসোয়া পিনোর ব্যক্তিগত প্রকল্প, সেখানে চলছে “Minimal” শীর্ষক মিনিমালিজম প্রদর্শনী।
রিখটার প্রদর্শনী: শিল্পের বিস্তৃত রূপ
৯৩ বছর বয়সী রিখটার এখনো কোলনে বসবাস করেন এবং যদিও তিনি ২০১৭ সালে চিত্রাঙ্কন থামিয়েছেন, তাঁর শিল্পচর্চা আজও অনুপ্রেরণার উৎস। প্রদর্শনীতে তাঁর ৬০ বছরের কর্মজীবনের ২৭৫টি কাজ ৩৪টি গ্যালারিতে সাজানো হয়েছে।
রিখটারের কাজের পরিসর বিশাল — ফটো-রিয়ালিস্টিক “Kerze (Candle)” (১৯৮২) থেকে শুরু করে বিমূর্ত রঙের বিস্ফোরণ “Gudrun” (১৯৮৭)।
তাঁর “18 October 1977” (১৯৮৮) সিরিজটি পশ্চিম জার্মানির বামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাডার-মাইনহফ সদস্যদের মৃত্যুকে স্মরণ করে, যা এবার নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট থেকে ধার নেওয়া হয়েছে।
পিনো কালেকশন: মিনিমালিজমের নতুন ব্যাখ্যা
প্রাক্তন শেয়ারবাজার ভবন বুর্স দ্য কমার্স এখন পিনোর মিনিমালিজমের মন্দির। নিউইয়র্কের ডিয়া আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক জেসিকা মর্গান এই প্রদর্শনীর অতিথি কিউরেটর।
প্রদর্শনীর ৮০ শতাংশই পিনোর সংগ্রহ থেকে — এগনেস মার্টিনের “White Flower” (১৯৬০), ড্যান ফ্ল্যাভিন, রবার্ট রাইম্যান ও ডোনাল্ড জাডের কাজসহ। বাকি অংশ আন্তর্জাতিক ঋণ থেকে সংগৃহীত।

এখানে রয়েছে জাপানের Mono-ha আন্দোলনের কাজ — যেখানে ১৯৬০-এর দশকে শিল্পীরা প্রাকৃতিক বা দৈনন্দিন বস্তুগুলোকেই দার্শনিক আঙ্গিকে সাজাতেন।
বৃহৎ রোটুন্ডা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে মেগ ওয়েবস্টারের “Circle of Branches” (২০২৫) — প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বিশাল ভাস্কর্য যা দর্শকদের ঘিরে রাখে।
কার্টিয়েরের নতুন ঘর: শিল্প ও ইতিহাসের মেলবন্ধন
কার্টিয়ে ফাউন্ডেশন এবার ৯১,০০০ বর্গফুটের বিশাল ভবনে নতুন যাত্রা শুরু করেছে, যেখানে তিনটি প্রদর্শনী স্তর ও কেন্দ্রে রয়েছে একটি নাটকীয় অ্যাট্রিয়াম।
প্রথম প্রদর্শনী “Exposition Générale”-এ রয়েছে বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্ম —
- সোলাঞ্জ পেসোয়ার পাখির পালকে তৈরি বিশাল ভাস্কর্য “Miracéus” (২০১৪–১৮)
- ম্যাথিউ বার্নি-র ইনস্টলেশন “Cremaster 4” (১৯৯৪)
- উইলিয়াম এগলস্টনের “Kyoto Series” (২০০১)
- জোয়ান মিচেল-এর তেলচিত্র “La Grande Vallée VI” (১৯৮৪)।
কার্টিয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক গ্রাজিয়া কোয়ারোনি বলেন, “এটি এক সময় প্যারিসের প্রথম দিকের ডিপার্টমেন্ট স্টোর ছিল — তাই আমরা ইতিহাসের সেই ধারণা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। পুরোনো সংগ্রহগুলো আজও সময়োপযোগী ও সতেজ।”

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সৃজনশীল ঐক্য
১৯৮০-এর দশকে যখন কার্টিয়ে ফাউন্ডেশন শুরু হয়, তখন এটি ছিল প্যারিসের শিল্পজগতে এক নবীন সংযোজন। এখন লুই ভুইতঁ ও পিনো কালেকশন তার সহযাত্রী।
কোয়ারোনি বলেন, “আমরা এখন আর একা নই — আমরা সবাই একে অপরকে উৎকর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছি।”
#প্যারিস_শিল্প_প্রদর্শনী #কার্টিয়েফাউন্ডেশন #লুইভুইতঁ #পিনোকালেকশন #আর্টবাসেলপ্যারিস #গেরহার্ডরিখটার #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















