রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে ‘অমিত্র আচরণ’ বলে উল্লেখ করে সতর্ক করেন যে, তেল সরবরাহ কমে গেলে বিশ্ববাজারে দাম আরও বাড়বে।
নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল জায়ান্ট রসনেফট ও লুকয়েলকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। এই দুটি কোম্পানি বিশ্বব্যাপী মোট তেল উৎপাদনের পাঁচ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে।
ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধ থামাতেই এই চাপ প্রয়োগের পদক্ষেপ। নিষেধাজ্ঞার ফলে বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় পাঁচ শতাংশ বেড়ে যায়।
চীনা ও ভারতীয় প্রতিক্রিয়া
রয়টার্সের বাণিজ্য সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার পর চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো সাময়িকভাবে রুশ তেল আমদানি স্থগিত করেছে। অন্যদিকে, ভারতের পরিশোধনাগারগুলোও আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুতিনের অবস্থান ও সতর্কবার্তা
পুতিন বলেন, “রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু কোনো সম্মানজনক রাষ্ট্র চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।”
তিনি আরও সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি সীমিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোই তেলের উচ্চমূল্যে সমস্যায় পড়বে।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও হুঁশিয়ারি দেন, যদি ইউক্রেন পশ্চিমা সমর্থনে রাশিয়ার গভীরে হামলা চালায়, তবে “রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে অত্যন্ত গুরুতর, হয়তো বিধ্বংসীও হতে পারে।”
ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন
গত সপ্তাহেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ও পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য বুদাপেস্টে বৈঠক করবেন। কিন্তু সর্বশেষ বিবৃতিতে তিনি জানান, “এখন এই বৈঠক অর্থহীন মনে হচ্ছে।” এবং সেটি বাতিল করেন।
তবে পুতিন জানান, তিনি মনে করেন বৈঠকটি ‘স্থগিত’ হয়েছে, বাতিল নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ
ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ইউক্রেনের আর্থিক সহায়তা দুই বছরের জন্য বাড়ানোর ঘোষণা দেন।
তবে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা বেলজিয়ামের আপত্তির কারণে স্থগিত রাখা হয়। মস্কো সতর্ক করেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে তারা ‘কঠোর প্রতিক্রিয়া’ দেখাবে।

ইউক্রেনের আহ্বান
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই নিষেধাজ্ঞাকে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” বলে স্বাগত জানান, তবে আরও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানান যাতে রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হয়।
এলএনজি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার রাজস্ব কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৃহস্পতিবার তাদের ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করে। এতে রুশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং কিছু চীনা কোম্পানি ও মধ্য এশীয় ব্যাংককেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
২০২২ সালের পর থেকে ইইউ রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা ৯০ শতাংশ কমালেও ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে এখনো ১১ বিলিয়ন ইউরোর বেশি রুশ জ্বালানি আমদানি করেছে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব
রুশ তেল ও গ্যাস থেকে রাজস্ব বছরে প্রায় ২১ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে এগুলো রাশিয়ার মোট বাজেটের এক-চতুর্থাংশ যোগান দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত হতে পারে, কারণ মস্কো প্রধানত উৎপাদনের ওপর কর আদায় করে, রপ্তানির ওপর নয়।
এই নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথে বড় মোড় ঘুরাতে পারে। একদিকে রাশিয়া বলছে, এটি তার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে না, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ চাপ বাড়িয়ে কূটনৈতিক সমাধানের পথে ঠেলে দিতে চায় মস্কোকে। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এই সংকটের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
#রাশিয়া #ট্রাম্প #ইউক্রেনযুদ্ধ #তেলবাজার #পুতিন #নিষেধাজ্ঞা #ইইউ #জ্বালানিসংকট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















