মার্কিন সামরিক বাহিনী পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দুটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেট বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এটি প্রশান্ত মহাসাগরে প্রথম সরাসরি সামরিক হামলা।
ধারাবাহিক হামলা ও বিস্তারিত ঘটনা
বুধবার দুপুরে হেগসেট জানান, আগের দিন এক নৌযানে হামলায় দুইজন নিহত হয়। ঘণ্টাখানেক পর তিনি আরও জানান, আরেকটি নৌযানে আঘাতে আরও তিনজন নিহত হন।
এই অভিযানটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর অন্তত সাতটি হামলার পর ঘটল, যা ইতিমধ্যে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
হেগসেট বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী নৌযানটি অবৈধ মাদক পাচারে যুক্ত ছিল, এটি একটি পরিচিত পাচার রুটপথ ধরে চলছিল এবং মাদক বহন করছিল।” তিনি সামাজিক মাধ্যমে দুই হামলার ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায়, জলে চলমান নৌযানটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ক্যারিবীয় অঞ্চলের হামলাগুলোয় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে; কিন্তু প্রশাসন এখনো প্রকাশ করেনি কত পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে বা কোন প্রমাণে এই লক্ষ্যবস্তুগুলো বাছাই করা হয়েছিল।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জানি না নৌযানটি ইকুয়েডরীয় না কলম্বিয়ান। কিন্তু এটি হত্যা। ক্যারিবীয় হোক বা প্রশান্ত, মার্কিন কৌশল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে।”
কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া, যিনি নিজ দেশে গ্যাংবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, ট্রাম্পের মাদকবিরোধী অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
-20250622081748.jpg)
ট্রাম্পের অবস্থান
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রশাসন এই হামলার আইনগত অধিকার রাখে এবং প্রতিটি হামলায় “আমেরিকানদের জীবন রক্ষা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ভেনেজুয়েলায় স্থলভিত্তিক টার্গেটেও হামলার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা হয়তো কংগ্রেসে ফিরে গিয়ে বিস্তারিত জানাব, যদিও আইনগতভাবে তা বাধ্যতামূলক নয়।”
আইনি প্রশ্ন ও সামরিক প্রস্তুতি
বহু আইনি বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলেছেন কেন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড নয়, বরং সামরিক বাহিনী এসব হামলা পরিচালনা করছে। সাধারণত কোস্ট গার্ডই সমুদ্রভিত্তিক আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকে।
এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে — মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং প্রায় ৬৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

কোস্ট গার্ড অভিযান ও প্রশ্নবোধক পদক্ষেপ
আগস্টে “অপারেশন ভাইপার” নামে কোস্ট গার্ড প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক আটক অভিযান শুরু করে। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ৪৫,০০০ কিলোগ্রামেরও বেশি কোকেন আটক করেছে।
তবে এবার কেন কোস্ট গার্ডের বদলে সরাসরি সামরিক হামলা চালানো হলো, সে বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
পূর্ববর্তী ঘটনা
গত সপ্তাহে মার্কিন বাহিনীর এক ক্যারিবীয় হামলায় দুই সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী বেঁচে যান। পরে তাঁদের উদ্ধার করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরে ফেরত পাঠানো হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী কৌশলে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে — যেখানে আইন প্রয়োগের বদলে সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এতে আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















