০২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ফিলিপাইনে দুর্নীতিবিরোধী লড়াই—শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই পরিবর্তনের পথ খুলনার বাজারে ফিরেছে ইলিশ, দাম আরো বেশি উত্তরা-মতিঝিল রুটে পুনরায় চালু হলো মেট্রোরেল সাভারে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শতাধিক আহত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ভারতের ক্ষতির বিনিময়ে নয় — রুবিও ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক নিহত  স্টিফেন কিংয়ের ভয়ের রাজ্যে নতুন অধ্যায়—বাস্তব বিভীষিকা মিশেছে কিংবদন্তির ছোঁয়ায় চীনের অর্থনৈতিক প্রতিনিধিরা দুই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য আলোচনা শুরু করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে অনুকরণ করা যন্ত্র, না কি মানুষই নিজের ছায়ায় হারাচ্ছে নিজেকে? অনুশীলনের পরেও থামেন না তিনি—‘২০২ বল’ দর্শনে ডেট্রয়েট লায়ন্স তারকার উত্থান

আব্রাহাম লিংকন ও ফ্রেডেরিক ডগলাস ,দাসপ্রথা থেকে মানবমুক্তির যাত্রায় দুই নেতা —সময়ের সঙ্গী, ন্যায়ের সহযোগী

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর ও মুক্তির পথিকৃৎ

আমেরিকার ইতিহাসে ফ্রেডেরিক ডগলাস এমন এক কণ্ঠস্বর, যিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে মানবমুক্তির পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী কণ্ঠ তুলেছিলেন। ১৮৪৫ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ছিল দাসপ্রথার নির্মমতার এক জ্বলন্ত দলিল। মুক্তির পরও তিনি থামেননি; সমান নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আজীবন সক্রিয় থেকেছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত Measuring the Man: The Writings of Frederick Douglass on Abraham Lincoln বইটিতে সম্পাদক লুকাস ই. মোরেল ও জোনাথন ডব্লিউ. হোয়াইট তুলে ধরেছেন ডগলাসের চোখে লিংকনের মানবিকতা, সততা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। এতে প্রকাশ পেয়েছে, ন্যায়বিচারের সংগ্রাম কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির যৌথ প্রয়াস।


লিংকনের প্রতি ডগলাসের প্রাথমিক হতাশা

১৮৬১ সালে লিংকন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডগলাস প্রথমে তাঁর প্রতি হতাশ হন। তখন লিংকন ইউনিয়ন টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেননি। যুদ্ধের প্রথম দেড় বছর তিনি বারবার লিখেছেন ও বক্তৃতা দিয়েছেন, ‘দাসপ্রথা বিলোপ করলেই প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে।’

কিন্তু ১৮৬২ সালে নিউইয়র্ক ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক হোরেস গ্রীলির কাছে পাঠানো চিঠিতে লিংকন লেখেন, “আমার মূল লক্ষ্য ইউনিয়ন রক্ষা করা, এমনকি কোনো দাসকে মুক্ত না করেও যদি সেটা সম্ভব হয়।” এই মন্তব্যে ডগলাস নিজেকে প্রতারিত মনে করেছিলেন।

Waiting for the Hour - Wikipedia

রাজনৈতিক কৌশলের নতুন উপলব্ধি

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডগলাস বুঝতে পারেন, লিংকনের অবস্থান আসলে রাজনৈতিক কৌশল। সেই সময় সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সমর্থন ছিল ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাসপ্রথার প্রশ্নে অতিরিক্ত দ্রুত পদক্ষেপ নিলে তারা কনফেডারেটদের পক্ষে চলে যেতে পারত।

১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে যখন লিংকন এম্যানসিপেশন প্রোক্লেমেশন (মুক্তির ঘোষণা) জারি করেন, তখন ডগলাসের চোখে লিংকন হয়ে ওঠেন দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। সেই ঘোষণায় বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর দাসদের “চিরতরে মুক্ত” ঘোষণা করা হয় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়।


