০৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
মোটা পোষা প্রাণী, মোটা ভেট বিল: পেট ওবেসিটি এখন শুধু স্বাস্থ্য নয়, টাকারও ঝুঁকি ব্যাটারির ভেতরের লিথিয়াম ফেরত আনো: ইভি রিসাইক্লিংকে যৌথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রাটেজি বানাচ্ছে জাপান ও ইউরোপ দুই ঘণ্টা টানা কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালু: গবেষকদের দাবি নতুন যুগ শুরু গাজার যুদ্ধবিরতি এখন মার্কিন তত্ত্বাবধানে: ‘প্ল্যান বি নেই’, সতর্ক করলেন রুবিও অক্টোবরের কমব্যাক ঝড়: কে-পপ এখন হাইপকেই পণ্য বানিয়ে ফেলেছে হ্যালোইন এখন শুধু এক রাতের ভৌতিক মুভি নয় — এটা আরাম বেচার মৌসুম ব্ল্যাকআউট ঠেকাতে ছাড়: মেরিল্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্টকে অতিরিক্ত চালাতে বলল যুক্তরাষ্ট্র সুপারস্টার স্টার্টআপ না ঝুঁকির উৎস? ওপেনএআই নিয়ে নতুন প্রশ্ন গাজা যুদ্ধবিরতি মানতে ইসরায়েলকে চাপ দিন, আঙ্কারার হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রকে চাঁদপুরে জেলেদের নদীতে ফেরার প্রস্তুতি, ২২ দিনের অপেক্ষার পর মেঘনা–পদ্মায় নতুন আশার জোয়ার

মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে সেনা অভিযান, থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেল শতাধিক মানুষ

মিয়ানমারের কুখ্যাত অনলাইন স্ক্যাম সেন্টারে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর অন্তত ৬০০-র বেশি মানুষ থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের উপ-গভর্নর সাওয়ানিত সুরিয়াকুল না আয়ুথায়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


সীমান্তে সেনা অভিযানের পর ব্যাপক পালিয়ে যাওয়া

এই মানুষগুলো মিয়ানমারের KK পার্ক নামের একটি বিশাল স্ক্যাম সেন্টার থেকে মোই নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর প্রায় ৭০০ জন অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও সীমান্ত চৌকির সামনে শতাধিক মানুষ বড় বড় ব্যাগ নিয়ে জড়ো হয়।


মানবপাচার ও অনলাইন প্রতারণার ঘাঁটি

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে শত শত স্ক্যাম সেন্টার, যেখানে রোমান্স, বিনিয়োগ ও ব্যবসার নামে অনলাইন প্রতারণা চালানো হয়। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এসব কেন্দ্র আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া অভিযানে প্রায় ৭,০০০ কর্মীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় এবং থাইল্যান্ড সীমান্তে একটি ইন্টারনেট ব্লক আরোপ করা হয়। তবে এএফপি’র সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নতুন নতুন ভবন নির্মাণ এখনও চলছে এবং ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ‘স্টারলিংক’ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগও সেখানে স্থাপন করা হয়েছে।


থাইল্যান্ডে আশ্রয় ও যাচাই প্রক্রিয়া

থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমান্ত পার হওয়া লোকদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের শনাক্ত করতে যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে—তারা মানবপাচারের শিকার নাকি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। তাক প্রাদেশিক প্রশাসন জানায়, পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়েই রয়েছেন এবং সবাই বিদেশি নাগরিক।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আন্তারা জানায়, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২০ জন ইন্দোনেশীয় নাগরিক থাইল্যান্ডে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।


সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও চীনের চাপ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে স্ক্যাম সেন্টারগুলোকে উপেক্ষা করেছে, কারণ এসব কেন্দ্র থেকে অর্জিত অর্থ তাদের সহযোগী মিলিশিয়া সদস্যদের হাতে পৌঁছে যায়—যারা বিদ্রোহবিরোধী যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে।
তবে চীনের চাপ বাড়ায় সেনাবাহিনী এখন কিছু অভিযানের আয়োজন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানগুলো মূলত “দেখানোর জন্য”, যাতে চীনকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, কিন্তু লাভজনক এই ব্যবসা বন্ধ না হয়।
স্থানীয় এক প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতা সও টিন উইন বলেছেন, “সেনাবাহিনীর চাপের কারণে আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি যেন এমন খারাপ কাজ বন্ধ করে।”


প্রতারণা শিল্পের বিস্তার ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আন্তঃদেশীয় স্ক্যাম শিল্প ভয়াবহভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০২৩ সালেই এই অঞ্চলের মানুষ প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
থাইল্যান্ডের দুর্নীতি দমন সংস্থা কেম্বোডিয়ান সিনেটর ও ব্যবসায়ী লি ইয়ং ফাটের ৭০ মিলিয়ন বাত (প্রায় ২.১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। তাকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মানবপাচার ও স্ক্যাম সংশ্লিষ্ট অপরাধে নিষিদ্ধ করেছে।
এছাড়া, কেম্বোডিয়ায় বৃহস্পতিবার ৫৭ জন দক্ষিণ কোরীয় ও ২৯ জন চীনা নাগরিককে সাইবার স্ক্যামের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এর আগের সপ্তাহেই আরও ৬৪ জন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিককে একই অভিযোগে ফেরত পাঠানো হয়।


