নিরাপত্তা উদ্বেগে বাণিজ্য বন্ধ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির হুসেইন আন্দ্রাবি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের ট্রানজিট বাণিজ্য বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য পুনরায় চালুর সম্ভাবনা অনিশ্চিত
আন্দ্রাবি বলেন, “আফগান ট্রানজিট বাণিজ্য এখন বন্ধ রয়েছে, এবং নিকট ভবিষ্যতে তা চালুর কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণগুলো সবার জানা—নিরাপত্তার ঝুঁকি মূল্যায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই বাণিজ্য স্থগিত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, আফগান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অব্যাহত হামলায় পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটছে, ফলে সরকার বাণিজ্যের চেয়ে নাগরিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মুখপাত্র স্পষ্ট করেন, “আফগান মাটিকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের প্ররোচনা বা সহায়তার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।”

নদী নিয়ে নতুন বিতর্ক
প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আন্দ্রাবি বলেন, আফগান তালিবান সুপ্রিম লিডার কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন কি না—বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সীমানা পার হওয়া নদীগুলো আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পড়ে, আর পাকিস্তান এর উপরের ও নিচের উভয় রাইপেরিয়ান রাষ্ট্র হিসেবে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”
চিত্রাল নদী পাকিস্তান থেকে উৎপন্ন হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশের পর কুনার নামে পরিচিত হয়। জালালাবাদ এলাকায় এটি কাবুল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আবার পাকিস্তানে প্রবেশ করে।
সীমান্ত সংঘর্ষে বাণিজ্য বিপর্যস্ত
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১১ অক্টোবর থেকে দুই দেশের সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। এর আগে ঘটে সামরিক ও বিমান অভিযানের সঙ্গে গত বছরের তুলনায় সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ।
আফগান বাণিজ্য চেম্বারের সভাপতি খান জান আলোকোজাই জানান, “ছুটির সময় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে সব ট্রেড ও ট্রানজিট কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।”
পাকিস্তানের দাবি, আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠীগুলো হামলা চালাচ্ছে; তবে তালিবান প্রশাসন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইস্তানবুলে আলোচনার অপেক্ষা
কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সাম্প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সীমান্ত বাণিজ্য এখনও স্থবির। আগামী ২৫ অক্টোবর ইস্তানবুলে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আফগান সীমান্ত কখন খোলা হবে—তা এখনও নিশ্চিত নয়।”
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, “আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা সীমান্ত খোলার দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বড় ব্যবসায়ী ইমরান খান কাকার বলেন, “পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য পুনরায় চালু করা ইস্তানবুল বৈঠকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে।”
সীমান্তে সীমিত যাতায়াত ও স্থবির কার্যক্রম
সীমান্ত কর্মকর্তারা স্বল্প সময়ের জন্য ‘ফ্রেন্ডশিপ গেট’ খুলে দিয়েছিলেন, যাতে আফগান শরণার্থীরা দেশে ফিরতে পারেন।
কাছাকাছি ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (FIA)-এর ইমিগ্রেশন কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে আফগানিস্তানে যাওয়া পাকিস্তানিরা বর্তমানে চাম্মান সীমান্তে আটকা পড়েছেন।
এক FIA কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্দেশ্যে স্পিন বোলদাকে যাওয়া-আসা করা প্রায় ৫,০০০-এরও বেশি পাকিস্তানি বর্তমানে এই বন্ধনে পড়েছেন।
সীমান্তবর্তী হামলা, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এখন পর্যন্ত আফগান ট্রানজিট বাণিজ্য পুনরায় চালুর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আগামী ইস্তানবুল বৈঠকই হয়তো নির্ধারণ করবে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কতটা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
#আফগানিস্তান #পাকিস্তান #ট্রানজিট_বাণিজ্য #পাকিস্তানের_পররাষ্ট্র_মন্ত্রণালয় #নিরাপত্তা_পরিস্থিতি #ইস্তানবুল_আলোচনা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















