ফ্রন্টলাইনে মিটার-মিটার অগ্রগতি
ইউক্রেনের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টলাইনে রাশিয়া এখন ট্যাংকের ঝড় তোলার চেয়ে প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতিকে অস্ত্র বানাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, চলতি বছর তাদের বাহিনী কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা “নিয়ন্ত্রণে এনেছে” এবং এখন “উদ্যোগ রাশিয়ার হাতে।” কিয়েভ এসব পরিসংখ্যান নিয়ে আপত্তি তুললেও স্বীকার করছে যে দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর চারপাশে রুশ গ্লাইড বোমা আর স্বল্পদূরত্বের ড্রোন হামলা থামছে না। সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা বলছেন, যুদ্ধ এখন একধরনের ক্ষয়: রাতের পর রাত জ্বালানি ডিপো, গোডাউন, সাবস্টেশন টার্গেট হয়, এরপর বিদ্যুৎ, পানি আর পরিবহন সবকিছু একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ে।
মাঠের ভেতরের সঙ্গে চলছে কূটনৈতিক লড়াই। ইউরোপীয় ও মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা বলছেন তারা দুই দিক সামলাচ্ছেন। একদিকে ইউক্রেনকে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে হবে, যাতে রাশিয়ার বোমা ও ড্রোন চাপ কমানো যায়। অন্যদিকে জব্দ রুশ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনের অর্থ জোগানোর ধারণা এখন আর শুধু “আইনি ঝুঁকি” হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং “আত্মরক্ষা” হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি-আলোচনার কথায় গতি নেই। মস্কো বলছে, মাটিতে যে দখল হয়েছে তা স্বীকৃতি চাই। কিয়েভ বলছে, দখল মানি মানে আত্মসমর্পণ।

ক্লান্তির রাজনীতি
ফ্রন্টলাইনের বাইরে ক্লান্তি বাড়ছে। রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি ও পরিবহন নেটওয়ার্ক নিশানা করছে, যাতে শীতের আগেই সরবরাহ চেইন কাঁপে। কিয়েভে আবারো ড্রোন বিস্ফোরণের পর কাচ ঝাড়ছে মানুষ, অফিস টাওয়ারে প্লাস্টিক শিট চড়ে জানালার গর্ত ঢাকছে। এদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রও সীমায় ঠেকেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত পাতলা, ঘরে ঘরে ভোটারের প্রশ্ন জোরালো: “আর কত?” মিত্ররা প্রকাশ্যে এখনো বলে “ইউক্রেনকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না”, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তারা হিসাব কষছে কতদিন এই সহায়তা টিকবে।
ইউক্রেনের জন্য এটাই ঝুঁকির জায়গা। তাদের দেখাতে হবে যে তারা বড় শহর ধরে রাখতে পারবে, শুধু সময় কিনছে না। রাশিয়ার জন্য ঝুঁকির কৌশলটা উল্টো: তারা বাজি ধরেছে দীর্ঘ ক্লান্তিতে। প্রতিদিন সামান্য করে মাটি চেপে ধরা, অবকাঠামো নষ্ট করা, জনসংখ্যা হালকা করা — এই ধীর গতি একসময় যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর সেটাই মস্কোর লক্ষ্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