প্রথম সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রপতির মানবিকতা

১৮৬৩ সালের আগস্টে ডগলাস প্রথমবার হোয়াইট হাউসে যান। ইতিহাসে তিনি ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একান্তে নীতিগত আলোচনা করেন। লিংকন তাঁকে সম্মান ও আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন।

ডগলাস তখন অভিযোগ করেন—কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের বেতন কম এবং পদোন্নতির সুযোগও সীমিত। লিংকন প্রতিশ্রুতি দেন পরিস্থিতির উন্নতির, তবে প্রতিশোধমূলক কোনো নীতি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “আমার বিবেক অনুমতি দেয় না নিরপরাধ বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড দিতে।”

এই সংলাপেই গড়ে ওঠে এক পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক: বাস্তববাদ ও নীতিবোধের এক বিরল ভারসাম্য।

William Tolman Carlton | Watch Meeting – Dec. 31st 1862 – Waiting for the  Hour (1863) | Artsy

দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ও পারস্পরিক আস্থা

১৮৬৪ সালে নির্বাচনের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে লিংকন গোপনে ডগলাসকে প্রস্তাব দেন দক্ষিণে কিছু দূত পাঠানোর—যাতে দাসরা জানুক তারা এখন মুক্ত। যদিও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি, তবে এই অনুরোধই দেখায় লিংকনের ডগলাসের প্রতি আস্থা কত গভীর ছিল।


শেষ সাক্ষাৎ ও অমর সংলাপ

১৮৬৫ সালের মার্চে দ্বিতীয় মেয়াদের শপথের পর হোয়াইট হাউসে আয়োজিত অভ্যর্থনায় পুলিশ প্রথমে ডগলাসকে প্রবেশে বাধা দেয়। খবর পেয়ে লিংকন আদেশ দেন তাঁকে ভেতরে আনতে। উপস্থিত সবার সামনে তিনি বলেন, “এই যে আমার বন্ধু ডগলাস! আপনার মতামতের চেয়ে বেশি আমি আর কাউকে মূল্য দিই না।”

ডগলাস জবাব দেন, “মিস্টার লিংকন, এটি ছিল এক পবিত্র প্রয়াস।”


মুক্তির পরবর্তী সময় ও লিংকনের উত্তরাধিকার

লিংকনের হত্যার পর ডগলাস ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সংগ্রাম থামেনি। ১৪তম ও ১৫তম সংশোধনী, যা সংবিধানে নাগরিক অধিকার ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, তার পেছনে তাঁর প্রভাব ছিল স্পষ্ট।

তবে ১৮৭৭ সালে পুনর্গঠন যুগের পতন ও ‘জিম ক্রো’ আইনের উত্থানে তিনি গভীর বেদনা প্রকাশ করেন। তখন তিনি লিংকনের প্রাথমিক সতর্কতাকে উপলব্ধি করেন: দাসপ্রথা বিরোধী হলেও, জনমতের ভারসাম্য রক্ষা ছিল তাঁর এক কঠিন রাষ্ট্রনীতি।


ন্যায়ের সংগ্রামে মানবিক ঐক্যের প্রতীক

ডগলাস একসময় বলেছিলেন, লিংকন হয়তো শ্বেতাঙ্গ জাতির কল্যাণেই বেশি নিবেদিত ছিলেন, তবু, “তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গদের প্রকৃত প্রেসিডেন্ট”—প্রথম যিনি তাদের মানবিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

Measuring the Man বইটি এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়াকে উন্মোচন করেছে গভীরভাবে। ডগলাস যিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি, নিজের লেখনীর শক্তিতেই লিংকনের মানবতাবোধের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

তাঁর মতে, মানুষকে বিচার করতে হবে মানবতার সদস্য হিসেবে, জাতি বা শ্রেণি নয়। লিংকনের সেই উক্তি ‘কাউকে ঘৃণা নয়, সবার প্রতি দয়া’ এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে ওঠে।

দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মানুষ—একজন মুক্ত দাস, অন্যজন রাষ্ট্রনায়ক—একত্রিত হয়েছিলেন মানবমুক্তির এক আদর্শে। তাদের বন্ধন রাজনীতি ছাড়িয়ে মানবতার পাঠ দিয়েছে আমাদের। আজও তাদের উদাহরণ শেখায়, ন্যায় ও সহমর্মিতার মূল্যই ইতিহাসে টিকে থাকে।
জনপ্রিয় সংবাদ

ফিলিপাইনে দুর্নীতিবিরোধী লড়াই—শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই পরিবর্তনের পথ

আব্রাহাম লিংকন ও ফ্রেডেরিক ডগলাস ,দাসপ্রথা থেকে মানবমুক্তির যাত্রায় দুই নেতা —সময়ের সঙ্গী, ন্যায়ের সহযোগী

১০:০০:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর ও মুক্তির পথিকৃৎ

আমেরিকার ইতিহাসে ফ্রেডেরিক ডগলাস এমন এক কণ্ঠস্বর, যিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে মানবমুক্তির পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী কণ্ঠ তুলেছিলেন। ১৮৪৫ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ছিল দাসপ্রথার নির্মমতার এক জ্বলন্ত দলিল। মুক্তির পরও তিনি থামেননি; সমান নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আজীবন সক্রিয় থেকেছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত Measuring the Man: The Writings of Frederick Douglass on Abraham Lincoln বইটিতে সম্পাদক লুকাস ই. মোরেল ও জোনাথন ডব্লিউ. হোয়াইট তুলে ধরেছেন ডগলাসের চোখে লিংকনের মানবিকতা, সততা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। এতে প্রকাশ পেয়েছে, ন্যায়বিচারের সংগ্রাম কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির যৌথ প্রয়াস।


লিংকনের প্রতি ডগলাসের প্রাথমিক হতাশা

১৮৬১ সালে লিংকন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডগলাস প্রথমে তাঁর প্রতি হতাশ হন। তখন লিংকন ইউনিয়ন টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেননি। যুদ্ধের প্রথম দেড় বছর তিনি বারবার লিখেছেন ও বক্তৃতা দিয়েছেন, ‘দাসপ্রথা বিলোপ করলেই প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে।’

কিন্তু ১৮৬২ সালে নিউইয়র্ক ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক হোরেস গ্রীলির কাছে পাঠানো চিঠিতে লিংকন লেখেন, “আমার মূল লক্ষ্য ইউনিয়ন রক্ষা করা, এমনকি কোনো দাসকে মুক্ত না করেও যদি সেটা সম্ভব হয়।” এই মন্তব্যে ডগলাস নিজেকে প্রতারিত মনে করেছিলেন।

Waiting for the Hour - Wikipedia

রাজনৈতিক কৌশলের নতুন উপলব্ধি

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডগলাস বুঝতে পারেন, লিংকনের অবস্থান আসলে রাজনৈতিক কৌশল। সেই সময় সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সমর্থন ছিল ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাসপ্রথার প্রশ্নে অতিরিক্ত দ্রুত পদক্ষেপ নিলে তারা কনফেডারেটদের পক্ষে চলে যেতে পারত।

১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে যখন লিংকন এম্যানসিপেশন প্রোক্লেমেশন (মুক্তির ঘোষণা) জারি করেন, তখন ডগলাসের চোখে লিংকন হয়ে ওঠেন দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। সেই ঘোষণায় বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর দাসদের “চিরতরে মুক্ত” ঘোষণা করা হয় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়।


প্রথম সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রপতির মানবিকতা

১৮৬৩ সালের আগস্টে ডগলাস প্রথমবার হোয়াইট হাউসে যান। ইতিহাসে তিনি ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একান্তে নীতিগত আলোচনা করেন। লিংকন তাঁকে সম্মান ও আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন।

