০১:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা জন কিরিয়াকুর দাবি—পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণও ওয়াশিংটনের হাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাস, মেলেনি অনেক হিসাব নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত আফগান ট্রানজিট বাণিজ্য স্থগিত থাকবে: পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতে প্রি-আইপিও বিনিয়োগে মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আহ্বান ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় জায়ান্টের সমর্থন চীন-মার্কিন উত্তেজনা প্রশমনে ছোট পদক্ষেপের আশা, বড় কোনো সাফল্যের সম্ভাবনা কম অ্যাপলকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এন্টি-ট্রাস্ট অভিযোগের মুখোমুখি চীনের কারখানাগুলোর মাধ্যমে শি জিনপিংয়ের শক্তি আরও দৃঢ়

উচ্চ দামে গরুর মাংস এখন বিলাসদ্রব্য, নিম্ন আয়ের পরিবারে শিশুর পুষ্টি সংকট বাড়ছে

বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম এতটাই বেড়েছে যে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্যতালিকা থেকে এটি প্রায় উধাও হয়ে গেছে। একসময় সপ্তাহান্তে পুষ্টির উৎস হিসেবে যে মাংস টেবিলে থাকত, আজ তা অনেকের জন্য বিলাসদ্রব্যে পরিণত হয়েছে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে প্রোটিনের ঘাটতি ও অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।


গরুর মাংস: শিশুর বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য

গরুর মাংস শুধু স্বাদের নয়, পুষ্টির দিক থেকেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড—যেগুলো শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বৃদ্ধিশীল বয়সে প্রোটিনের ঘাটতি শিশুদের দেহের পেশি গঠন, হাড়ের বৃদ্ধি ও রক্ত তৈরিতে বাধা দেয়।

বাংলাদেশের পুষ্টিবিদরা বলেন, নিয়মিতভাবে সপ্তাহে অন্তত একদিন গরুর মাংস খাওয়া শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা হিম আয়রন সহজে রক্তে মিশে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। কিন্তু বাস্তবে এখন এই পুষ্টিকর খাদ্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ক্রমশ অপ্রাপ্য হয়ে উঠছে।


দাম বাড়ায় নাগালের বাইরে

গত এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ। রাজধানীর কাঁচাবাজারে এখন প্রতি কেজি মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার নিচে পাওয়া দুষ্কর। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারেও মাংস কেনা এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য তা প্রায় অসম্ভব।

গৃহিণী শামসুন্নাহার, যিনি একসময় সপ্তাহে একবার পরিবারের জন্য মাংস রান্না করতেন, এখন বলেন,
“এখন গরুর মাংস মানেই উৎসবের দিন। ছেলেমেয়েদের মুখে প্রায় তিন মাস হলো মাংস পড়েনি।”

এই বাস্তবতা শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রায় একই। পশুখাদ্যের দাম, পরিবহন খরচ ও বাজারে অস্থিরতার কারণে মাংসের দাম ক্রমাগত বাড়ছে।


অপুষ্টির ছায়া শিশুর জীবনে

জাতীয় পুষ্টি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজনের ওজন বয়স অনুযায়ী কম। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, প্রাণিজ প্রোটিনের অভাবই এই অপুষ্টির বড় কারণগুলোর একটি।

গরুর মাংসে যে পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়, তা শাকসবজি বা ডাল থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে মাংসের অভাব শিশুদের রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি এবং মানসিক বিকাশে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে এখন শিশুদের খাবারের তালিকা প্রায় একঘেয়ে—ভাত, ডাল ও সামান্য সবজি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস শুধু শারীরিক দুর্বলতাই বাড়ায় না, ভবিষ্যতে শিক্ষার মান ও কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। একটি শিশুর শারীরিক শক্তি, মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে তার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার ওপর।


নিম্ন আয়ের পরিবারে পুষ্টি সংকট

ঢাকার মিরপুরের রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বলেন,
“আগে মাসে একবার হলেও আধা কেজি মাংস কিনতাম, এখন সেটা পারি না। ছেলেমেয়েরা শুধু ডিম আর আলুভর্তা খেয়ে বড় হচ্ছে।”

তার স্ত্রী রুবিনা যোগ করেন, “মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার পর দুপুরে খেতে বসলে বলে, মা, একটু মাংস দাও। কীভাবে বলি, এখন মাংস কিনতে পারি না।”

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এই অভাব শিশুদের বিকাশ ও শেখার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়া, দুর্বলতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতা বাড়ছে।

