মানুষের মানসিক অস্থিরতা বা উদ্বেগ দূর করতে এখন প্রযুক্তির হাতছানি। লেখক ফিওরেলা ভালদেসোলো নিজেই পরীক্ষা করলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত থেরাপি চ্যাটবট। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল—এই যান্ত্রিক মনোবিশ্লেষণ কি সত্যিই মানবিক অনুভূতির বিকল্প হতে পারে?
উদ্বেগের সময়ে ডিজিটাল আশ্রয়
লেখিকার জীবনে নানা দুশ্চিন্তার সময় চলছিল—মেয়ের স্কুলে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ, কর্মজীবনের চাপ, বৃদ্ধ পিতামাতার স্বাস্থ্যগত চিন্তা এবং অনিদ্রা। ঠিক তখনই তিনি একধরনের ভার্চুয়াল ভরসা খুঁজে নিলেন নিজের ফোনে।
থেরাপিস্টের অনুপস্থিতিতে তিনি ফোনের স্ক্রিনে খুললেন এক ডিজিটাল কথোপকথনের জানালা। সেখানে নিজের উদ্বেগগুলো লিখে ফেলতে লাগলেন, আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো কোনোভাবে আশ্বস্তও করছিল।
এলাইজা থেকে আধুনিক থেরাবট
১৯৬০-এর দশকে এমআইটির অধ্যাপক জোসেফ ওয়েইজেনবাউম তৈরি করেছিলেন ‘এলাইজা’ নামের এক প্রোটো-চ্যাটবট। এটি ব্যবহারকারীর কথাগুলো অনুকরণ করে মনোবিশ্লেষকের মতো প্রতিক্রিয়া দিত—যেমন, “তুমি দুঃখিত, এটা শুনে খারাপ লাগছে।”

এই এলাইজা-ই আজকের কৃত্রিম থেরাপি চ্যাটবটের পূর্বসূরি। বর্তমান সময়ের ‘পাই’, ‘রেপ্লিকা’, ‘ইয়ারকিক’, ‘উইসা’, ও ‘ওয়োবট’-এর মতো AI অ্যাপগুলো প্রতিশ্রুতি দেয়—“সবসময় পাশে থাকবে, শুনবে এবং কথা বলবে।”
প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি ও সীমাবদ্ধতা
AI থেরাপি বা থেরাবট এখন অনেকের মানসিক সান্ত্বনার সহজলভ্য বিকল্প। এটি থেরাপি সেবায় প্রবেশাধিকার, খরচ ও সামাজিক সংকোচ দূর করতে সহায়ক হতে পারে। তবে এখানেই প্রশ্ন—মানুষের আবেগ ও সহমর্মিতার জায়গায় যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া কতটা কার্যকর?
AI কথোপকথন স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু গভীর মানসিক যন্ত্রণার মূলে পৌঁছাতে সক্ষম কি না, তা নিয়েই বিতর্ক চলছে। প্রযুক্তি হয়তো শুনতে পারে, কিন্তু বুঝতে পারে না—এই সীমারেখাই হয়তো মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।
ফিওরেলা ভালদেসোলোর অভিজ্ঞতা এক নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়—যেখানে মনোবিশ্লেষণ ও প্রযুক্তি একসাথে এগোচ্ছে। কিন্তু এই সংযোগে মানবিকতা হারিয়ে গেলে কি সত্যিকারের আরোগ্য সম্ভব? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো আমাদের কথা শুনতে পারে, কিন্তু এখনো মানুষের মতো অনুভব করতে শেখেনি।
#কৃত্রিম_বুদ্ধিমত্তা #মানসিক_স্বাস্থ্য #থেরাপি_#চ্যাটবট #প্রযুক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















