ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে পুরোনো অভিযোগ আবার সামনে এনেছে। হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় আসবাবপত্র চুরির অভিযোগ ঘিরে ২০০১ সালের বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে, হিলারি যখন ট্রাম্পের বলরুম নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আক্রমণ
মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে আবারও তোপ দেগেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা অভিযোগ করেছে, ২০০১ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় হিলারি হোয়াইট হাউসের আসবাবপত্র চুরি করেছিলেন। এই অভিযোগ ওঠে এমন সময়ে, যখন হিলারি ট্রাম্পের নতুন বলরুম নির্মাণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনগণকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ডেভিস ইনগল ফক্স নিউজ ডিজিটালকে বলেন, “পরাজিত প্রার্থী ও সাবেক ফার্স্ট লেডি ‘ক্রুকড হিলারি ক্লিনটন’ হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় আসবাবপত্র চুরি করেছিলেন, যা পরে ফেরত দিতে বাধ্য হন। তিনি নির্লজ্জ এবং সম্পূর্ণ অপমানজনক ব্যক্তি।”
ইনগল আরও বলেন, “অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করদাতাদের এক পয়সাও ব্যয় না করে হোয়াইট হাউসকে নতুনভাবে গৌরবময় করে তুলছেন, যা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হবে।”

ট্রাম্পের বলরুম প্রকল্প নিয়ে হিলারির সমালোচনা
অক্টোবরের শুরুতে হিলারি ক্লিনটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “এটা তার বাড়ি নয়, এটা তোমাদের বাড়ি। আর সে এটাকে ধ্বংস করছে।”
তিনি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অর্থায়নে হোয়াইট হাউসে ৯০,০০০ বর্গফুটের একটি নতুন বলরুম নির্মাণ পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেন। এই প্রকল্পটি প্রেসিডেন্ট ভবনের পূর্ব দিকের উইংয়ে নতুন বিনোদন ও রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনার স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
পুরোনো কেলেঙ্কারি ফের আলোচনায়
হিলারির মন্তব্যের পরপরই রিপাবলিকান রাজনীতিক ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো ২০০১ সালের সেই বিতর্কটি আবার টেনে আনেন। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্যানুসারে, বিল ও হিলারি ক্লিনটন তখন প্রায় ২৮ হাজার ডলারের দাতাদের দেওয়া উপহার হিসেবে প্রাপ্ত আসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন, যা পরে ফেরত দেন। আরও ৮৬ হাজার ডলার মূল্যের উপহার সরকারের কাছে পরিশোধ করা হয়।
সেই সময় ক্লিনটন দম্পতি দাবি করেছিলেন, এটি ছিল একটি “ক্যাটালগিং ত্রুটি।” তারা এক বিবৃতিতে বলেন, “হোয়াইট হাউস থেকে কোনো উপহার সরকারি অনুমোদন ছাড়া বের হয়নি। তবে যদি এখন হোয়াইট হাউস মনে করে কোনো ভুল তালিকাভুক্তি হয়েছে, তাহলে যে কোনো বস্তু ফেরত দেওয়া হবে।”

রক্ষণশীলদের কটাক্ষ
হিলারির মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “কমপক্ষে তিনি (ট্রাম্প) রুপার বাসনপত্র চুরি করেননি।”
রক্ষণশীল বিশ্লেষক বেনি জনসন পোস্ট করেন, “হিলারি, মনে আছে? তুমি হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ২৮ হাজার ডলারের আসবাব নিয়ে গিয়েছিলে, তাই না? আর তোমার স্বামী প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ওভাল অফিস কলঙ্কিত করেছিলেন। ট্রাম্প নিজের পকেট থেকে অর্থ দিয়ে এক সুন্দর বলরুম নির্মাণ করছেন।”
অন্যদিকে সাবেক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা অ্যালেক্স ফাইফার পাল্টা বলেন, “একজন ক্লিনটন কখনো হোয়াইট হাউস কলঙ্কিত করেননি।”
ফক্স নিউজ জানায়, ক্লিনটনের দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেননি।
ট্রাম্পের ঘোষণা ও বলরুম নির্মাণ
সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, বলরুম নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “হোয়াইট হাউসের মাঠে নতুন, বৃহৎ ও মনোমুগ্ধকর বলরুম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটি মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বরং পূর্ব উইং, সম্পূর্ণ আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে গড়ে উঠবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “গত ১৫০ বছরে অনেক প্রেসিডেন্ট স্বপ্ন দেখেছেন হোয়াইট হাউসে একটি বড় বলরুম থাকবে, যেখানে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে। আমি গর্বিত, কারণ আমি প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি কোনো করদাতার অর্থ ছাড়াই এই ঐতিহাসিক প্রকল্পটি শুরু করতে পেরেছি।”
তিনি জানান, “এই বলরুমের অর্থায়ন হচ্ছে দেশপ্রেমিক দাতাদের, মার্কিন কোম্পানিগুলোর এবং আমার নিজস্ব অবদানের মাধ্যমে। এটি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি গর্বের নিদর্শন হয়ে থাকবে।”
এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন ও পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে উসকে উঠেছে। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের “দেশপ্রেমিক পুনর্নির্মাতা” হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে, অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটন পুরোনো প্রভাব ফিরিয়ে আনতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হচ্ছেন। তবে হোয়াইট হাউসের অতীত বিতর্কের পুনরুত্থান আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমেরিকার রাজনীতিতে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা গভীর।
#ট্রাম্প_হিলারি #হোয়াইট_হাউস #বলরুম_প্রকল্প #রাজনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