গ্রামীণ এলাকায়ও একই চিত্র। কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর ও অল্প আয়ের পরিবারের জন্য মাংস এখন হাতের নাগালের বাইরে। স্থানীয় বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত, যা অনেক পরিবারের একদিনের আয়ের সমান। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছেন প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে শুধু ডাল, ডিম বা আলুভর্তার ওপর নির্ভর করতে।


বিকল্প উৎসের পরামর্শ

পুষ্টিবিদরা বলছেন, গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে ডিম, ডাল, মাছ ও দুধকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে তারা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এসব খাদ্যেও পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া গেলেও গরুর মাংসের মতো সমন্বিত পুষ্টি পাওয়া কঠিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সায়েদা নাসরিন বলেন,
“শিশুদের জন্য প্রাণিজ প্রোটিন অপরিহার্য। গরুর মাংসে এমন কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা তাদের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে সরাসরি ভূমিকা রাখে। তাই শুধু বিকল্প খাবার নয়, সাশ্রয়ী মূল্যে মাংস সরবরাহের নীতি তৈরি করা জরুরি।”

সরকারের পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিদ্যালয় পর্যায়ে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর মধ্যাহ্নভোজন কর্মসূচি জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে ভর্তুকির মাধ্যমে অন্তত সপ্তাহে একদিন মাংস কেনার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

খাদ্যনীতিবিদদের মতে, দেশের পশুপালন খাতের উন্নয়ন, স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ কমাতে কার্যকর নীতি গ্রহণ করলে বাজারে মাংসের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাতে পুষ্টির এই বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে।


উপসংহার: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঝুঁকি

গরুর মাংস এখন যেন একটি শ্রেণিভিত্তিক খাদ্য—ধনীদের জন্য সহজলভ্য, দরিদ্রদের জন্য স্বপ্ন। অথচ এই মাংসই শিশুদের শারীরিক বিকাশ ও মানসিক শক্তির অন্যতম উৎস। যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্মে অপুষ্টি ও দুর্বলতার ছায়া আরও ঘনীভূত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের ওপর। তাদের সুস্থ, শক্তিশালী ও বুদ্ধিদীপ্ত করে গড়ে তুলতে হলে সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর সেই পুষ্টির অন্যতম ভিত্তি—গরুর মাংস—যদি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তবে আমরা নিজেরাই ভবিষ্যৎকে অপুষ্ট করে ফেলব।

দেশের শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শুধু শিক্ষা নয়, পুষ্টিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এটি শুধু একটি পরিবারের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এক গভীর সংকেত।


#পুষ্টি #গরুর_মাংস #অপুষ্টি #শিশুস্বাস্থ্য #অর্থনীতি #খাদ্যনিরাপত্তা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা জন কিরিয়াকুর দাবি—পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণও ওয়াশিংটনের হাতে

উচ্চ দামে গরুর মাংস এখন বিলাসদ্রব্য, নিম্ন আয়ের পরিবারে শিশুর পুষ্টি সংকট বাড়ছে

০৯:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম এতটাই বেড়েছে যে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্যতালিকা থেকে এটি প্রায় উধাও হয়ে গেছে। একসময় সপ্তাহান্তে পুষ্টির উৎস হিসেবে যে মাংস টেবিলে থাকত, আজ তা অনেকের জন্য বিলাসদ্রব্যে পরিণত হয়েছে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে প্রোটিনের ঘাটতি ও অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।


গরুর মাংস: শিশুর বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য

গরুর মাংস শুধু স্বাদের নয়, পুষ্টির দিক থেকেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এতে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড—যেগুলো শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বৃদ্ধিশীল বয়সে প্রোটিনের ঘাটতি শিশুদের দেহের পেশি গঠন, হাড়ের বৃদ্ধি ও রক্ত তৈরিতে বাধা দেয়।

বাংলাদেশের পুষ্টিবিদরা বলেন, নিয়মিতভাবে সপ্তাহে অন্তত একদিন গরুর মাংস খাওয়া শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা হিম আয়রন সহজে রক্তে মিশে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। কিন্তু বাস্তবে এখন এই পুষ্টিকর খাদ্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ক্রমশ অপ্রাপ্য হয়ে উঠছে।


দাম বাড়ায় নাগালের বাইরে

গত এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ। রাজধানীর কাঁচাবাজারে এখন প্রতি কেজি মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার নিচে পাওয়া দুষ্কর। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারেও মাংস কেনা এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য তা প্রায় অসম্ভব।

গৃহিণী শামসুন্নাহার, যিনি একসময় সপ্তাহে একবার পরিবারের জন্য মাংস রান্না করতেন, এখন বলেন,
“এখন গরুর মাংস মানেই উৎসবের দিন। ছেলেমেয়েদের মুখে প্রায় তিন মাস হলো মাংস পড়েনি।”

