নতুন প্রাণী, পুরোনো বার্তা
দশকের পর দশক ধরে জায়ান্ট পান্ডা ছিল চীনের নরম শক্তির সিগনেচার। প্রতিটি পান্ডা লোন ছিল বন্ধুত্বের বার্তা, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা, এমনকি রাজনৈতিক ইঙ্গিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই পান্ডা-ঋণ আলোচনা আরও সংবেদনশীল হয়েছে। ঠিক এই সময়েই চীন ধীরে ধীরে সামনে আনছে আরেক প্রতীকী প্রাণী — সোনালি রঙের, নীলচে মুখওয়ালা ‘গোল্ডেন স্নাব-নোজড মাংকি’। ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানায় এখন এদের উৎসবমুখর আগমন ঘটছে চীনা পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায়। আনুষ্ঠানিক ভাষায় এটিকে বলা হচ্ছে সংরক্ষণ ও প্রজনন সহযোগিতা। বাস্তবে, দৃশ্যটা খুব চেনা: ভিআইপি অতিথি, কৌতূহলী দর্শক, মিডিয়া ফ্ল্যাশ, “বন্ধুত্বের সেতু” ধরনের বার্তা।
এদের চেহারাই বিক্রি হয়। উজ্জ্বল সোনালি কোট, নীলাভ মুখ, নাটকীয় অভিব্যক্তি — ছবি তোলার জন্য পারফেক্ট। ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আকর্ষণ ব্যবহার করা হবে বিপন্ন প্রজাতি সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং হিমালয় ও উচ্চভূমির বন রক্ষায় তহবিল তুলতে। বেইজিং বলছে, এটাই প্রমাণ যে তারা শুধু “কিউট মাসকট” দেয় না; তারা বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য আলোচনার একজন দায়িত্বশীল অংশীদার।

ফারওয়ালা সফট পাওয়ার
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পান্ডা আজও জনপ্রিয় কিন্তু তাদের নিয়ে প্রতিটি মুভ এখন কূটনৈতিক সিগন্যাল হয়ে দাঁড়ায়। কোন দেশে কতদিন থাকবে, কোন বাচ্চা কোথায় জন্মালো — সবই শিরোনাম। সেই চাপ কমাতে এবং গল্পটাকে নতুনভাবে সাজাতে চীন এখন বলছে, “আমরা শুধু পান্ডা নই, আমরা কনজারভেশন লিডার।” গোল্ডেন স্নাব-নোজড বানর সেই বয়ানকে বহন করছে: এরা বিরল, বিপন্ন, জলবায়ু ও উচ্চভূমি ইকোসিস্টেম গবেষণার সঙ্গে জড়িত।
ইউরোপীয় চিড়িয়াখানার জন্য লাভও দ্বিমুখী। তারা একদিকে দর্শকদের এক অনন্য প্রজাতি দেখায়, অন্যদিকে বলে “এটাই হিমালয়-সংলগ্ন বনভূমির ঝুঁকির গল্প, এটাই জলবায়ু চাপে বদলে যাওয়া বাসস্থান।” এইভাবে প্রাণীটি একাধিক ভূমিকায় পড়ে: সংরক্ষণ দূত, বিজ্ঞাপনের নায়ক, কূটনৈতিক অতিথি। ফলে প্রশ্নটা এখন আর শুধু “পান্ডা কবে আসবে?” নয়। প্রশ্ন হলো, “পরের প্রতীক কে?” চীন ইঙ্গিত দিল, উত্তরটা হয়তো এই সোনালি মুখটাই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















