হঠাৎ আকাশে বোমারু উড়ান
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলের নিকটে দুটি বি-১ ল্যান্সার বোমারু বিমান উড়িয়েছে। এই পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যুদ্ধবিমানগুলো দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের কাছে “আক্রমণ প্রদর্শনী” চালিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডাইয়েস বিমানঘাঁটি থেকে দুটি বি-১ ল্যান্সার উড়ে ভেনেজুয়েলার আকাশসীমার কাছাকাছি যায়, যদিও তারা আন্তর্জাতিক আকাশসীমা অতিক্রম করেনি বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বি-১ বোমারু বিমান: শক্তিশালী সামরিক প্রতীক
বি-১ ল্যান্সার বিমানে শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত উড়ান সম্ভব এবং এটি প্রায় ৭৫,০০০ পাউন্ড বোমা বহন করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বোমারু বিমানের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া এটি সমুদ্র নজরদারিতেও সক্ষম।
পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তার মতে, এই বিমানের বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করার ক্ষমতা থাকায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে কোনো ঘাঁটিতে এগুলো স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়নি।
সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া ও সংকেত
গত সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্র বি-৫২ বোমারু ও এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার উপকূলের এক দ্বীপের কাছে সামরিক মহড়া চালিয়েছিল, যেখানে গত সেপ্টেম্বরে ভেনেজুয়েলার সেনারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর একে “আক্রমণ প্রদর্শনী” হিসেবে বর্ণনা করে।
প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ সঠিক নয়,” যদিও তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি
বর্তমানে অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, একটি পি-৮ সমুদ্র টহল বিমান, এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ও একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন মোতায়েন রয়েছে।
গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র খুব কমই দক্ষিণ আমেরিকার নিকটে বোমারু বিমান পাঠিয়েছে—সাধারণত বছরে একবার প্রশিক্ষণ মিশন পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এখন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের আরও উড়ান আসন্ন সময়ে হতে পারে।
অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর জেনারেল ডেভিড ডেপটুলা বলেন, “এই উড়ান যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও সক্ষমতার গুরুত্ব প্রদর্শন করছে। এতে আছে বিপুল স্থায়িত্ব, ভারী বোমা বহনের ক্ষমতা, দীর্ঘ পাল্লা ও নিখুঁত আঘাতের দক্ষতা।”
মাদকবিরোধী অভিযান ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা
যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার কথিত মাদক চোরাচালানকারীদের দমন। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত সাতটি নৌকা ও একটি সাবমার্সিবল ধ্বংস করেছে বলে প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসথ বুধবার জানান, এই সপ্তাহে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে আরও দুটি জাহাজে আঘাত হানা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে স্থলভাগেও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হতে পারে। তিনি বলেন, “জলপথে চলাচল কমে গেছে, তাই এখন তারা স্থলপথে আসবে, এবং সেখানেও তারা আঘাত পাবে।”
সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তারা বলছেন, বোমারু বিমানগুলো মাদক উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্রেও হামলায় ব্যবহৃত হতে পারে।
আইনি প্রশ্ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক অভিযানের বৈধতা নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে দ্বিদলীয় বিতর্ক চলছে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার কোনো পদক্ষেপ নাকচ করেছে।
যখন ট্রাম্প স্থলভাগে হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমতি প্রয়োজন কি না—এমন প্রশ্ন করা হয়, তখন সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন বলেন, “আমি নিশ্চিত নই, এর উত্তর আমার জানা আছে।”
এদিকে প্রেসিডেন্ট মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন এবং সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সৈন্য মোতায়েন করেছেন। ট্রাম্পও পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো মাদকচোরদের সহায়তা করছেন, আর পেত্রো অভিযোগ করেছেন যে ট্রাম্প জলদস্যু ধ্বংসের নামে নৃশংসতা চালাচ্ছেন।
ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান উড়ান শুধু সামরিক প্রদর্শন নয়—এটি লাতিন আমেরিকায় মার্কিন প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক ইঙ্গিতও। মাদকবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে এই অভিযানের রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