এই বাস্তবতা শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রায় একই। পশুখাদ্যের দাম, পরিবহন খরচ ও বাজারে অস্থিরতার কারণে মাংসের দাম ক্রমাগত বাড়ছে।


অপুষ্টির ছায়া শিশুর জীবনে

জাতীয় পুষ্টি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজনের ওজন বয়স অনুযায়ী কম। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, প্রাণিজ প্রোটিনের অভাবই এই অপুষ্টির বড় কারণগুলোর একটি।

গরুর মাংসে যে পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়, তা শাকসবজি বা ডাল থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে মাংসের অভাব শিশুদের রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি এবং মানসিক বিকাশে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে এখন শিশুদের খাবারের তালিকা প্রায় একঘেয়ে—ভাত, ডাল ও সামান্য সবজি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস শুধু শারীরিক দুর্বলতাই বাড়ায় না, ভবিষ্যতে শিক্ষার মান ও কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। একটি শিশুর শারীরিক শক্তি, মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে তার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার ওপর।


নিম্ন আয়ের পরিবারে পুষ্টি সংকট

ঢাকার মিরপুরের রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বলেন,
“আগে মাসে একবার হলেও আধা কেজি মাংস কিনতাম, এখন সেটা পারি না। ছেলেমেয়েরা শুধু ডিম আর আলুভর্তা খেয়ে বড় হচ্ছে।”

তার স্ত্রী রুবিনা যোগ করেন, “মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার পর দুপুরে খেতে বসলে বলে, মা, একটু মাংস দাও। কীভাবে বলি, এখন মাংস কিনতে পারি না।”

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এই অভাব শিশুদের বিকাশ ও শেখার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়া, দুর্বলতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতা বাড়ছে।

গ্রামীণ এলাকায়ও একই চিত্র। কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর ও অল্প আয়ের পরিবারের জন্য মাংস এখন হাতের নাগালের বাইরে। স্থানীয় বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত, যা অনেক পরিবারের একদিনের আয়ের সমান। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছেন প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে শুধু ডাল, ডিম বা আলুভর্তার ওপর নির্ভর করতে।


বিকল্প উৎসের পরামর্শ

পুষ্টিবিদরা বলছেন, গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে ডিম, ডাল, মাছ ও দুধকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে তারা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এসব খাদ্যেও পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া গেলেও গরুর মাংসের মতো সমন্বিত পুষ্টি পাওয়া কঠিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সায়েদা নাসরিন বলেন,
“শিশুদের জন্য প্রাণিজ প্রোটিন অপরিহার্য। গরুর মাংসে এমন কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা তাদের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে সরাসরি ভূমিকা রাখে। তাই শুধু বিকল্প খাবার নয়, সাশ্রয়ী মূল্যে মাংস সরবরাহের নীতি তৈরি করা জরুরি।”

সরকারের পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিদ্যালয় পর্যায়ে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর মধ্যাহ্নভোজন কর্মসূচি জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে ভর্তুকির মাধ্যমে অন্তত সপ্তাহে একদিন মাংস কেনার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

খাদ্যনীতিবিদদের মতে, দেশের পশুপালন খাতের উন্নয়ন, স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ কমাতে কার্যকর নীতি গ্রহণ করলে বাজারে মাংসের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাতে পুষ্টির এই বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে।


উপসংহার: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঝুঁকি

গরুর মাংস এখন যেন একটি শ্রেণিভিত্তিক খাদ্য—ধনীদের জন্য সহজলভ্য, দরিদ্রদের জন্য স্বপ্ন। অথচ এই মাংসই শিশুদের শারীরিক বিকাশ ও মানসিক শক্তির অন্যতম উৎস। যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্মে অপুষ্টি ও দুর্বলতার ছায়া আরও ঘনীভূত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের ওপর। তাদের সুস্থ, শক্তিশালী ও বুদ্ধিদীপ্ত করে গড়ে তুলতে হলে সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর সেই পুষ্টির অন্যতম ভিত্তি—গরুর মাংস—যদি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তবে আমরা নিজেরাই ভবিষ্যৎকে অপুষ্ট করে ফেলব।

দেশের শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শুধু শিক্ষা নয়, পুষ্টিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এটি শুধু একটি পরিবারের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এক গভীর সংকেত।


#পুষ্টি #গরুর_মাংস #অপুষ্টি #শিশুস্বাস্থ্য #অর্থনীতি #খাদ্যনিরাপত্তা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট