০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
মার্কিন ডলার ভুলে যান, বরং পানি ও জ্বালানি সম্পদের দিকে নজর দিন পরিষ্কার জ্বালানির অগ্রগতি সত্ত্বেও বৈশ্বিক নির্গমন কমছে ধীরগতিতে এআই বিনিয়োগে টেক জায়ান্টদের সামনে নতুন প্রশ্ন শীতের চাপে ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল ও কূটনীতি নতুন মোড়ে ভবিষ্যৎ গেমিংয়ের মঞ্চে আবুধাবি বিশ্ববিদ্যালয়, তরুণ প্রতিভায় নতুন দিগন্ত দুবাইয়ে প্রকৃতিনির্ভর পর্যটনের নতুন দিগন্ত, আরভি রুটে পাহাড়–সমুদ্র–মরুভূমির অভিজ্ঞতা চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি নতুন উচ্চতার পথে, সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা প্রাকযুদ্ধের বিএমডব্লিউ ক্যাব্রিওলেট পেবল বিচে গৌরব, ইতিহাসের গাড়িতে মঞ্চ জয় বয়স্কদের ওষুধের অতিভার: একসঙ্গে আটটির বেশি ওষুধে বাড়ছে মাথাঘুরে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছুটিতে পরিবারের প্রযুক্তি ঝামেলা কমানোর সহজ কৌশল

আগামী পাঁচ বছরে শত শত গির্জা বন্ধ হতে পারে; ঐতিহ্য রক্ষায় জরুরি অর্থায়নের দাবি

যুক্তরাজ্যে শত শত গির্জা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে—রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের বিপুল খরচ সামাল দিতে না পারায়। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে বহু ঐতিহ্যবাহী গির্জা ভবন এখন ভাঙনের মুখে এবং অনেকগুলোই ২০৩০ সালের মধ্যে আর উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষায় সংকট

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে আয়োজিত এক সম্মেলনে জানানো হয়, ২০ হাজারেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী গির্জার অনেকগুলোতেই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম, রঙিন কাচের জানালা এবং ঐতিহাসিক স্মারক রয়েছে। এগুলো শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক কর্মকাণ্ডেরও কেন্দ্র।

কিন্তু ন্যাশনাল চার্চেস ট্রাস্টের জরিপ অনুযায়ী, প্রতি ২০টির মধ্যে একটি গির্জার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তারা হয় নিশ্চিতভাবেই, নয়তো সম্ভবত, উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু গ্রামীণ এলাকায়ই প্রায় ৯০০ গির্জা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

জরিপের ফলাফল: ছাদের ক্ষতি ও তহবিল সংকট

৩,৬০০ গির্জার ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচটির একটির ভবন গত পাঁচ বছরে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ গির্জার ছাদ তাৎক্ষণিক মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া তিনটির মধ্যে একটি গির্জা এখন মৌলিক ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ তহবিল ব্যবহার করছে।

সরকারের ভ্যাট সিদ্ধান্তে আরও চাপ

এই বছরের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার ২৫ হাজার পাউন্ডের বেশি খরচ হলে উপাসনালয়ের মেরামতের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছে। এতে তহবিলের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে।

চার্চ অব ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্যারিশ ইতিমধ্যে এক বিলিয়ন পাউন্ডের বকেয়া মেরামতের ব্যয় এবং বছরে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের রক্ষণাবেক্ষণ খরচের মুখে রয়েছে।

ঐতিহ্য রক্ষায় সতর্কবার্তা

ইতিহাসবিদ ও সম্প্রচারক অ্যালিস লক্সটন সম্মেলনে বলেন, “এই গির্জাগুলো আমাদের ঐতিহ্যের মুকুট রত্ন। অথচ আমাদের চোখের সামনেই এক ধরনের সাংস্কৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।”

In UK, thousands of churches to be close over next five years, survey says - News - news of Orthodoxy - the Union of Orthodox Journalists

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের পরিচালক ট্রিস্ট্রাম হান্ট বলেন, “গির্জাগুলো টিকিয়ে রাখা এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যগত চ্যালেঞ্জ।”

ন্যাশনাল চার্চেস ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফিলিপ রাটনাম সরকারের কাছে বছরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “স্থানীয় সম্প্রদায়কে একা সংগ্রাম করতে দেওয়া উচিত নয়।”

ব্রিটেনের আত্মা ও মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি

জরিপে আরও দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ গির্জা স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্ধেকের বেশি খাদ্যব্যাংক বা খাদ্য বিতরণে জড়িত, এক-তৃতীয়াংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, আর প্রতি পাঁচটির একটি দেনা–পরামর্শ বা সহায়তা প্রদান করে।

আইনজীবী ও সম্প্রচারক রব রিন্ডার বলেন, “যদি সত্যিকারের ব্রিটিশ মূল্যবোধ দেখতে চান, তাহলে বৃষ্টিভেজা মঙ্গলবার বা বুধবার রাতে কোনো গির্জায় যান—সেখানে দেখবেন, নানা ধর্ম, জাতি ও ভাষার মানুষ নীরবে দেশটিকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে।”

100,000 Reuses for the Church to Find - Christianity Today

তিনি আরও বলেন, “এই ভবনগুলোকে রক্ষা করা মানে ব্রিটেনের ন্যায়বোধ, আতিথেয়তা ও মানবতার ঐ চেতনা বাঁচিয়ে রাখা।”