মিয়ানমারের এই সাম্প্রতিক অভিযান হয়তো চীনের কূটনৈতিক চাপের ফল, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল স্ক্যাম নেটওয়ার্ক এখনো অটুট। স্টারলিংক ইন্টারনেট ও নতুন অবকাঠামোর কারণে এই অবৈধ শিল্প আরও শক্তিশালী হতে পারে—যা পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।


#মিয়ানমার #থাইল্যান্ড #স্ক্যাম_সেন্টার #মানবপাচার #চীন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট-

জনপ্রিয় সংবাদ

মোটা পোষা প্রাণী, মোটা ভেট বিল: পেট ওবেসিটি এখন শুধু স্বাস্থ্য নয়, টাকারও ঝুঁকি

মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে সেনা অভিযান, থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেল শতাধিক মানুষ

১১:১৩:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারের কুখ্যাত অনলাইন স্ক্যাম সেন্টারে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর অন্তত ৬০০-র বেশি মানুষ থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের উপ-গভর্নর সাওয়ানিত সুরিয়াকুল না আয়ুথায়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


সীমান্তে সেনা অভিযানের পর ব্যাপক পালিয়ে যাওয়া

এই মানুষগুলো মিয়ানমারের KK পার্ক নামের একটি বিশাল স্ক্যাম সেন্টার থেকে মোই নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর প্রায় ৭০০ জন অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও সীমান্ত চৌকির সামনে শতাধিক মানুষ বড় বড় ব্যাগ নিয়ে জড়ো হয়।


মানবপাচার ও অনলাইন প্রতারণার ঘাঁটি

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে শত শত স্ক্যাম সেন্টার, যেখানে রোমান্স, বিনিয়োগ ও ব্যবসার নামে অনলাইন প্রতারণা চালানো হয়। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এসব কেন্দ্র আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া অভিযানে প্রায় ৭,০০০ কর্মীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় এবং থাইল্যান্ড সীমান্তে একটি ইন্টারনেট ব্লক আরোপ করা হয়। তবে এএফপি’র সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নতুন নতুন ভবন নির্মাণ এখনও চলছে এবং ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ‘স্টারলিংক’ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগও সেখানে স্থাপন করা হয়েছে।


থাইল্যান্ডে আশ্রয় ও যাচাই প্রক্রিয়া

থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমান্ত পার হওয়া লোকদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের শনাক্ত করতে যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে—তারা মানবপাচারের শিকার নাকি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। তাক প্রাদেশিক প্রশাসন জানায়, পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়েই রয়েছেন এবং সবাই বিদেশি নাগরিক।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আন্তারা জানায়, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২০ জন ইন্দোনেশীয় নাগরিক থাইল্যান্ডে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।


সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও চীনের চাপ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে স্ক্যাম সেন্টারগুলোকে উপেক্ষা করেছে, কারণ এসব কেন্দ্র থেকে অর্জিত অর্থ তাদের সহযোগী মিলিশিয়া সদস্যদের হাতে পৌঁছে যায়—যারা বিদ্রোহবিরোধী যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে।
তবে চীনের চাপ বাড়ায় সেনাবাহিনী এখন কিছু অভিযানের আয়োজন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানগুলো মূলত “দেখানোর জন্য”, যাতে চীনকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, কিন্তু লাভজনক এই ব্যবসা বন্ধ না হয়।
স্থানীয় এক প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতা সও টিন উইন বলেছেন, “সেনাবাহিনীর চাপের কারণে আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি যেন এমন খারাপ কাজ বন্ধ করে।”


প্রতারণা শিল্পের বিস্তার ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আন্তঃদেশীয় স্ক্যাম শিল্প ভয়াবহভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০২৩ সালেই এই অঞ্চলের মানুষ প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
থাইল্যান্ডের দুর্নীতি দমন সংস্থা কেম্বোডিয়ান সিনেটর ও ব্যবসায়ী লি ইয়ং ফাটের ৭০ মিলিয়ন বাত (প্রায় ২.১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। তাকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মানবপাচার ও স্ক্যাম সংশ্লিষ্ট অপরাধে নিষিদ্ধ করেছে।
এছাড়া, কেম্বোডিয়ায় বৃহস্পতিবার ৫৭ জন দক্ষিণ কোরীয় ও ২৯ জন চীনা নাগরিককে সাইবার স্ক্যামের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এর আগের সপ্তাহেই আরও ৬৪ জন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিককে একই অভিযোগে ফেরত পাঠানো হয়।


মিয়ানমারের এই সাম্প্রতিক অভিযান হয়তো চীনের কূটনৈতিক চাপের ফল, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল স্ক্যাম নেটওয়ার্ক এখনো অটুট। স্টারলিংক ইন্টারনেট ও নতুন অবকাঠামোর কারণে এই অবৈধ শিল্প আরও শক্তিশালী হতে পারে—যা পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নতুনভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।


#মিয়ানমার #থাইল্যান্ড #স্ক্যাম_সেন্টার #মানবপাচার #চীন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট-