অ্যালবামে দ্বৈত সুর—অশালীনতার সঙ্গে রক্ষণশীল ভাব
টেলর সুইফটের নতুন অ্যালবাম “দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল” শুনে অনেকেই বিস্মিত। কেউ বলছেন এটি তাঁর সবচেয়ে সাহসী কাজ, কেউ আবার বলছেন এটি আশ্চর্যভাবে রক্ষণশীল। লেখক রস ডাউথাটের মতে, এই দুটি মূল্যায়নই সত্য। অ্যালবামে যেমন রয়েছে প্রখর যৌন ইঙ্গিত ও খোলামেলা শব্দচয়ন, তেমনি রয়েছে পরিবার, বিবাহ এবং উপশহরের ঘরোয়া জীবনের প্রতি এক রোমান্টিক আকর্ষণ। সুইফট তাঁর প্রেমিককে কেন্দ্র করে যেমন নির্লজ্জভাবে শারীরিক ভালোবাসার কথা বলেছেন, তেমনি জীবনের স্থিতিশীলতা ও বিয়ের স্বপ্নও প্রকাশ করেছেন।
এই দ্বৈততা আজকের আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতারই প্রতিফলন—যেখানে ট্রাম্প যুগে অশালীনতা ও রক্ষণশীল রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে গেছে।
ডানপন্থী সংস্কৃতিতে পরিবার ও যৌনতার নতুন সংজ্ঞা
লেখক স্পষ্ট করেন, সুইফটের অ্যালবাম রক্ষণশীল মূল্যবোধকে সরাসরি প্রচার না করলেও এর সাংস্কৃতিক ইঙ্গিত রক্ষণশীল ভাবনাকে শক্তিশালী করে। বর্তমান আমেরিকায় বিয়ে, সন্তান ও পরিবারকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখা—এই প্রবণতা বামপন্থীদের তুলনায় ডানপন্থীদের মধ্যেই বেশি। তাই যখন সুইফট গান করেন—“আমি বলেছিলাম বিয়েতে বিশ্বাস করি না, সেটা ছিল মিথ্যা”—বা “দুইটা সন্তান চাই, পুরো পাড়া যেন তোমার মতো দেখায়”—তখন সেই বার্তা অনিচ্ছাকৃতভাবেই রক্ষণশীল আদর্শের সঙ্গে মিলে যায়।
অনেক প্রগতিশীল-নারীবাদী ভক্ত এই বার্তায় অস্বস্তি বোধ করেছেন। তবে তাঁদের উদ্বেগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়—এ অ্যালবাম সত্যিই সমাজে ডানপন্থী সাংস্কৃতিক স্রোতের একটি প্রতিফলন হয়ে উঠেছে।
রক্ষণশীলতা ও অশালীনতার অদ্ভুত সহাবস্থান
রস ডাউথাট বিশ্লেষণ করেছেন, আজকের ডানপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে একদিকে আছে ধর্মপ্রাণ মানুষ, অন্যদিকে অতি উদারভোগবাদী গোষ্ঠী—যাদের মধ্যে রয়েছে “বারস্টুল কনজারভেটিভস” নামের অশালীন রসবোধসম্পন্ন পুরুষসমাজ থেকে শুরু করে সিলিকন ভ্যালির বহুগামী ধনকুবেররা পর্যন্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যেই যেমন দেখা গেছে—ক্যাথলিক ও ইভানজেলিকালদের সঙ্গে বসবাস করছে বহুবার বিবাহিত এক নেতা ও তাঁর প্রযুক্তি-পাগল ধনকুবের সহযোগী।
ইন্টারনেট যুগে এই দুই সংস্কৃতি—ধর্মনিষ্ঠা ও ভোগবাদ—অনলাইনে একত্রিত হয়েছে। কেউ চান সন্তান ও সংসারকে ঈশ্বরনির্ধারিত পবিত্রতার প্রতীক করতে, আবার কেউ চান প্রযুক্তি ও বহুগামিতার মাধ্যমে নতুন জন্মপ্রক্রিয়া চালু করতে।
বামপন্থী নৈতিকতার শূন্যতা ও ডানপন্থার চ্যালেঞ্জ
লেখকের মতে, বামপন্থীরা এখনো যৌন স্বাধীনতা ও নৈতিক কাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে ব্যর্থ। ফলে তৈরি হয়েছে একরকম নিষ্ক্রিয়, নিরাপত্তাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি—যেখানে ‘নিরাপদ’ ভাবমূর্তি প্রাধান্য পাচ্ছে, কিন্তু বাস্তব সম্পর্ক ও আবেগের জায়গায় শূন্যতা বাড়ছে। এই ব্যর্থতার ফলেই বহু মানুষ ডানপন্থায় ঝুঁকছেন।
তবে প্রশ্ন হলো—রক্ষণশীলরা কি সত্যিই একুশ শতকের জন্য নতুন যৌননৈতিক কাঠামো তৈরি করতে পারবে? ডাউথাটের মতে, তা কঠিন। কারণ ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধুনিক ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। সময়ের সঙ্গে এই দ্বন্দ্বই আবার ডানপন্থীদের বিভক্ত করতে পারে।
ভবিষ্যতের সংস্কৃতি: ধর্মীয় পুনর্জাগরণ না কি নতুন বিভাজন?
যদি আমেরিকায় খ্রিষ্টান ধর্মীয় পুনর্জাগরণ ঘটে, তবে তা বহুগামী, ভোগবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে। তখন “অ্যান্টি-ওয়োক” ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা আবার কেন্দ্র-বাম রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারেন। অন্যদিকে, এক ভবিষ্যৎও কল্পনা করা যায়—যেখানে ধর্মনির্ভর রক্ষণশীলতা ও প্রযুক্তিনির্ভর “পোস্ট-রিলিজিয়াস” রাইট—এই দুই ধারা হবে নতুন অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মূল রেখা।
রক্ষণশীলতা কতদিন টিকবে
তবু লেখক মনে করিয়ে দেন—সংস্কৃতি বা রাজনৈতিক জোটের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও, এগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। যেমন, নারীবাদী ও হিউ-হেফনারীয় যৌন স্বাধীনতার ধারণা একসঙ্গে টিকে ছিল প্রায় চার দশক—একই উদ্দেশ্যে, পুরনো ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তাই রক্ষণশীল সমাজও হয়তো তার ঐতিহ্যবাদী ও উচ্ছৃঙ্খল দুই উপশাখাকে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে।
নতুন রক্ষণশীলতার ভাষা—ধর্মীয় কিন্তু খোলামেলা
লেখক বলেন, ভবিষ্যতের সমাজ হয়তো আগের তুলনায় অনেক বেশি ধর্মীয়মুখী হবে, কিন্তু একই সঙ্গে অনেক বেশি খোলামেলা ও রম্য। মধ্যযুগীয় ইউরোপ বা শেক্সপিয়ারের যুগ যেমন ছিল—ধর্মীয় হলেও যৌন প্রকাশে সাহসী। তাই ধর্ম ও উর্বরতার সংস্কৃতি একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে, এমনকি ইন্টারনেটের যুগেও।
এ কারণেই তিনি শেষমেশ স্বীকার করেন, সুইফটের “উড” গানটি হয়তো বর্তমান বাস্তবতার প্রতীক, কিন্তু সেটি তিনি তাঁর সন্তানদের শোনাবেন না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















