ব্রিস্টল চিড়িয়াখানার একটি ভিডিওতে ‘একলা’ গরিলার ছবি ভাইরাল হওয়ার পর জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিডিওর ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে—গরিলাগুলো মোটেও দুঃখিত নয়, বরং তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও শান্ত পরিবেশে রয়েছে।
বৃষ্টির দিনে শান্ত গরিলারা
বৃষ্টিভেজা বিকেলে ব্রিস্টল চিড়িয়াখানার পশ্চিম আফ্রিকার নিম্নভূমির গরিলাগুলো লেটুস ও সিরিয়াল খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তাদের মুখভঙ্গি অনেকের কাছে বিমর্ষ মনে হলেও, স্তন্যপায়ী প্রাণীর তত্ত্বাবধায়ক সারা গেডম্যান জানালেন, “তারা দুঃখিত নয়—বরং একদম স্বাভাবিক।”
ভিডিও ভাইরাল ও ভুল ব্যাখ্যা
সম্প্রতি এক ‘আরবান এক্সপ্লোরার’ বেআইনিভাবে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে এক গরিলার কাচে টোকা মারার দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে একটি সংবাদপত্রে লেখা হয়, “বিশ্বের সবচেয়ে একলা গরিলা ব্রিস্টলে।”
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা নিয়মিত গরিলাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রাণীগুলো একেবারে ভালো আছে।

গরিলার মুখভঙ্গি মানেই মানুষের মতো নয়
সারা গেডম্যান ব্যাখ্যা দেন, “মানুষ হাসলে খুশি বোঝায়, কিন্তু গরিলার হাসি আসলে আক্রমণের ইঙ্গিত। তারা অনুভূতি প্রকাশ করে দেহভঙ্গি ও আচরণের মাধ্যমে।”
ভাইরাল ছবিতে যে গরিলার মুখভঙ্গি দেখা গেছে, তা ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ—যার মানে শান্ত এবং আরামদায়ক অবস্থায় থাকা।
পরিবারসহ সামাজিক জীবনে তারা পরিপূর্ণ
গরিলারা দর্শকশূন্যতায় কষ্ট পাচ্ছে না বলে জানান গেডম্যান। “মানুষ আসুক বা না আসুক, তাদের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না। তারা পারিবারিক দলে থাকে—একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ‘সিলভারব্যাক’ জক (বিয়াল্লিশ বছর), তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক মাদি ও তাদের বাচ্চারা। এই সামাজিক কাঠামোই তাদের স্বাভাবিক জীবনের অনুকরণ।”
চিড়িয়াখানা বন্ধ হলেও যত্নে ঘাটতি নেই
তিন বছর আগে চিড়িয়াখানাটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং অধিকাংশ প্রাণী নতুন স্থানে সরানো হয়। তবে গরিলাদের নতুন ‘আফ্রিকান ফরেস্ট’ আবাসন এখনো নির্মাণাধীন। তাই তারা পুরোনো স্থানে থেকেই পূর্ণ যত্নে আছে—প্রতিদিন দেখা হয় তত্ত্বাবধায়ক, পশুচিকিৎসক ও গবেষকদের সঙ্গে।
তবে অনুপ্রবেশের ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে রাতের বেলায় তাদের ঘরের ভেতরেই থাকতে হয়।

কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট বক্তব্য
ব্রিস্টল জুলজিক্যাল সোসাইটির প্রধান নির্বাহী জাস্টিন মরিস বলেন, “তাদের পরিত্যক্ত বলা হাস্যকর। দর্শক না থাকলেও যত্ন ও ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই।”
তিনি জানান, আগামী বসন্তে গরিলারা নতুন স্থাপনায় স্থানান্তরিত হবে, যেখানে দর্শকরা আবার তাদের দেখতে পারবেন।
সংরক্ষণ ও প্রজনন কর্মসূচি
বন্যপ্রাণীতে পশ্চিম নিম্নভূমির গরিলারা এখন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে—শিকার, বন উজাড় ও রোগব্যাধির কারণে। ব্রিস্টলের এই গরিলা পরিবার ইউরোপীয় চিড়িয়াখানাগুলোর যৌথ সংরক্ষণ ও প্রজনন কর্মসূচির অংশ, যা ভবিষ্যতের জন্য ‘বীমা জনসংখ্যা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভুল বোঝাবুঝির চাপ ও প্রাণী সুরক্ষা সংস্থার মতামত
জনগণের উদ্বেগ ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে কর্মীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, জানিয়েছেন জনসংযোগ পরিচালক হান্না উইন্ডার্স।
![]()
তিনি বলেন, “আমরা একের পর এক বার্তা পাচ্ছি—গরিলাদের উদ্ধার করতে বলা হচ্ছে, যা কর্মীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।”
প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ‘বর্ন ফ্রি’ অনুপ্রবেশকারীদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে প্রাণী ও কর্মীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। তারা চিড়িয়াখানাকে দ্রুত নতুন আবাসন নির্মাণ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে।
বৃষ্টি থামলে সূর্যের আলোয় এক মাদি গরিলা কারলা লেটুস খেতে থাকে। তার মুখে কোনো দুঃখ বা একাকীত্বের ছাপ ছিল না—বরং ছিল এক নির্ভার, প্রশান্ত বিকেলের ছবি।
#ব্রিস্টল$#চিড়িয়াখানা, #গরিলা, #প্রাণী_সংরক্ষণ,# ইউরোপ,# পরিবেশ,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