ডগলাস তখন অভিযোগ করেন—কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের বেতন কম এবং পদোন্নতির সুযোগও সীমিত। লিংকন প্রতিশ্রুতি দেন পরিস্থিতির উন্নতির, তবে প্রতিশোধমূলক কোনো নীতি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “আমার বিবেক অনুমতি দেয় না নিরপরাধ বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড দিতে।”

এই সংলাপেই গড়ে ওঠে এক পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক: বাস্তববাদ ও নীতিবোধের এক বিরল ভারসাম্য।

William Tolman Carlton | Watch Meeting – Dec. 31st 1862 – Waiting for the  Hour (1863) | Artsy

দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ও পারস্পরিক আস্থা

১৮৬৪ সালে নির্বাচনের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে লিংকন গোপনে ডগলাসকে প্রস্তাব দেন দক্ষিণে কিছু দূত পাঠানোর—যাতে দাসরা জানুক তারা এখন মুক্ত। যদিও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি, তবে এই অনুরোধই দেখায় লিংকনের ডগলাসের প্রতি আস্থা কত গভীর ছিল।


শেষ সাক্ষাৎ ও অমর সংলাপ

১৮৬৫ সালের মার্চে দ্বিতীয় মেয়াদের শপথের পর হোয়াইট হাউসে আয়োজিত অভ্যর্থনায় পুলিশ প্রথমে ডগলাসকে প্রবেশে বাধা দেয়। খবর পেয়ে লিংকন আদেশ দেন তাঁকে ভেতরে আনতে। উপস্থিত সবার সামনে তিনি বলেন, “এই যে আমার বন্ধু ডগলাস! আপনার মতামতের চেয়ে বেশি আমি আর কাউকে মূল্য দিই না।”

ডগলাস জবাব দেন, “মিস্টার লিংকন, এটি ছিল এক পবিত্র প্রয়াস।”


মুক্তির পরবর্তী সময় ও লিংকনের উত্তরাধিকার

লিংকনের হত্যার পর ডগলাস ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সংগ্রাম থামেনি। ১৪তম ও ১৫তম সংশোধনী, যা সংবিধানে নাগরিক অধিকার ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, তার পেছনে তাঁর প্রভাব ছিল স্পষ্ট।

তবে ১৮৭৭ সালে পুনর্গঠন যুগের পতন ও ‘জিম ক্রো’ আইনের উত্থানে তিনি গভীর বেদনা প্রকাশ করেন। তখন তিনি লিংকনের প্রাথমিক সতর্কতাকে উপলব্ধি করেন: দাসপ্রথা বিরোধী হলেও, জনমতের ভারসাম্য রক্ষা ছিল তাঁর এক কঠিন রাষ্ট্রনীতি।


ন্যায়ের সংগ্রামে মানবিক ঐক্যের প্রতীক

ডগলাস একসময় বলেছিলেন, লিংকন হয়তো শ্বেতাঙ্গ জাতির কল্যাণেই বেশি নিবেদিত ছিলেন, তবু, “তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গদের প্রকৃত প্রেসিডেন্ট”—প্রথম যিনি তাদের মানবিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

Measuring the Man বইটি এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়াকে উন্মোচন করেছে গভীরভাবে। ডগলাস যিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি, নিজের লেখনীর শক্তিতেই লিংকনের মানবতাবোধের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

তাঁর মতে, মানুষকে বিচার করতে হবে মানবতার সদস্য হিসেবে, জাতি বা শ্রেণি নয়। লিংকনের সেই উক্তি ‘কাউকে ঘৃণা নয়, সবার প্রতি দয়া’ এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে ওঠে।

দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মানুষ—একজন মুক্ত দাস, অন্যজন রাষ্ট্রনায়ক—একত্রিত হয়েছিলেন মানবমুক্তির এক আদর্শে। তাদের বন্ধন রাজনীতি ছাড়িয়ে মানবতার পাঠ দিয়েছে আমাদের। আজও তাদের উদাহরণ শেখায়, ন্যায় ও সহমর্মিতার মূল্যই ইতিহাসে টিকে থাকে।