দক্ষিণ কোরিয়ায় আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত বৈঠক। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই পরাশক্তির এই মুখোমুখি সাক্ষাৎ বিশ্বরাজনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও পারস্পরিক উত্তেজনা প্রশমনের একটি সম্ভাব্য সূচনা হতে পারে। তবে উভয় দেশই এখনো কঠোর অবস্থানে থাকায় বড় কোনো সাফল্যের আশা সীমিত।
বৈঠকের পটভূমি
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত গিয়ংজুতে অনুষ্ঠিতব্য এপেক (APEC) সম্মেলনে যোগ দেবেন। অপরদিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০ অক্টোবর সকালে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি হবে তাঁর পুনর্নির্বাচনের পর প্রথম বৈদেশিক সফর, যা মালয়েশিয়া ও জাপান সফরের পর অনুষ্ঠিত হবে।

বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা
বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত। ট্রাম্প প্রশাসন শতভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। অন্যদিকে, বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা ঘোষণা করেছে ও মার্কিন সয়াবিন কেনা স্থগিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। স্টিমসন সেন্টারের ইউন সান বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ায় বড় কোনো সংঘাত হবে না, তবে ছোট কিছু ইতিবাচক ফলাফল দেখা যেতে পারে।”
চীনের আত্মবিশ্বাস ও ‘বিরল খনিজ অস্ত্র’
বেইজিং বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে, বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্লাই চেইনে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম।
ইউন সান বলেন, “চীন মনে করে বাণিজ্যযুদ্ধ তাদের হারাতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ান ইস্যুতে চাপ বাড়ায়, তখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।”

তাইওয়ান প্রসঙ্গ ও কৌশলগত আশঙ্কা
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও অস্ত্র সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউন সান মন্তব্য করেন, “এই বৈঠক মুখোমুখি সংঘাত এড়ানোর একটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, যদিও বড় কোনো অগ্রগতির প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না।”
আলোচনার সম্ভাব্য ছাড় ও নতুন পথনকশা
শাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শেন ডিংলি তুলনামূলক আশাবাদী। তাঁর মতে, উভয় পক্ষ সীমিত ছাড় দিতে পারে। ট্রাম্প হয়তো ৯০ দিনের জন্য নতুন বাণিজ্য আলোচনা বাড়ানোর ঘোষণা দেবেন, আর চীন সাময়িকভাবে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে পারে।
এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সেমিকন্ডাক্টর ও বিমানযন্ত্র রপ্তানিতে কিছুটা ছাড় দিতে পারে।
এভাবে পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশে শুল্ক হ্রাস, কৃষিপণ্য আমদানি ও মাদক ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হতে পারে।
কাঠামোগত দ্বন্দ্ব ও সীমাবদ্ধতা
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শি ইনহং মনে করেন, এই বৈঠক বড় কোনো সমস্যার সমাধান আনবে না। তাঁর মতে, “সবচেয়ে বেশি যা হতে পারে, তা হলো সীমিত কিছু সমঝোতা। কিন্তু তাইওয়ান, বিরল খনিজ, উচ্চ প্রযুক্তি বা দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বজায় থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৩ সাল থেকে প্রতিটি শি–মার্কিন বৈঠকের পর সাময়িক স্বস্তি এসেছে, কিন্তু তা দ্রুতই বিলীন হয়েছে। তাই এবারও অতিরিক্ত প্রত্যাশা হতাশা ডেকে আনতে পারে।”

অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও চীনের কঠোর অবস্থান
চীনের অর্থনীতি বর্তমানে রাজস্ব ঘাটতি ও বিনিয়োগ সংকটে রয়েছে। শি ইনহং বলেন, “অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে চীনের বড় কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। সীমিত কৌশলগত ছাড় দেওয়া সম্ভব হলেও জাতীয় স্বার্থে তারা অনড় থাকবে।”
দক্ষিণ কোরিয়ায় শি–ট্রাম্প বৈঠক থেকে বড় কোনো ঐতিহাসিক ফলাফল না এলেও এটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের নতুন সংলাপের সূচনা হতে পারে। যদি দুই দেশ ন্যূনতম আস্থা পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়, সেটিই হবে এই বৈঠকের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য।
#চীন_মার্কিন_সম্পর্ক #শি_ট্রাম্প_বৈঠক #দক্ষিণ_কোরিয়া #এপেক #বাণিজ্যযুদ্ধ #তাইওয়ান #বিরলখনিজ #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