গির্জা ও সরকারের যৌথ দায়িত্ব

ইয়র্কের আর্চবিশপ স্টিফেন কট্রেল বলেন, চার্চ অব ইংল্যান্ডকে অবশ্যই আরও আর্থিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সরকারকেও এসব “সম্প্রদায়ের কেন্দ্র” হিসেবে থাকা স্থাপনাগুলো রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী দশকের মধ্যেই শত শত ঐতিহ্যবাহী গির্জা চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এসব গির্জা শুধু ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ব্রিটেনের সামাজিক ঐক্য, ইতিহাস এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক।

 

#যুক্তরাজ্য, #গির্জা, #ঐতিহ্য,# সংস্কৃতি,# রক্ষণাবেক্ষণ, #অর্থনীতি, #ব্রিটিশ সমাজ,# সারাক্ষণ রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন ডলার ভুলে যান, বরং পানি ও জ্বালানি সম্পদের দিকে নজর দিন

আগামী পাঁচ বছরে শত শত গির্জা বন্ধ হতে পারে; ঐতিহ্য রক্ষায় জরুরি অর্থায়নের দাবি

০৪:৪৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাজ্যে শত শত গির্জা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে—রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের বিপুল খরচ সামাল দিতে না পারায়। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে বহু ঐতিহ্যবাহী গির্জা ভবন এখন ভাঙনের মুখে এবং অনেকগুলোই ২০৩০ সালের মধ্যে আর উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষায় সংকট

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে আয়োজিত এক সম্মেলনে জানানো হয়, ২০ হাজারেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী গির্জার অনেকগুলোতেই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম, রঙিন কাচের জানালা এবং ঐতিহাসিক স্মারক রয়েছে। এগুলো শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক কর্মকাণ্ডেরও কেন্দ্র।

কিন্তু ন্যাশনাল চার্চেস ট্রাস্টের জরিপ অনুযায়ী, প্রতি ২০টির মধ্যে একটি গির্জার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তারা হয় নিশ্চিতভাবেই, নয়তো সম্ভবত, উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু গ্রামীণ এলাকায়ই প্রায় ৯০০ গির্জা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

জরিপের ফলাফল: ছাদের ক্ষতি ও তহবিল সংকট

৩,৬০০ গির্জার ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচটির একটির ভবন গত পাঁচ বছরে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ গির্জার ছাদ তাৎক্ষণিক মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া তিনটির মধ্যে একটি গির্জা এখন মৌলিক ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ তহবিল ব্যবহার করছে।

সরকারের ভ্যাট সিদ্ধান্তে আরও চাপ

এই বছরের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার ২৫ হাজার পাউন্ডের বেশি খরচ হলে উপাসনালয়ের মেরামতের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছে। এতে তহবিলের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে।

চার্চ অব ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্যারিশ ইতিমধ্যে এক বিলিয়ন পাউন্ডের বকেয়া মেরামতের ব্যয় এবং বছরে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের রক্ষণাবেক্ষণ খরচের মুখে রয়েছে।

ঐতিহ্য রক্ষায় সতর্কবার্তা

ইতিহাসবিদ ও সম্প্রচারক অ্যালিস লক্সটন সম্মেলনে বলেন, “এই গির্জাগুলো আমাদের ঐতিহ্যের মুকুট রত্ন। অথচ আমাদের চোখের সামনেই এক ধরনের সাংস্কৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।”

In UK, thousands of churches to be close over next five years, survey says - News - news of Orthodoxy - the Union of Orthodox Journalists

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের পরিচালক ট্রিস্ট্রাম হান্ট বলেন, “গির্জাগুলো টিকিয়ে রাখা এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যগত চ্যালেঞ্জ।”

ন্যাশনাল চার্চেস ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফিলিপ রাটনাম সরকারের কাছে বছরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “স্থানীয় সম্প্রদায়কে একা সংগ্রাম করতে দেওয়া উচিত নয়।”

ব্রিটেনের আত্মা ও মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি

জরিপে আরও দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ গির্জা স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্ধেকের বেশি খাদ্যব্যাংক বা খাদ্য বিতরণে জড়িত, এক-তৃতীয়াংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, আর প্রতি পাঁচটির একটি দেনা–পরামর্শ বা সহায়তা প্রদান করে।

আইনজীবী ও সম্প্রচারক রব রিন্ডার বলেন, “যদি সত্যিকারের ব্রিটিশ মূল্যবোধ দেখতে চান, তাহলে বৃষ্টিভেজা মঙ্গলবার বা বুধবার রাতে কোনো গির্জায় যান—সেখানে দেখবেন, নানা ধর্ম, জাতি ও ভাষার মানুষ নীরবে দেশটিকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে।”

100,000 Reuses for the Church to Find - Christianity Today

তিনি আরও বলেন, “এই ভবনগুলোকে রক্ষা করা মানে ব্রিটেনের ন্যায়বোধ, আতিথেয়তা ও মানবতার ঐ চেতনা বাঁচিয়ে রাখা।”

গির্জা ও সরকারের যৌথ দায়িত্ব

ইয়র্কের আর্চবিশপ স্টিফেন কট্রেল বলেন, চার্চ অব ইংল্যান্ডকে অবশ্যই আরও আর্থিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সরকারকেও এসব “সম্প্রদায়ের কেন্দ্র” হিসেবে থাকা স্থাপনাগুলো রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী দশকের মধ্যেই শত শত ঐতিহ্যবাহী গির্জা চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এসব গির্জা শুধু ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ব্রিটেনের সামাজিক ঐক্য, ইতিহাস এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক।

 

#যুক্তরাজ্য, #গির্জা, #ঐতিহ্য,# সংস্কৃতি,# রক্ষণাবেক্ষণ, #অর্থনীতি, #ব্রিটিশ সমাজ,# সারাক্ষণ রিপোর্ট