অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলতি জলপাই মৌসুমে সহিংসতা ও দমনপীড়নের মাত্রা চরমে পৌঁছিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জায়নিস্ট কর্তৃপক্ষ ৩২ জন বিদেশি কর্মীকে বহিষ্কার করেছে, যারা ফিলিস্তিনি কৃষকদের পাশে থেকে জলপাই সংগ্রহে সহায়তা করছিলেন। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এ মৌসুমকে সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে “সবচেয়ে বিপজ্জনক ও সহিংস” বলে বর্ণনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক কর্মীদের বহিষ্কার
অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস এলাকার কাছাকাছি জলপাই বাগানে কাজ করার সময় ৩২ জন বিদেশি স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করে পরে বহিষ্কার করেছে জায়নিস্ট কর্তৃপক্ষ। উপপ্রধানমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন জানান, এই ব্যক্তিরা “সামারিয়া অঞ্চলে উসকানি” সৃষ্টি করেছিলেন এবং “সামরিক আদেশ লঙ্ঘন” করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই সিদ্ধান্তটি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতমার বেন গভিরের সহ-স্বাক্ষরে জারি করা হয়।
৩০ বছর বয়সী ব্রিটিশ কর্মী রুডি শুলকিন্ড, যিনি বহিষ্কৃতদের একজন, জানান যে তারা ফিলিস্তিনি কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলেন। তাঁর ভাষায়, “আমাদের গ্রেপ্তারের আগে ওই এলাকা ‘সামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয় — যা জায়নিস্ট বাহিনীর সাধারণ কৌশল।”

জলপাই মৌসুমে সহিংসতা ও ধ্বংস
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে অন্তত ১৫৮টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে — যার মধ্যে ১৭টি সেনাবাহিনীর এবং ১৪১টি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা সংঘটিত।
মুয়াইয়াদ শাবান, ফিলিস্তিনি প্রাচীর ও বসতি প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান, জানান যে হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে শারীরিক নির্যাতন, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তার, চলাচলে বাধা ও বাগান পুড়িয়ে দেওয়া।
সবচেয়ে বেশি হামলা নাবলুসে (৫৬টি), তারপর রামাল্লাহে (৫১টি) ও হেবরনে (১৫টি) ঘটেছে। প্রায় ৭৪টি জলপাই বাগানকে লক্ষ্য করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, যার মধ্যে ২৯টি ক্ষেত্রে গাছ কেটে বা বুলডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। এতে প্রায় ৭৯৫টি জলপাই গাছ ধ্বংস হয়েছে।
‘সবচেয়ে বিপজ্জনক’ মৌসুম
শাবান জানান, চলমান যুদ্ধপরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা এ বছর অভূতপূর্ব মাত্রায় হামলা চালিয়েছে। তাঁর মতে, এটি “সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক জলপাই মৌসুম”। তিনি অভিযোগ করেন, জায়নিস্ট কর্তৃপক্ষ বসতি স্থাপনকারীদের অস্ত্র দিয়েছে, অনেক ফিলিস্তিনি এলাকা বন্ধ করে রেখেছে এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তাঁর মতে, “এই দখলদার রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের জীবনের ধারা ও কৃষিনির্ভর সংস্কৃতি ধ্বংস করার কৌশলগত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও কৃষিজমি ধ্বংসের এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। বিবৃতিতে বলা হয়, “হত্যা, সহিংসতা, গাছ উপড়ে ফেলা ও ফসল পুড়িয়ে দেওয়া — এসব অপরাধের শাস্তি না হলে তা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি চরম অবমাননা হবে।”
মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়, যেন তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে হামলা বন্ধ করে, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং তাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের অধিকার পুনরুদ্ধার করে।
জলপাই ফসল ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। অথচ এই কৃষিপ্রক্রিয়াকে লক্ষ্য করেই ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে একটি জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও ঐতিহ্য ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ঘটনাগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দখলদার নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার দাবি উঠেছে।
# ফিলিস্তিন,# পশ্চিম তীর,# জলপাই মৌসুম, #জায়নিস্ট সহিংসতা, #মানবাধিকার,# আন্তর্জাতিক আইন,# সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















